বেঙ্গালুরু, ১২ ফেব্রুয়ারি: একদিনের সিরিজে নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়ে প্রবল চাপে বিরাট কোহলিরা। এই ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে হলে আসন্ন টেস্ট সিরিজে ভালো পারফর্ম করতেই হবে ‘টিম ইন্ডিয়া’কে। কিন্তু দলের তারকা পেসার যশপ্রীত বুমরাহর অফ ফর্ম চিন্তায় ফেলে দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। একদিনের সিরিজে নামের প্রতি তিনি সুবিচার করতে পারেননি। তিন ম্যাচে কোনও উইকেট পাননি ভারতের এই স্পিডস্টারটি। যা সত্যিই নজিরবিহীন। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অতীতে এভাবে বুমরাহর ঝুলি শূন্য থাকেনি। ইকোনমি রেট ছিল ৫.৫৬। যা বুমরাহর নামের সঙ্গে বড়ই বেমানান। তাই টেস্ট সিরিজের আগে বুমরাহর ফর্মে ফেরাটা খুবই জরুরি। কারণ, তিনি দলের স্ট্রাইকিং বোলার। ম্যাচ উইনারও।
ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট তাই তাকিয়ে রয়েছে ইশান্ত শর্মার ফিটনেস টেস্টের দিকে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ইশান্ত শততম টেস্ট খেলার সুযোগ পাবেন কি না, সেটা হয়তো জানা যাবে শনিবার। ১৪ কিংবা ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ফিটনেস টেস্ট দেবেন ইশান্ত। যদি তিনি পাশ করেন, তাহলে নিউজিল্যান্ড উড়ে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়ে যাবেন। শর্তসাপেক্ষেই তাঁকে দলে রেখেছিলেন নির্বাচকরা। রিহ্যাবে যেভাবে তিনি সাড়া দিয়েছেন, তাতে মনে করা হচ্ছে ইশান্ত ফিটনেস টেস্টের বাধা সহজেই অতিক্রম করে যাবেন।
প্রথমে ঠিক ছিল, ৬ ফেব্রুয়ারি উমেশ যাদবের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড উড়ে যাবেন ইশান্ত । কিন্তু দিল্লির হয়ে বিদর্ভের বিরুদ্ধে রনজি ট্রফির ম্যাচ খেলতে গিয়ে গোড়ালিতে চোট পেয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকরা তাঁকে ছ’সপ্তাহ বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছিলেন। যদিও স্ক্যানের পর জানা যায়, চোট ততটা গুরুতর নয়। তাই চিকিৎসকদের বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই রিহ্যাব শুরু করে দেন ভারতের এই অভিজ্ঞ পেসারটি। বিসিসিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ইশান্ত এখন অনেকটাই ফিট। আরও কয়েকদিন পর তিনি ম্যাচ খেলার মতো জায়গায় চলে আসবেন বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ভারত দু’টি টেস্ট খেলবে কিউয়িদের বিরুদ্ধে। প্রথম ম্যাচটি হবে ওয়েলিংটনে ২১-২৫ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় টেস্টে দুই দল মুখোমুখি হবে ক্রাইস্টচার্চে। ম্যাচটি শুরু হবে ২৯ ফেব্রুয়ারি। চলবে ৪ মার্চ পর্যন্ত। তবে টেস্ট সিরিজের আগে নিজেদের ভুল-ত্রুটি শুধরে নেওয়ার সুযোগ পাবেন কোহলিরা। পাশাপাশি অজিঙ্কা রাহানে, চেতেশ্বর পূজারা, ঋদ্ধিমান সাহার মতো টেস্ট স্পেশালিস্ট ক্রিকেটাররা নিউজিল্যান্ডের পিচ ও পরিবেশে গা ঘামানোর সুযোগ পাবেন। নিউজিল্যান্ড একাদশের বিরুদ্ধে ভারত তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচটি খেলবে হ্যামিলটনে ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি।
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে ভারতের দুই সফল ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল ও শ্রেয়াস আয়ার টেস্ট স্কোয়াডে নেই। তাঁরা দু’জনে করেছিলেন ৪২১ রান। সেখানে বাকি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সম্মিলিত স্কোর ৪২৩। লোকেশ রাহুলের দুরন্ত ফর্ম দেখে অনেকেই বলছেন, তাঁকে টেস্ট দলে ফেরানো উচিত ছিল। আসলে রোহিত শর্মার চোট ভারতীয় ব্যাটিংকে দুর্বল করেছে। সেটা টের পাওয়া গিয়েছে ওয়ান ডে’র লড়াইয়ে। টেস্ট সিরিজেও রোহিতের অভাব মেটানোই হবে ভারতের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। মায়াঙ্ক আগরওয়াল ও পৃথ্বী সাউ একদিনের সিরিজে তিনটি ম্যাচে ওপেন করার সুযোগ পেলেও, তা সফলভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। পৃথ্বী আবার দীর্ঘদিন পর টেস্ট স্কোয়াডে ফিরেছেন। মনে করা হচ্ছে, মায়াঙ্কের সঙ্গে তিনিই হয়তো প্রথম টেস্টে ইনিংসের সূচনা করবেন। তবে নিউজিল্যান্ড এ দলের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন শুভমান গিল। তাই ওপেনিং জুটি চয়নে কিছুটা সমস্যায় পড়বে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। বিরাট কোহলির ব্যাটেও সেই ঝাঁঝ লক্ষ করা যাচ্ছে না। একদিনের সিরিজে একটি হাফ-সেঞ্চুরি সহ তিনি মোট ৭৫ রান করেছিলেন। সেই কারণে টেস্ট সিরিজে কোহলি কিছুটা হলেও চাপে থাকবেন। সেক্ষেত্রে চেতেশ্বর পূজারা, অজিঙ্কা রাহানের মতো সিনিয়রদের বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।
লম্বা সফরে বিভিন্ন ফরম্যাটের সিরিজ খেলতে খেলতে অনেক সময় জড়তা চলে আসে ক্রিকেটারদের মধ্যে। আর সেটা কাটাতেই নয়া পন্থা অবলম্বন করেছে ভারতীয় দল। ঋদ্ধিমান সাহা, শুভমান গিল, ঋষভ পন্থ, নবদীপ সাইনিরা প্লে-স্টেশনে সময় কাটাচ্ছেন। তাতে একঘিয়েমি ক্রিকেট থেকে কিছুটা স্বস্তি যেমন মিলবে, তেমনই চাপ কাটিয়ে উঠতেও সুবিধা হবে।
এমনিতেই, নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, টেস্ট সিরিজেও ভারতকে আমরা কড়া টক্কর দেব। বিরাট কোহলিরা সেই চ্যালেঞ্জ কীভাবে অতিক্রম করেন, সেটাই দেখার।