পুজোপাঠে ও সাধুসঙ্গে মানসিক শান্তিলাভ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মোন্নতি ও উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
এজন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা পৃথিবী জুড়ে মুক্ত স্বাধীন আবহ গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছেন। দেশের অভ্যন্তরে যেমন মুক্তচিন্তার পরিসর গড়ে উঠবে, তেমনি তা প্রসারিত হবে দেশের সীমান্ত ছাপিয়ে। নিকট প্রতিবেশী তো বটেই দূর দূর দেশেও ভেসে বেড়াবে সেই মুক্তচিন্তার আনন্দ। ‘চ্যারিটি বিগনস অ্যাট হোম’—অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। দেশের অভ্যন্তরেই হওয়া দরকার এই ভাবনার প্রথম অনুশীলন। দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রেখেই তা সম্ভব। তার জন্য জরুরি হল দেশের সব নাগরিকের বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতাসহ মৌলিক অধিকারের সবগুলি নিশ্চিত করা। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান প্রভৃতি মিলিয়ে যে বুনিয়াদি চাহিদাগুলি সব নাগরিকের জন্যই তা পূরণ করা জরুরি। সম্পদের সমবণ্টনের নীতি প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই লক্ষ্যের পিছনে ছুটে বেড়ানো আর কাঁঠালের আমসত্ত্ব তৈরির চেষ্টা অবশ্য একই। ভারতসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির যাবতীয় দুর্দশার মূলে ক্রমে বেড়ে চলা বৈষম্যগুলি। ভারতের মতো বহু ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, অঞ্চল ও সংস্কৃতির দেশে বৈষম্যের চিত্রটা অন্য অনেক দেশের থেকে আলাদা। অনেক দেশের মানুষ লড়াই করছে নারী-পুরুষে বৈষম্য কিংবা আঞ্চলিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। কিন্তু ভারতের ভিতরের লড়াইটা বহুবিধ বৈষম্য নির্মূল করার লক্ষ্যে। কিন্তু প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির কোনোটিই সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ পরিচালনায় ব্রতী নয় বলে, সাতাত্তর বছর ধরে বৈষম্যগুলি বস্তুত লালিত হয়ে চলেছে। আর তারই পরিণতি—রাজ্যে রাজ্যে নানারকম সংঘাত, দেশজুড়ে তীব্র বেকারত্ব, আর্থিক ও জিডিপি বৃদ্ধির নিম্নহার, সকলের জন্য সুশিক্ষার ব্যবস্থা দূর সাক্ষরতায়ও পিছিয়ে, উচ্চ হারে শিশুমৃত্যু, নাগরিকের গড় আয়ু প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যেও কম। এছাড়া দুর্নীতি, স্বচ্ছতা, ক্ষুধা, সুখ, মানবাধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা, বাকস্বাধীন প্রভৃতির প্রশ্নেও আমাদের ছবিটা ভীষণ ভীষণ মলিন! আসলে একটিকে বাদ দিয়ে আর একটি জিনিস নয়, প্রতিটি মানদণ্ড জড়িয়ে রয়েছে অন্য প্রতিটিরও সঙ্গে। একমাত্র সার্বিক মুক্তিই পথ, তার জন্য একটাই লক্ষ্য হওয়া দরকার—যাবতীয় বৈষম্যের অবসান।
সার্বিক মুক্তি ভারত একা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তার জন্য উপযুক্ত প্রতিবেশ রচনাও জরুরি। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, চীন, আফগানিস্তান প্রভৃতি নিকটতম প্রতিবেশী দেশেও সুস্থিতি চাই। বহু অসুখই সংক্রামক। সংক্রামক ব্যাধিগ্রস্ত প্রতিবেশীর পাশে কোনও মানুষ বা পরিবার বেশিদিন সুস্থভাবে বাঁচতে পারে না। যেমন পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, নেপাল, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ গোলযোগে ভারতকে বার বার ব্যতিব্যস্ত হতে হয়। এই মুহূর্তে চিন্তায় রেখেছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতোই চাগাড় দিয়ে উঠেছে ইরান বনাম ইজরায়েল সংঘাত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামেনি। জারি রয়েছে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন বিধ্বংসী লড়াই। তারই মধ্যে ইরান-ইজরায়েল পরিস্থিতি, যার মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছায়া দেখছেন। ভূমধ্যসাগরকে ভরকেন্দ্র করে এই সংঘাত অনিবার্য হলে দুই অক্ষে ভাগ হয়ে তাতে যোগ দিতে পারে দুনিয়ার একঝাঁক শক্তি। তখন ভারতের পক্ষে ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান গ্রহণ কোনোমতেই সম্ভব হবে না। এখানেই ভারতের স্বাধীন মতামত বা সিদ্ধান্ত ধাক্কা খেতে বাধ্য। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এভাবেই অহরহ চুরমার করে দেয় অনেক দেশের স্বাধীন সত্তা এবং স্বাধীনতার আনন্দ। এই পরিস্থিতিতে যে পক্ষেই যোগ দিক না কেন, মোটেই স্বস্তিতে থাকতে পারবে না ভারত। ভারতের বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অর্থনীতি নানাভাবে আন্দোলিত হবে। তাতে কোনও কোনও ধনকুবের ঘোলা জলে বড় মাছ ধরতে পারলেও মার খাবে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি। তাই দেশের মানুষের উচিত সকলকে আন্তরিকভাবে কাছে ডেকে নিয়ে বলা—‘আয়, আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।’