পুজোপাঠে ও সাধুসঙ্গে মানসিক শান্তিলাভ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মোন্নতি ও উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
অতীতে তার প্রমাণ আমরা বার বার পেয়েছি। করোনা পর্বেই মিলেছে তার টাটকা দৃষ্টান্ত। ২০২০-২২ সালে শিল্প এবং পরিষেবা ক্ষেত্রের বেশিরভাগই যখন মুখ থুবড়ে পড়েছিল, তখন বস্তুত একা কুম্ভের চেহারায় কৃষিই ভারতের অর্থনীতির পতন রুখে দিতে সচেষ্ট ছিল। সারা পৃথিবীতে যখন ত্রাহি মধুসূদন রব উঠে গিয়েছে, তখনও ভারতকে যে হার মানতে হয়নি, তার জন্য মূল কৃতিত্ব কৃষির। মাঝারি মানের বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের ছবি উপহার পাওয়া গিয়েছিল কৃষির সৌজন্যে। তখন থেকেই কৃষককে ‘অন্নদাতা’র আসনে বসাবার একটি তাগিদ নতুন করে প্রচলিত হয়েছে। করোনার বিপর্যয় ইতিমধ্যেই কাটিয়ে উঠেছে ভারতসহ সারা বিশ্ব। কিন্তু ভারতের কৃষির দুর্ভাগ্য এই যে, ‘কাজ ফুরোলেই পাজি’র সম্মান জুটেছে তার। সরকার অবশ্য এই অভিযোগ মানবে না। ইউপিএ জমানায় বাজেটে কৃষির জন্য বরাদ্দের পাশে ওই খাতে এনডিএ আমলের আর্থিক ‘অবদান’ রেখে তা নস্যাৎই করতে চাইবে তারা। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির প্রেক্ষিতে এবং জিডিপির অংশ হিসেবে এই দাবি কতটা বাস্তব? সরকার এই ধোঁয়াশা কাটাতে কতটা আগ্রহী? এই সংশয় রয়েই যায়।
তবে সে গেল তাত্ত্বিক প্রতর্কের প্রশ্ন। গফুর মিয়াঁ, রামা কৈবর্তদের তাতে আগ্রহ থাকার কথা নয়। কৃষক এবং কৃষি শ্রমিক পরিবারগুলির দাবি—ডিজেল ও বিদ্যুৎ এবং সার, বীজ ও কৃষি উপকরণগুলির দাম কমানো হোক। বন্ধ নয়, বাড়ুক কৃষিতে ভর্তুকি। অনিশ্চয়তায় ঝুঁকি কমাতে দুর্যোগের পূর্বাভাস প্রদানের ক্ষেত্রটি হয়ে উঠুক ব্যাপক এবং সার্বিক। বিনামূল্যে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য পর্যাপ্ত অঙ্কের ফসল বিমার দায়িত্ব নিক সরকার। মোদি সরকার ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) গ্যারান্টি দিক। অবিলম্বে বাড়ানো হোক ন্যূনতম মজুরিও। কারণ কৃষি শ্রমিকসহ সব ক্ষেত্রে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি ছ’বছর যাবৎ থমকে রয়েছে। এজন্য ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির সামনে আপামর শ্রমিক শ্রেণির অসহায়তা ক্রমবর্ধমান! এসব দিকে আন্তরিকভাবে নজর দিলে তাদের সরাসরি উপকার হতে পারে। কৃষিতে উৎপাদনশীলতার সঙ্গে বৈচিত্র্য বৃদ্ধিও সুরাহার একটি উপায়। আর একটি উপায় হল কৃষিভিত্তিক শিল্পের প্রসার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হাত ধরেই এগতে হবে ভারতের আগামীর কৃষিকে। বর্তমান কৃষিকে ভবিষ্যতের করে তোলা না-গেলে শিক্ষিত প্রশিক্ষিত প্রজন্ম কৃষির থেকে বিমুখ হয়ে উঠবে দ্রুত। মনে রাখতে হবে, কৃষকরা আছেন বলেই আমরা আছি। যে যত বড় শিক্ষিত, ক্ষমতাবান আর করিৎকর্মা হই না কেন, কৃষক না-থাকলে বাকি সকলেরই অস্তিত্ব মুহূর্তে স্রেফ ‘নেই’ হয়ে যাবে। অতএব, সস্তা হাততালির মোহ কাটিয়ে উঠে প্রধানমন্ত্রীর উচিত প্রকৃত সমাধানে মনোনিবেশ করা। তাহলেই কৃষক শ্রেণির সঙ্গে সমস্ত দেশবাসীও নরেন্দ্র মোদিকে মনে রাখবেন। তাঁর প্রকৃত উচ্চতা এমন হবে যে, কাছে দূরে উপর নীচে পাশে—যেকোনও দিক থেকেই তাঁকে সর্দার প্যাটেলের পূর্ণাবয়ব মূর্তির চেয়ে অনেক বেশি উঁচু দেখাবে!