কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। উপার্জন ভাগ্য ভালো। কর্মে উন্নতির যোগ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা মিলবে। ব্যবসা ... বিশদ
নীরব এবং তাঁর মামা মেহুল চোকসির আগে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন লিকার ব্যারন বিজয় মালিয়া। মালিয়ার বিরুদ্ধে আছে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মামলা—১৭টি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে দীর্ঘদিনেও তা পরিশোধ না-করা। আয়কর বিভাগ এবং সিবিআই নড়েচড়ে বসতেই ২০১৬-র গোড়ায় মালিয়া দেশ ছেড়েছেন। আর ২০১৮-র গোড়ায় পালিয়ে গিয়েছেন চোকসি এবং নীরব। নীরব কত বড় খেলোয়াড়, সেটি এখন আর কোনও গোপন খবর নয়। সারা দুনিয়া জেনে গিয়েছে তিনি মামুলি কোনও রত্নের কারবারি নন, নিজেই এক ‘দুর্লভ রত্ন’। নীরব এবং তাঁর শিল্পপতি মামা মিলে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ককে (পিএনবি) ঝাঁজরা করে দিয়েছেন। তাজ্জব বনে যাওয়ার মতো জালিয়াতির ধাক্কায় ওই ব্যাঙ্ক থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। অসৎ উপায়ে পিএনবি থেকে দু’ধরনের ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি (লেটার অফ আন্ডারটেকিং বা সংক্ষেপে এলওইউ এবং ফরেন লেটার অফ ক্রেডিট) হাতিয়ে তাঁরা বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নিয়েছেন ভারতের আরও একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে। ঘটনাটি ২০১৭-র শেষদিকে পিএনবি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তাঁরা বিষয়টি জানান রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সিবিআই এবং ইডি’কে। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি নড়েচড়ে বসতেই এই কীর্তিমান মামা-ভাগনে জুটি সপরিবারে ভারত ছেড়ে পালান। তাঁরা যেভাবে পালাতে পারলেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে স্বাভাবিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং তা বিরাট। নীরব এবং মেহুল নিছক প্রশাসনিক গাফিলতির সুযোগ নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন—এমনটা মানতে রাজি নন রাহুল গান্ধী। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, মোদি সরকারই এই ‘অপরাধীদের’ পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়নি কি?
দেশবাসী আরও ভোলেনি, বিজেপি নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ বিতর্কিত ক্রিকেট সংগঠক ললিত মোদিও ফেরার হয়ে রয়েছেন দীর্ঘদিন। বিপুল অঙ্কের বেআইনি আর্থিক লেনদেন এবং ম্যাচ ফিক্সিং, বেটিং প্রভৃতির অভিযোগ তাঁর নামে। অভিযোগের শুরু ২০১০ থেকে। ললিত মোদি, মালিয়া, নীরব, চোকসি প্রভৃতি যেভাবে ভারত ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে বিদেশের মাটিতে সুখী জীবনযাপন করছেন—তা ভারতের পক্ষে অত্যন্ত লজ্জার। এনিয়ে প্রাক্তন ও বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসক—কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে দায় এড়ানোর প্রতিযোগিতাটি ভারতীয় রাজনীতির কদর্য চেহারাকেই প্রকট করে। সামান্য এই ক’জন ব্যক্তিই দেখিয়ে দিচ্ছেন আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা কতখানি দুর্বল। খাতাকলমে আইন যেমনই থাক না কেন—প্রশাসন কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নয়, বিত্তবান ক্ষমতাবানদের বেলা তারা অন্যভাষা বোঝে। দেশবাসীর মধ্যে এই যে ধারণাটি বদ্ধমূল হচ্ছে তা দূর করার দায় সরকারের। সরকার এই কাজে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হলে আমাদের গালভরা গণতন্ত্রের পক্ষে তা অবশ্যই এক অশনিসংকেত।