নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেকারণে সাতদিন ধরে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের তিন গুরুত্বপূর্ণ উড়ালপুলে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ চূড়ান্ত সমস্যায় পড়বেন। বিষয়টি আংশিক মেনে নিয়ে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই অবস্থার জন্য পূর্বতন বাম সরকারের বিরুদ্ধে অবহেলা ও কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। তিনি মঙ্গলবার কলকাতা পুরভবন থেকে বেরনোর সময় বলেন, বাম সরকারের আমলে উন্নতমানের উপাদান দিয়ে সেতুগুলি তৈরি না হওয়ায় এখন এগুলির এই অবস্থা হয়েছে। এই সেতুগুলি এখনই মেরামত ও সংস্কার না করলে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই উড়ালপুলগুলি বন্ধ রেখে সংস্কারের কাজ শুরু করা হচ্ছে। তবে এমন অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। বছর কয়েক আগে উল্টোডাঙা উড়ালপুল থেকে পোস্তা উড়ালপুল—একের পর এক বিপর্যয়ে বাম আমলের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে বর্তমান শাসকদল। এই আমলের পুরমন্ত্রীর বক্তব্যের পাল্টা বলেন বাম সরকারের পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। বলেন, আমাদের সম্পর্কে যখন উনি এত কিছু বলছেন, তাহলে তো ওদের উচিত, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া। আট বছর ধরে ক্ষমতায় তৃণমূলের সরকার রয়েছে। এতদিনে তো আমাদের হাতে হাতকড়া পড়া উচিত ছিল। অথচ, কিছুই হয়নি। দোষারোপ করা যতটা সহজ, সেগুলি প্রমাণ করা ততটাই কঠিন। কেএমডি’র এক কর্তা ফোনে বলেন, নিয়মিত তদারকি অত্যন্ত প্রয়োজন। অতীতে সেই কাজে ঘাটতি ছিল। বর্তমানে সেই তুলনায় নজরদারি ও তদারকি বাড়লেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনো যাচ্ছে না।
এদিকে, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সোমবার রাত থেকেই মেরামতির জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাঘাযতীন রেল সেতুর একাংশ। আগামী রবিবার রাত পর্যন্ত ওই সেতুর গড়িয়ামুখী রাস্তা বন্ধ থাকবে। পুলিস জানিয়েছে, দক্ষিণমুখী অর্থাৎ অজয়নগরের দিক থেকে গড়িয়ার দিকে যাওয়ার অংশটি বন্ধ থাকায় পাশের উত্তরমুখী র্যােম্প দিয়ে উভয় দিকে গাড়ি চলাচল করবে। মঙ্গলবার উড়ালপুলের অংশে গিয়ে দেখা গেল, দক্ষিণমুখী অর্থাৎ অজয়নগরের দিক থেকে গড়িয়ার দিকে যাওয়ার অংশটি বন্ধ রয়েছে। পুলিস লোহার ব্যারিকেড লাগিয়ে দিয়েছে। উত্তরমুখী র্যারম্প দিয়ে দু’দিকের গাড়ি আসা-যাওয়া করছে। কলকাতা পুলিসের এক ট্রাফিক সার্জেন্টের কথায়, ইএম বাইপাসের উপরে এই উড়ালপুলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অফিসের ব্যস্ত সময়ে বাঘাযতীন উড়ালপুলের একটি র্যা্ম্প বন্ধ থাকায় সমস্যা হচ্ছে। কেএমডিএ’র এক ইঞ্জিনিয়ার এদিন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, সংশ্লিষ্ট উড়ালপুলের ১২ এবং ১৩ নম্বর স্তম্ভের একটি স্ল্যাব পাল্টানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি, উড়ালপুলের চারটি জায়গায় বড় ত্রুটি রয়েছে। সেগুলিও সারাই করা হবে।
পাশাপাশি, আগামীকাল, বৃহস্পতিবার থেকে ৭২ ঘণ্টা শিয়ালদহের বিদ্যাপতি সেতু এবং শুক্রবার থেকে রবিবার জীবনানন্দ সেতু বন্ধ থাকায় ঘুরপথে চলবে ছোট-বড় সমস্ত যানবাহন। স্বাভাবিকভাবেই যানজটের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আবার আগামী ২২ থেকে ২৪ আগস্ট বন্ধ থাকবে খান্না এবং উল্টোডাঙা সংযোগকারী অরবিন্দ সেতু। কেএমডিএ শহরের মোট ১৭টি সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সংস্কার করবে। একইভাবে সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে হাওড়ার বঙ্কিম সেতুরও।