পুজোপাঠে ও সাধুসঙ্গে মানসিক শান্তিলাভ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মোন্নতি ও উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
কিন্তু আমরা জানি, মুজিবুর রহমানের লড়াইটা শুধু পাকিস্তানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিল না, তার চেয়েও মারাত্মক যুদ্ধ করতে হয়েছিল তাঁকে বিভীষণদের বিরুদ্ধে, মানে বাংলার জল হাওয়ায় নধর হয়ে ওঠা পাক-দরদিদের বিরুদ্ধে। শেষোক্ত লোকগুলি বাংলাদেশকে কোনোদিনই ‘স্বাধীন’ বলে মনে করেনি। তাদের ব্যাখ্যায়, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি, আসলে পাকিস্তান দু’টুকরো হয়েছে!’ তাই এই শক্তি একাত্তর থেকেই খোয়াব দেখে বাংলাদেশকে পাকিস্তানেই ফেরাবার, নিদেন পক্ষে ঢাকায় পাকিস্তানের একটা ‘ভাই’ সরকার বসাবার। এজন্যই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল তারা। খেয়াল করুন, দিনটি ছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস। এর মধ্যে, নিঃসন্দেহে, মুজিবের ভারত-প্রীতির ‘জবাবটাও’ সমান প্রকট ছিল। বরাত জোরে সে-যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এক প্রাণঘাতী গ্রেনেড হামলা হয় তাঁর উপর। সেবারও সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান হাসিনা। দু’দশক পরে চলতি আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত এবং দেশান্তরি করা হল তাঁকে। ক্ষমতা আপাতত কুক্ষিগত হল সেদেশের সেনা বাহিনীর। এই ঘোলাজলে দাঁড়িয়ে ভারত-বিরোধী শক্তিই সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার দখলে মরিয়া। বৈষম্য এবং দুর্নীতি দূর করার ডাক দিয়েছিলেন একদল দামাল ছাত্র। সেটা ক্রমে জঙ্গি রূপ নিতে থাকে। বেনজির সংঘর্ষ বেধে যায় দু’পক্ষের মধ্যে। ছাত্র, সাধারণ মানুষ এবং পুলিস মিলিয়ে তিন শতাধিক প্রাণ বলি গিয়েছে এই দফায়।
অতঃপর সোমবার হাসিনার পতনের সঙ্গেই দেশজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে চরম অরাজকতা। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক হিংসার যে পরম্পরা সেখানে গড়ে উঠেছে তাতে ‘আগস্ট’ চিহ্নিত হয়েছে ‘বিষাদের মাস’ হিসেবে। সোমবারের হামলায় সবচেয়ে বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে গেল বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতার ঐতিহ্য ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি। এতে ভারতের উদ্বেগ বাড়ল বইকি। প্রথম চিন্তা, ফের বাংলাদেশে নির্যাতিত হিন্দু শরণার্থীর স্রোত এদেশেই আছড়ে পড়বে না তো? এছাড়া বাড়তে পারে সীমান্ত জেলাগুলিতে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের তৎপরতাও। ভারত সরকার অবশ্যই সজাগ, কূটনৈতিক আলোচনার রাস্তাও খোলা রেখেছে। বাংলাদেশ জুড়ে যে নৈরাজ্য কায়েম হয়েছে অবিলম্বে তা বন্ধ হওয়া কাম্য। এটা যেন নিতান্তই সাময়িক হয়। এজন্য সে-দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল মানুষের সক্রিয় ও সাহসী ভূমিকা দেখতে চাই আমরা। ছাত্র আন্দোলনের ‘ফল’ যেন ‘শয়তানের ভোগ্য’ হয়ে না ওঠে, সেটা শান্তিকামী ও গণতন্ত্রপ্রিয় বাংলাদেশকেই নিশ্চিত করতে হবে।