পুজোপাঠে ও সাধুসঙ্গে মানসিক শান্তিলাভ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মোন্নতি ও উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
এই দুর্যোগ কেবল মহানগরে নয়, শহরতলির হাসপাতালগুলিতেও সমান, এমনকী ডাক্তার কমিউনিটির প্রতিবাদের ঝড় আছড়ে পড়েছে বাংলার সীমান ছাড়িয়ে দেশেরও নানা প্রান্তে। এই পরিস্থিতিতে সামনে আসছে সরকারি বেসরকারি আরও একাধিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অব্যবস্থা অনাচার। সব মিলিয়ে প্রচণ্ড চাপে পড়ে গিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু এর দায় কলকাতা পুলিস এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। আর জি কর এবং কলকাতা পুলিস কর্তৃপক্ষ ভুলটা করেছে গোড়াতেই। ওই মহিলা ডাক্তারের মৃত্যু নিয়ে শুরুতেই তারা লুকোছাপার আশ্রয় নেয়। মৃতার বাড়িতে ভুল খবর দেওয়া হয় বলে অভিযোগ সামনে এসেছে। শুক্রবার সকালে পুলিসের তরফে মৃতার বাবাকে ফোন করে বলা হয়, ‘আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তাড়াতাড়ি চলে আসুন।’ কিন্তু মৃতার বাবা সাংবাদিকদের বয়ান দিয়েছেন, ‘অথচ আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখি, অর্ধনগ্ন অবস্থায় আমার মেয়ের দেহ পড়ে রয়েছে! শরীরে মারধরেরও একাধিক ছাপ স্পষ্ট। কেউ আত্মহত্যা করলে শরীরে এমন দাগ থাকার কথা নয়।’ ময়নাতদন্ত রিপোর্টের সঙ্গেও মেলেনি পুলিসের প্রথম দিনের দাবি। এছাড়া এই ঘটনায় শনিবার ধৃত একমাত্র যুবকের পরিচয়ও কলকাতা পুলিস খোলসা করতে রাজি ছিল না। ধৃত সঞ্জয় রায় যে কলকাতা পুলিসের অধীনে একজন দাপুটে ‘সিভিক ভলান্টিয়ার’, পুলিস কমিশনার কিছুতেই তা ভাঙতে চাননি। তাঁর একটাই বক্তব্য ছিল, ‘ধৃত একজন ঘৃণ্য অপরাধী, এটাই তার বড় পরিচয়’।
স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, হাসপাতাল ও পুলিস কর্তৃপক্ষ কি প্রথমে ‘আত্মহত্যা’র তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টায় ছিল এবং শেষে বেসামাল হয়ে গিয়েও নিছক ‘মামুলি দুষ্কৃতীর দুষ্কর্ম’ বলে চালিয়ে দেওয়ার মতলবে ছিল? সৌভাগ্য যে পুলিস এবং স্বাস্থ্য—দুটি দপ্তরই মুখ্যমন্ত্রীর এক্তিয়ারে। তাই তদন্তে ‘অস্বচ্ছতা’ নজরে আসামাত্রই তিনি বিষয়টিতে ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করেন এবং এই ঘটনায় চূড়ান্ত পদক্ষেপেরই নির্দেশ দেন। তাঁর সাফ কথা, এই অপরাধের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত, তাদের কাউকেই রেয়াত করবে না মা-মাটি-মানুষের সরকার। সোমবার মানবিক মুখ্যমন্ত্রী নিহত ডাক্তারের বাড়ি পর্যন্ত ছুটে গিয়ে এই অপরাধের কিনারা অতিদ্রুত করারই আশ্বাস দিয়েছেন। কলকাতা পুলিসকেও সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তিনি, রবিবারের মধ্যেই তদন্তের জাল গোটাতে হবে, প্রয়োজনে দুর্বৃত্তদের পিছন নিতে হবে সবাই মিলে দিনরাত এক করেই। তাঁর পুলিস ব্যর্থ হলে সিবিআই তদন্তেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও আপত্তি নেই। নিহত ডাক্তারের বাড়িতে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘পুলিস যদি রবিবারের মধ্যে কিনারা করতে না-পারে কেসটা আর হাতে রাখব না, সিবিআইকে দিয়ে দেব।’ সাম্প্রতিককালে কোনও অপরাধের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীকে এতটা কঠোর মনোভাব নিতে দেখা যায়নি। তাই এই ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের চরমতম সাজার ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা অবশ্যই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। তদন্তকারী পুলিস এবং সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের উচিত, মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছার মর্যাদা রক্ষা করা। এবার হাসপাতগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সরকারকেও নতুনভাবে ভাবতে হবে। আগামী দিনে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ এবং পুলিস বিভাগে তাদের ব্যবহারেও বিশেষ সতর্ক হওয়া দরকার নবান্নের। অন্যদিকে, ডাক্তারদের উচিত চিকিৎসার পরিবেশ অবিলম্বে স্বাভাবিক করে তোলা। চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ রেখে সাধারণ মানুষকে তাঁরা শাস্তি দিতে পারেন না।