অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি, প্রিয়জনের বিপথগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা, সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
উত্তরবঙ্গে ঘাসফুলের অন্যতম মজবুত ঘাঁটি তোর্ষা নদী বেষ্টিত কোচবিহার জেলা। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর এই জেলা থেকে দু’জনকে মন্ত্রী করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, নাটাবাড়ি কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী হয়েছিলেন। এবার তিনি প্রাক্তন সহকর্মী তথা দলবদলু বিজেপি প্রার্থী মিহির গোস্বামীর কাছে হেরেছেন। অন্যদিকে, পরাজিত হয়েছেন আরএক মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনও। গতবার তিনি মাথাভাঙা বিধানসভা আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন। এবার কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তাঁকে প্রার্থী করা হয়। এই জেলার দিনহাটা কেন্দ্রের গণনায় শেষ রাউন্ড পর্যন্ত ছিল নাটকীয়তায় ভরা। কোনও রাউন্ডে তৃণমূল, আবার কোনও রাউন্ডে বিজেপি এগিয়ে যায়। শেষমেষ তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহকে মাত্র ৫৭ ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন বিজেপির এমপি নিশীথ প্রামাণিক। জেলার ন’টি আসনের মধ্যে তৃণমূল দু’টিতে এবং সাতটিতে জিতেছে বিজেপি। মেখলিগঞ্জ থেকে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী পরেশ অধিকারী।
তিস্তা নদী বেষ্টিত জলপাইগুড়ি জেলাতেও ইন্দ্রপতন ঘটেছে। এই জেলার ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা থেকে পর পর দু’বার জিতে মন্ত্রী হয়েছিলেন গৌতম দেব। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর, পর্যটন দপ্তরের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এবার প্রাক্তন সহকর্মী তথা বিজেপি প্রার্থী শিখা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হয়েছেন। ফল ঘোষণার পর ‘হতাশ’ হয়ে বাড়িতে বসেছিলেন। কারও ফোনও ধরেননি। তবে এই জেলায় সাতটি আসনের মধ্যে তৃণমূল তিনটিতে জিতেছে। যারমধ্যে রাজগঞ্জ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী খগেশ্বর রায় এবার নিয়ে চারবার জিতলেন। মাল বিধানসভায় জিতেছেন তৃণমূলের বুলু চিকবরাইক। প্রথবার ভোটে লড়তে নেমেই কিস্তিমাত করেছেন জলপাইগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী ডাঃ প্রদীপকুমার বর্মা।
তৃণমূলের আরও শক্ত একটি ঘাঁটি আলিপুরদুয়ার। গত নির্বাচনে এই জেলায় পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিই ছিল তৃণমূলের কব্জায়। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে ধস নামে। এবার সবকটিতেই পদ্ম ফুটেছে। এদিকে শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র দীর্ঘদিন লালদুর্গ হিসেবে পরিচিত। বামফ্রন্ট জমানায় এখানে ১৯৯১ সাল থেকে পর পর চারবার বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে মন্ত্রী হন অশোক ভট্টাচার্য। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে ছন্দপতন ঘটে। ফের ২০১৬ সালের ভোটে তিনি জয়ী হন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি পুরসভার চেয়ারম্যান, মেয়র, বিধায়ক ও মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। এবার তিনি বিজেপি প্রার্থী শঙ্কর ঘোষের কাছে প্রতিটি রাউন্ডে পিছিয়ে ছিলেন। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ কয়েক রাউন্ড গণনা হওয়ার পরই ময়দান ছেড়ে চলে যান অশোকবাবু। এখানে তাঁর স্থান তৃতীয়। তিনি প্রায় ৬০ হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছেন। মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি কেন্দ্রে পরাজিত হয়েছেন দু’বারের বিধায়ক, হেভিওয়েট কংগ্রেস নেতা শঙ্কর মালাকার। ফাঁসিদেওয়া কেন্দ্র থেকেও মুছে গিয়েছে কংগ্রেস। সংশ্লিষ্ট তিনটি কেন্দ্র বিজেপির কব্জায় গেলেও সবক’টিতে তৃণমূলের স্থান দ্বিতীয়। অশোকবাবু বলেন, এটা রাজনৈতিক লড়াই। শুধু আমার নয়, গোটা রাজ্যেই সংযুক্ত মোর্চার বিপর্যয় হয়েছে। এর কারণ বিশ্লেষণ করবে পার্টি। তবে লোকসভা ভোটের ট্রেন্ড রয়ে গিয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।
জেলার পাহাড়ের অংশে জিএনএলএফের সমর্থনে দার্জিলিং ও কার্শিয়াং কেন্দ্র দু’টি দখল করেছে বিজেপি। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দুই গোষ্ঠীর ভোট কাটাকুটিতে এমনটা হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। পাশের জেলা কালিম্পংয়ের কালিম্পং কেন্দ্র কব্জা করেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিনয় তামাং শিবির।