অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি, প্রিয়জনের বিপথগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা, সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
তাই উচ্ছ্বাসের মধ্যেও কঠিন শুনিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলা। বলেছেন, ‘ওখানে ভোট লুট হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছে। তিন ঘণ্টা কারসাজি হয়েছে।’ গলায় স্পষ্ট অভিমানের সুর—‘নন্দীগ্রামের আন্দোলনে ছিলাম, মানুষের পাশে থাকতে চেয়েছিলাম, মানুষের রায়কে মাথা পেতে নিলাম।’ এরপরেই চোয়াল শক্ত মমতার, ‘এবার ভোটে যেরকম স্বেচ্ছাচারিতা দেখলাম, তার একটা বিহিত হওয়ার দরকার। তাই সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে যাচ্ছি। অবসরপ্রাপ্তরা কমিশন চালাবে।’
ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধে ছ’টা পার করে টিক টিক করে এগচ্ছে। বাড়ির উঠোনে ছোট্ট মঞ্চ। সেখানে বাংলার আর গোটা দেশকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ব্যানারে নমনীয় ভঙ্গিতে তৃণমূল সুপ্রিমো। ওই মঞ্চেই সাদামাটা আটপৌরে শাড়ি পরে একগাল হাসি নিয়ে উপস্থিত হলেন ‘গেরুয়া-মর্দিনী’—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে টিম মমতার অন্যতম সেনানী অভিষেক, দুই বিশ্বস্ত সহচর ববি হাকিম এবং অরূপ বিশ্বাস। মাইক হাতে নিয়ে প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানালেন গোটা বাংলার মানুষকে। বললেন, ‘বাংলা গোটা দেশকে বাঁচিয়ে দিল। অপদার্থতা, অপশাসন, মেরুকরণ আর বিভেদের বিরুদ্ধে এই লড়াই জিতে বাংলা গোটা দেশকে পথ দেখাল।’
এরপরই দৃশ্যত খানিক বিরক্তি প্রকাশ বাংলার তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রীর। ‘কীভাবে লড়াই করেছি আমরা, বহিরাগত, অর্থবল, এজেন্সি, এমনকী নির্বাচন কমিশন! কী খারাপ ব্যবহার করেছে কমিশন। মানুষ তার যোগ্য জবাব দিয়েছে।’ সেই সঙ্গে বাংলার জনতা জনার্দনের কাছে চিরাচরিত ভঙ্গিতে তাঁর বিনতি—আমার মাথা নত করে দাও হে, তোমার চরণ ধূলার তলে। হাসির ঝিলিক ফিরে আসে মমতার মুখে, ‘আমাদের দলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দুটো স্লোগান তৈরি করেছিল, একটা—খেলা হবে। আর একটা—জয় বাংলা। সত্যি খেলা হয়েছে!’ আবার একটা প্রশান্তির হাসি। তারপর অগ্নিকন্যার অঙ্গীকার, ‘আমি ঠিক করেছি বাংলার যুব সমাজের সেই খেলাকে সম্মান দিতে ৫০ হাজার ফুটবল বিলি করব গ্রামে গ্রামে।’
এর ফাঁকেই ঘোষণা করেছেন, করোনার কারণে কোনও বিজয় মিছিল, কোনও বিজয় উৎসব নয়। এই বিপুল জয়ের পরেও নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে কাটছাঁট করছেন তৃণমূলনেত্রী। আজ, সোমবার সন্ধ্যায় সাতটায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকারের সঙ্গে দেখা করে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গড়ার দাবি জানাবেন। দলীয় সূত্রের খবর, সম্ভবত আগামী ৭ মে রাজভবনে শপথ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এবারের তাঁর কাজের তালিকায় অগ্রাধিকার থাকছে করোনা বিরোধী লড়াইয়ের। আজ থেকেই তা মাঠে নেমে পড়ছেন তিনি। কেন্দ্রের কাছে তাঁর দাবি খুব স্পষ্ট, ‘১৪০ কোটির জনসংখ্যার এই দেশের সবাইকে দিতে হবে ভ্যাকসিন, তাও বিনামূল্যে। যদি তা না হয়, গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসব।’
শেষে দেখালেন ভিকট্রি চিহ্ন। উচ্ছ্বসিত গলায় মমতা জানিয়ে দিলেন, ‘এখন পা ভালো আছে। সব বেদনা এই জয়ে ভুলে গিয়েছি। কথা দিয়েছিলাম। মায়ের কাছে যাচ্ছি। মা কালীর কাছে পুজো দেব।’