কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। উপার্জন ভাগ্য ভালো। কর্মে উন্নতির যোগ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা মিলবে। ব্যবসা ... বিশদ
ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র। এই দেশের কেন্দ্রে একটি সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ৯০ কোটি মানুষ ভোট দেবেন। অঞ্চল এবং ধর্ম বর্ণ ভেদে তাঁদের সমস্যার মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও সকলের ‘কমন’ চাহিদা হল সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা। একটি ভদ্রস্থ জীবিকাই নাগরিকদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিতে সক্ষম। স্বাধীনতার পর থেকে সারা দেশেই বেড়ে চলেছে সাক্ষরতার হার। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সামনে বিচিত্র শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ। সেইমতো চালু হচ্ছে নানা ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অবৈতনিক শিক্ষা এখন কষ্টকল্পনামাত্র। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। বুনিয়াদি থেকে উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—সবেতেই এক ছবি। শিক্ষা বেশি করে বেসরকারি-উদ্যোগ-নির্ভর হয়ে উঠেছে। বস্তুত শিক্ষাদান এখন একটি অন্যতম লাভজনক বাণিজ্যের নাম। শিক্ষাবিস্তারের এই নতুন সংস্কৃতিই বলে দিচ্ছে শিক্ষাগ্রহণ এখন কতটা ব্যয়বহুল। কিন্তু, দেশবাসীর খুব সামান্য একটি অংশই শিক্ষার জন্য এত অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম। তবু, তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আরও কিছু মানুষ নানাভাবে ঋণ করে অথবা সর্বস্ব খুইয়ে ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করতে সচেষ্ট। মানুষের এত শ্রম, পরিকল্পনা, ত্যাগ, স্বপ্ন প্রভৃতি সার্থক হওয়ার এক ও একমাত্র শর্ত হল—শিক্ষান্তে উপযুক্ত চাকরি বা জীবিকার ব্যবস্থা। সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হয় যে ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তির নানা শাখায় যাঁরা ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন চাকরির বাজারে তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। তাই দেশজুড়ে বাবা-মায়েরা সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করার অব্যবহিত পরেই পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেন কীভাবে তাঁদের ছেলে বা মেয়েকে একজন বড় ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। আর কিছু বাবা-মায়ের স্বপ্ন থাকে সন্তানকে ডাক্তার, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রভৃতির কোনও একটি করে তোলার। সেইমতো কোচিংও শুরু হয়। ব্যয়বহুল কোচিং চলে সপ্তম-অষ্টম শ্রেণী থেকেই। তারপর ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে ডিগ্রি নিতেও বিপুল খরচের ধাক্কা। কিন্তু, দুর্ভাগ্য এই—এত করেও সকলে ভালো চাকরি পাচ্ছেন না—না দেশে, না বিদেশে! বিশেষত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে চাকরির সুযোগ ক্রমশ কমছে। আবার চাকরি যাঁরা পাচ্ছেন তাঁদের একটি অংশকে ‘অফার’ করা হচ্ছে যৎসামান্য বেতন—যা স্বপ্নভঙ্গের নামান্তর। এই প্রবণতা নতুন নয়—বেশ কয়েক বছরের পুরনো।
কাজের বাজারের এই যখন হাল—তখন কিছুটা আশার ঝলক দেখাল মফস্সলের একটি সাধারণ কলেজ। গত ১৬ মার্চ নৈহাটি সান্ধ্য কলেজে আয়োজন করা হয়েছিল একটি জব ফেয়ারের। সেখান থেকে সরাসরি চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে ২৮ জনের। আরও ১৩ জন ভাগ্যবানের নামের তালিকা তৈরি হয়ে রয়েছে, যাঁরা পরে ইন্টারভিউয়ে ডাক পেতে পারেন। যাঁরা চাকরি পেলেন তাঁরা আর্টস, সায়েন্স কিংবা কমার্সের স্নাতক অথবা হবু স্নাতক। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, চাকরির অফার নিয়ে বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা, ব্যাঙ্ক, ফ্লিপকার্টসহ মোট আটটি কোম্পানি এসেছিল। জব ফেয়ারের আগে ওইসব সংস্থার কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি কর্মশালাও অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কলেজের প্লেসমেন্ট সেলের তরফে প্রার্থীদের ডেকে ডেকে সিভি জমা নিয়ে মোট একশো জনের নামের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। প্রার্থীদের মধ্যে তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়ারা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন গত পাঁচ বছরের মধ্যে স্নাতক-হওয়া যুবক-যুবতীরা। পাশের একটি কলেজের কিছু ছেলেমেয়েকেও সুযোগটি দেওয়া হয়েছিল। আগত সংস্থার কর্তারা এই পুরো উদ্যোগটি সম্পর্কে বিশেষ সন্তোষ প্রকাশ করে গিয়েছেন। এই সাফল্য ধরে রেখে ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী উদ্যোক্তারা। শিক্ষান্তে চাকরির ব্যবস্থা করতে না-পারার কারণে অনেক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পেশাদারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাভিশ্বাস ছুটছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে নৈহাটি সান্ধ্য কলেজ যে দৃষ্টান্ত রাখল তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক এবং অনুসরণযোগ্য। এই উদ্যোগ আরও একটি সত্য প্রতিষ্ঠা করল যে শুধু ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, শিক্ষার সব শাখা থেকেই কর্মজগতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব।