পুজোপাঠে ও সাধুসঙ্গে মানসিক শান্তিলাভ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মোন্নতি ও উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
বস্তুত রাজ্যবাসীর প্রাপ্তির ঝুলিতে শুধুই জমেছে বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া! সিবিআই এ-যাবৎ এত সংখ্যক ঘটনার তদন্তভার নিয়ে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে যে, তার ঠিকঠাক খতিয়ান রাখা কঠিন। মানুষের এই স্বল্পায়ু স্মৃতিই সিবিআইয়ের খ্যাতির ভরসা আপাতত। কিন্তু আর জি কর কাণ্ডেও কি মোদি সরকারের সিবিআই ‘ট্র্যাডিশন’ মেনেই কাজ করবে? সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠে গিয়েছে। সম্প্রতি মহিলা ডাক্তারকে ধর্ষণসহ খুনের ঘটনাটি ৮ আগস্ট, গভীর রাতের। অভিযোগ পরদিন সামনে আসামাত্রই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পুলিস কমিশনারের নেতৃত্বে শুরু হয় তদন্ত। অতিদ্রুত তৈরি হয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। তার ভিত্তিতে এবং পারিপার্শ্বিক প্রমাণ হাতে নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিস একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে। সরিয়ে দেওয়া হয় ওই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে। মৃতার শোকসন্তপ্ত বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে এই ঘটনায় যথোচিত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। দোষীদের দ্রুত ও সর্বোচ্চ শাস্তির পক্ষেই মত প্রকাশ দেন মমতা। এমনকী, সাফ জানিয়ে দেন কাঙ্ক্ষিত সময়ে পুলিসি কিনারা না-হলে তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতেই দিতে চান তিনি। রাজ্য সরকারের তরফে গৃহীত এই দৃঢ় সিদ্ধান্তের মধ্যেই, ১৩ আগস্ট, আর জি কর কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সিবিআই অবাধে প্রমাণ সংগ্রহের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জেরাও করছে। সিবিআইকে সবরকমে সহযোগিতাও করছে কলকাতা পুলিস ও রাজ্য প্রশাসন। কারণ দোষীদের নিরপেক্ষভাবে চিহ্নিতকরণসহ চরমতম শাস্তিদানের ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবচেয়ে আন্তরিক।
তা সত্ত্বেও, তদন্ত কলকাতা পুলিসের ‘প্রাথমিক সাফল্যেই’ আটকে রয়েছে। গ্রেপ্তার বলতে সেই একজনই—সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। এই লেখা পর্যন্ত, তারপর আর কাউকেই ধরতে পারেনি সিবিআই। শুধু জেরার পর জেরা চলছে আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। অথচ ‘তিলোত্তমা’র মর্মান্তিক পরিণতির পর বারোদিন এবং তদন্তভার সিবিআই গ্রহণের পর একসপ্তাহ অতিবাহিত। রাজ্যের শাসক দলের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে কোথায় ‘ব্রেক থ্রু’? এই ঘটনার চটজলদি ও নিরপেক্ষ কিনারা এবং সমাধানের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। বিশেষ করে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্র স্বাভাবিক করে তুলতে এটা জরুরি। না-হলে গরিব মানুষের দুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রের প্রতিটি সদস্য এবং রাজ্যবাসীও প্রকৃত দোষী বা দোষীদের কঠোরতম শাস্তি দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন। তাঁরা জানতে চান, ওই তরুণী ডাক্তারের সঙ্গে এমনটা হল কেন? এটা কি নিছকই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা, নাকি এর পিছনে গভীর কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে? অপরাধী কি একজনই, নাকি আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত? এক্ষেত্রে সন্দীপ ঘোষের ভূমিকাই-বা কী ছিল? চাঞ্চল্যকর হাতরাস কাণ্ডের দক্ষ অফিসার সীমা আহুজাকে এই ঘটনায় যুক্ত করা হয়েছে। আমরা আশা রাখব, সিবিআই দ্রুত কিনারা করবে। অন্যথায় প্রতিবাদী নাগরিক সমাজের পরবর্তী নিশানার নাম হয়ে উঠতে পারে সিবিআই। তাতে অব্যাহত হইচইয়ের সঙ্গে দূরে সরে যেতে পারে সুবিচারের আরও একটি আশা!