অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি, প্রিয়জনের বিপথগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা, সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
নিশ্চিন্ত প্রশান্ত কিশোর। তাঁর চ্যালেঞ্জ ছিল, বিজেপি তিন অঙ্কে পৌঁছবে না। সেটাই হয়েছে।
আত্মবিশ্বাসী ‘বর্তমান’। কারণ, মাটির সঙ্গে যোগ, মানুষের মন বোঝার ক্ষমতা আমাদের আজও আছে... একইরকমভাবে। ঠিক যেমনটা শিখিয়েছিলেন এই কাগজের প্রতিষ্ঠাতা-প্রাণপুরুষ বরুণ সেনগুপ্ত।
করোনা মহামারীর মধ্যে বিধানসভা নির্বাচন। এবং যা আগের সব ভোটের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কোভিড মোকাবিলার ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের গবেষকদের কাছে যেমন কোনও তথ্য বা নির্দিষ্ট ফর্মুলা ছিল না, বাংলার এই নির্বাচনও কতকটা তেমন। কারণ, হাওয়া আর বাস্তবের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে থেকেই এমন একটা রব তোলা হয়েছিল, যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পতন হয়েই গিয়েছে। বিজেপি নবান্নে বসার জন্য পাঁজি দেখছে। এটাই হাওয়া। যার সূত্রপাত উনিশের লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর। গেরুয়া শিবিরের বঙ্গ নেতাদের কাছে দু’বছর আগের ফলই ছিল একমাত্র অস্ত্র... বাংলা দখলের। রাজনীতির ময়দানে তাঁরা সাইড লাইন বরাবর দৌড়েই গিয়েছেন। ম্যাচ খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। তাহলে বুঝতেন, লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট এক নয়। অন্তত বাংলার তো নয়ই। তাই তৃণমূলের কয়েকজন মার্কামারা ‘দলবদলু’ ধান্দাবাজদের নিয়ে মমতা সরকারকে উপড়ে ফেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এক্ষেত্রে অবশ্য দশ পা এগিয়ে ভেবে ফেলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ। তাঁদের সৌজন্যে গত কয়েক মাস কী না দেখেছি আমরা! দিল্লির দণ্ডমুণ্ডের কর্তাদের ডেইলি প্যাসেঞ্জারি, হম্বিতম্বি, কুৎসিত রাজনৈতিক আক্রমণ এবং সেই হাওয়ায় ভেসে যাওয়া বহু সংবাদমাধ্যম। আর হ্যাঁ, তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া প্রোপাগান্ডা। বাংলার বুদ্ধিজীবীদের একাংশ তো ভাবতে বসেছিল, ‘আসল পরিবর্তন’ বোধহয় হয়েই গেল!
‘বর্তমান’ এই স্রোতে গা ভাসায়নি। আমরা বিশ্বাস রেখেছিলাম বাংলার মানুষের বিচারবুদ্ধির উপর। আজ এই জনাদেশ তারই সাক্ষ্য বহন করছে। বাংলা জিতেছে। তাই বুক ঠুকে বলতে পারি, জিতেছি আমরাও। এই পর্বে হেনস্তা সইতে হয়েছে আমাদেরও। নানা দিক থেকে ‘বর্তমান’-এর উপর আছড়ে পড়েছে নোংরা, কুৎসিত আক্রমণ। তারপরও আমরা মাথা বিকিয়ে দিইনি। রাজনীতির লড়াইয়ে পেরে না উঠে ‘দলবদলু’ গদ্দারদের দাঁত-নখ বেরিয়ে এসেছে। আহত হয়েছে আমাদের অন্তর। তা সত্ত্বেও অটল থেকেছে বিশ্বাস... মানুষের প্রতি, বাংলার প্রতি। শুভেন্দু অধিকারী নাকি ছিলেন জননেতা! দল বদলের পর তাঁর যে রূপ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে, তা রাজ্যবাসী দুঃস্বপ্নেও দেখেনি। যে মোদি সরকারের নামে তিনি উঠতে বসতে গাল পাড়তেন, তিনিই এখন নরেন্দ্র মোদির জয়জয়কার করছেন! ফেজ টুপি পরে একসময় ঘুরে বেড়াতেন, আর আজ মুসলিম সম্প্রদায়ের নামে বাপবাপান্ত করছেন। নন্দীগ্রামে জয় পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তা প্রশ্নাতীত হয়েছে কি? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু অভিযোগ করেছেন, বারবার প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে ‘টেবিলের নীচে’ কিছু হয়েছে। সেই বিচার কমিশন আর আদালত করবে। কিন্তু প্রচারপর্বে যেভাবে আপনি শালীনতার সীমা ছাড়িয়েছেন, তা সুস্থ মানুষ মেনে নেবেন না। শুধু তাই নয়, আপনি নীচ আক্রমণ চালিয়েছেন ‘বর্তমান’-এর নামে। কৃতজ্ঞতাবোধ শব্দটা বোধহয় তাঁর অভিধানে নেই। সত্যি কথাটা, সোজা কথাটা সোজাভাবে ‘বর্তমান’ বলার বুকের পাটা রাখে বলেই তাঁর এই আক্রোশ। তাই শুভেন্দুবাবু তাঁর ‘অনুগামী’দের মাধ্যমে বারবার প্রচার করেছেন, ‘বর্তমান পড়বেন না।’ চেতলায় রুদ্রনীল ঘোষের হয়ে প্রচারে নেমে ‘বর্তমান’-এর নাম করে বলেছিলেন, আমরা নাকি বিকিয়ে গিয়েছি! একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম পর্যন্ত ‘বর্তমান’-এর গায়ে হাত দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি। কারণ একটাই—‘বর্তমান’ কারও তাঁবেদারি করে না। আর শুভেন্দু অধিকারী কি না সেই ‘বর্তমান’-এর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের নষ্টামো করার সাহস দেখিয়েছেন! বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনার দূরদর্শিতার বড্ড অভাব। আপনি প্রকাশ্যে বলেছেন, বেগমের (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই নামে ডেকেই ধর্মীয় মেরুকরণ করতে চেয়েছিলেন শান্তিকুঞ্জের বুবাই) সঙ্গে নাকি ‘বর্তমান’-এর ১০০ কোটি টাকার ডিল হয়েছে! সহ্য করেছি মানে এটা ভেবে নেবেন না যে, আমরা দুর্বল। আর সহ্যেরও সীমা আছে... যা আপনি অতিক্রম করেছেন। শুভেন্দু অধিকারীকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, প্রমাণ করে দেখান। ‘বর্তমান’ কাউকে ডরায় না কেন জানেন? কারণ, আমাদের গায়ে কোনও কালো দাগ নেই। আমরা কারও থেকে এক পয়সার প্রিভিলেজ নিই না। আমরা অর্জন করি, ভিক্ষের ঝুলি পেতে বসি না। তাই আমাদের মেরুদণ্ড সোজা। ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। প্রথম পাঁচ দফা ভোটে এক রকম খবর পরিবেশন, আর ষষ্ঠ দফায় পাল্টি! এ আমাদের চরিত্র নয়। ‘না পড়লে পিছিয়ে পড়া’র কথা আমরা মুখে বলি না। করে দেখাই। লিখে দেখাই। তাই বুক চিতিয়ে বলতে পারি, আমরা বাংলার মানুষের পক্ষে। কোনও গদ্দার, ধান্দাবাজ, বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা অবিবেচকের আক্রমণে ‘বর্তমান’ মাথা নুইয়ে দেয় না। কত কথাই না আপনারা বলেছিলেন! বরুণবাবু বেঁচে থাকলে কী করতেন... আমরা তাঁর পরম্পরার পরোয়া করছি না... হলুদ সাংবাদিকতা... আরও কত কী! রন্তিদেব সেনগুপ্ত নিজে তো এই ‘বর্তমান’-এরই সাংবাদিক ছিলেন? যে খবরের কাগজ তাঁকে এক সময় অন্ন জুগিয়েছে, পায়ের নীচে জমি দিয়েছে, এই জায়গায় দাঁড় করিয়েছে... বিজেপির প্রার্থী তালিকায় নাম লেখানোর পর সেই ‘বর্তমান’কেই তিনি গালমন্দ করছেন! শুভেন্দু অধিকারীর বেইমানিটা তাও মানা যায়। তিনি শুধুই রাজনীতির সুবিধাটা বোঝেন... আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে নিজের স্বার্থটা বোঝেন। কিন্তু রন্তিদেববাবু তো সাংবাদিক ছিলেন! ‘বর্তমান’-এর একদা সহকর্মীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে আপনার ভাবা উচিত ছিল, অতীতকে ভুলতে নেই। বিজ্ঞাপন নিয়ে কটাক্ষ তো আপনিও করেছেন! অন্য কাগজগুলো উল্টে দেখেছেন কি? দেখলে জানতে পারতেন, বাকিরা যা সরকারি বিজ্ঞাপন পেয়েছে, আমরাও তাই পেয়েছি। কাজেই ‘বর্তমান’-এর দিকে আঙুল তোলার আগে ভবিষ্যতে একটু হোম ওয়ার্ক করে নেবেন। পেইড নিউজ আমরা করি না। বর্তমান লেখে মানুষের কথা... মানুষের বিশ্বাস আমাদের শক্তি... ঠিক যেমন বরুণ সেনগুপ্তর ছিল। হ্যাঁ, আমরা আজও প্রতিষ্ঠানবিরোধী। তবে রাজ্য সরকার নয়... সেই সময় এখনও আসেনি। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা সেই পর্যায়ে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় ফিরতে পারতেন না। মানুষের সেই বিচার মাঠে-ময়দানে ঘোরা আমাদের সাংবাদিকরা বুঝতে পেরেছিলেন। প্রতিটি ব্লকে তাঁরা ঘুরেছেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। বাংলা আমাদের রিপোর্টারদের জানিয়েছে মনের কথা... বাংলা বলেছিল, ‘রাজ্যের স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেরা দরকার। বানিয়া পার্টি আর কিছু দলবদলু ধান্দাবাজের হাতে বাংলাকে তুলে দেওয়া যাবে না।’ আর সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে খবর পরিবেশনে। আমরা আজও বিরোধিতা করেছি—নরেন্দ্র মোদি সরকারের ভ্রান্ত নীতির। আমাদের মনে হয়েছে, মানুষের সামনে ওই মুখোশটা খুলে দেওয়া দরকার। সেটাই আমরা করেছি। এটাই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। ভবিষ্যতেও করব। বরুণ সেনগুপ্ত কারাবরণ করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের নীতির বিরোধিতা করে। ম্যাডাম গান্ধী রাজ্যের সরকারে ছিলেন না। দিল্লির কুর্সিতে ছিল তাঁর রাজপাট। জরুরি অবস্থার সেই দিনগুলি অভিশাপের মতো আছড়ে পড়েছিল বরুণবাবুর উপর। তারপরও তাঁর কলম থেমে যায়নি। আমরা সেই দীক্ষায় দীক্ষিত। সেই শিক্ষা আমাদের এখনও পথ দেখায়। তাই আমরা বলতে পেরেছিলাম, নরেন্দ্র মোদির মুখ দেখিয়েও বাংলা দখল হবে না। আমরা বলেছিলাম, ‘ডবল ইঞ্জিন’ ভাঁওতা ছাড়া আর কিছু নয়। সেটাই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। মানুষ প্রমাণ করেছেন সেই সত্য।
মিথ্যে প্রতিশ্রুতির শাক দিয়ে অপদার্থতার মাছ ঢাকা দেওয়া যায়নি। তাই আমরা কৃতজ্ঞ বাংলার মানুষের প্রতি। তাই আজ আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারি, বাংলার মানুষের মন শুধু ‘বর্তমান’ বোঝে। আমরা শুধু বলি না, নির্ভয়ে এই জনমত প্রকাশের সাহস রাখি। আগামী দিনেও যাতে এই সততা এবং মাটির সঙ্গে যোগ বজায় রাখতে পারি, সেই আশীর্বাদ আজ চেয়ে নিলাম বাংলার মানুষের থেকে। বিশ্বাস রাখি, ভবিষ্যতেও বাংলা থাকবে ‘বর্তমান’-এরই পাশে।