নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: স্বাস্থ্যকর্মী ও আশাকর্মীদের পাশাপাশি এবার পুরসভার সাফাইকর্মীরাও যাতে প্রথম দফায় করোনার ভ্যাকসিন পান, সেজন্য উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। করোনার ভ্যাকসিন ভারতে দেওয়া শুরু হলে সেই ভ্যাকসিন প্রথম পর্যায়ে কাদের দেওয়া হবে, তার একটি নির্দেশিকা জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে মূলত স্বাস্থ্যদপ্তরের সঙ্গে যুক্ত ডাক্তার, নার্স, প্যাথলজিক্যাল কর্মী সহ সকলের কথা বলা আছে। সেইমতো জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তারা তালিকা বানানো শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু তালিকায় পুরসভার সাফাইকর্মীদের নাম যুক্ত করা হয়নি। বিষয়টি সামনে আসতেই রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তৎপর হন। বৃহস্পতিবার তিনি জানান, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্যদপ্তরের সঙ্গে সমানতালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন বিভিন্ন পুরসভার সাফাইকর্মীরাও। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনা যোদ্ধা হিসেবে সাফাইকর্মীদেরও মান্যতা দিয়েছেন। তাঁদের কারও করোনা হলে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তাই ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদেরকে যোগ করা দরকার। এরপরই মন্ত্রীর নির্দেশে ওই দপ্তরের জয়েন্ট সেক্রেটারি জলি চৌধুরী বুধবার একটি চিঠি পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্যদপ্তরের সচিব সৌমিত্র মোহনের কাছে। তাতে বলা হয়েছে ভ্যাকসিন প্রাপকদের তালিকায় পুরসভার সাফাইকর্মীদেরও যুক্ত করা হোক।
সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যের প্রতিটি জেলার প্রশাসনকে যেমন স্বাস্থ্যকর্মী, আশাকর্মী সহ সামনের সারিতে থেকে লড়াই করা করোনা যোদ্ধাদের নামের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে, তেমনই পুরসভাগুলিকেও খুব দ্রুত সাফাইকর্মীদের নামের তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হবে বলে জানা গিয়েছে। উত্তরবঙ্গজুড়ে সেই নামের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি ডাঃ অমিত দাঁ বলেন, আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে মোট ৭৫০ জন রয়েছেন। এছড়াও মেডিক্যাল কলেজে রয়েছেন ১৫০ জন। সবমিলিয়ে ৯০০ জনের নামের তালিকা তৈরি করে সরকারের কাছে পাঠানো হবে। মালদহের উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (দুই) অমিতাভ মণ্ডল বলেন, আইসিডিএস কর্মী, সহায়িকাদের নামও যুক্ত হচ্ছে। জেলার ১৫টি ব্লকে ১৬টি গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সদের নামের তালিকা করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইতিমধ্যেই ইংলিশবাজার পুরসভা ৭৫০-৮০০ জন সাফাইকর্মীর নামের তালিকা তৈরি করতে শুরু করেছে। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রায় ১৫৫ জন চিকিৎসকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ, ইসলামপুর ও ডালখোলা পুরসভার যথাক্রমে ২০০, ২০০, ১৫০ ও ১০০ জনের মতো সাফা‌ইকর্মী রয়েছেন। তালিকায় জেলার নয়টি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, তিনটি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজের প্রত্যেক চিকিৎসকের এবং স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার জনের নাম রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা।
দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রায় সাড়ে আট হাজার স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। জেলায় মোট ১৮টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সাতটি গ্রামীণ হাসপাতাল, একটি ব্লক প্রাথমিক হাসপাতাল, ও ২৫৮টি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে বলেন, কত জন স্বাস্থ্যকর্মীর নাম ভ্যাকসিনের জন্য পাঠানো হল তা ৩১ তারিখ বলতে পারব। জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক বলেন, আমরা স্বাস্থ্যদপ্তরের পক্ষ থেকে তালিকা করছি। জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, পুরসভার সাফাইকর্মীদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আলিপুরদুয়ার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, এখনও পুরো তালিকা তৈরি হয়নি।
কোচবিহার জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জেলায় স্বাস্থ্যকর্মী ও আশাকর্মীদের নাম সংগ্রহের কাজ চলছে। দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রলয় আচার্যও একই কথা বলেন। শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের জঞ্জাল অপসারণ ও সাফাই বিভাগের সদস্য মুকুল সেনগুপ্ত বলেন, পুরসভার স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ২২০০ জন সাফাই কর্মী আছেন। তবে তালিকা তৈরির কোনও নির্দেশ পাইনি।