পুজোপাঠে ও সাধুসঙ্গে মানসিক শান্তিলাভ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মোন্নতি ও উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
তাহলে এই অসম্ভব সম্ভব হবে কী করে? শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটু বৈষম্যের দিকটিতে আঙুল তুলেই উসকে দেওয়া হয় তরলমতি ছাত্র সমাজকে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তৃতীয় প্রজন্মের জন্যও মোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল তারা। শুরু হল দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন। তার উপর পুলিসি নিপীড়ন, একের পর তাজা প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই খেপে ওঠেনি, মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল এপার বাংলারও। আন্দোলনকারীরা আন্তরিক সমর্থন পাচ্ছিলেন বিভিন্ন দেশ থেকেও। তার জেরে শীর্ষ আদালতকে মাঝখানে রেখে সরকার পুরনো সংরক্ষণ ব্যবস্থা বাতিলও করে। পরিস্থিতি তাতে সাময়িক শান্ত হলেও অশান্তির আগুন পুরো নেভেনি। তুষের আগুনের মতোই ধিকিধিকি জ্বলছিল। সেটাই লেলিহান শিখার রূপ পেল ‘এক দফা’ দাবি আদায়ের নয়া আন্দোলন থেকে। ওই এক দফার একটাই মানে—‘হাসিনা তুমি গদি ছাড়ো’! শুরু হল সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি। এই দফায় বেশ টের পাওয়া যাচ্ছিল—শাসক দলের লোকজন, থানা, সরকারি দপ্তর এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের উপর যারা আক্রমণ শানাচ্ছে তারা কেউই ছাত্র নয়, প্রশিক্ষিত পেশাদার দুর্বৃত্ত। এর পিছনে পরিষ্কার প্রত্যক্ষ বিদেশি মদতেরই গন্ধ পেয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল।
অতঃপর চলে এল, ৫ আগস্ট, সোমবার। প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশান্তরি হলেন। দেশের সেনা প্রধান সাময়িক দায়িত্ব গ্রহণের কথা জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার তৈরির কথাই ঘোষণা করলেন। ওয়াকার-উজ-জামান দেশবাসীর উদ্দেশে বললেন, ‘আপনারা আমার উপর আস্থা এবং দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখুন। দয়া করে সাহায্য করুন। মারামারি সংঘাত করে আর কিছু পাব না। আসুন, সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করি, সুন্দর দেশ গড়ি।’ অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার ব্যাপারে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাত প্রভৃতি বিরোধী দলের সঙ্গে সেনা প্রধান সোমবারই বৈঠক করেন। ইতিমধ্যেই কারামুক্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে চলেছেন কট্টর হাসিনা-বিরোধী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুস। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে আপাত সেনারই নিয়ন্ত্রণে দেশ। ভালো কথা। কিন্তু সেনার অস্তিত্ব কি টের পাওয়া যাচ্ছে? কোথায় তাদের সক্রিয়তা? কোথায় সেনা প্রধানের বড় বড় কথা? গোটা বাংলাদেশ জ্বলছে! প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে লাশ আর ধ্বংসস্তূপের সংখ্যা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং আতঙ্কিত হিন্দুরা। তাদের উপর শুরু হয়েছে প্রতিহিংসার সাম্প্রদায়িক রাজনীতি! কিন্তু কেন এই বিদ্বেষ তাদের উপর? একটাই জবাব হতে পারে, পাকপন্থীদের দৃঢ়মূল সন্দেহ, হিন্দুরা হাসিনার সমর্থক। কিন্তু নিছক সন্দেহের বশে কাউকে চরম সাজা দেওয়া যায় কি? বহু দলীয় গণতন্ত্রে কোনও স্বীকৃত পার্টির প্রতি নীরব সমর্থন কি অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে? তাহলে সেই সমাজকে ‘সভ্য’ বলে ধরা হবে কোন বিচারে? সেনা প্রধান এবং দায়িত্বশীল দলগুলি ও সমাজের মাথাদের এই নিন্দনীয় নীরবতা, নিষ্ক্রিয়তা দেশে একটি নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতিরই প্রমাণ দিচ্ছে। একমাত্র প্রকৃত গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিই বাংলাদেশকে এই নৈরাজ্য থেকে দ্রুত মুক্তি দিতে পারে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তারই প্রতীক্ষায়।