Bartaman Patrika
ধনতেরস ১৪৩১
 

গ্রামবাংলার বিচিত্র নামের কালী

প্রাচীনকাল থেকেই বাংলায় শক্তি সাধনার প্রসার ঘটেছিল। শক্তির উপাসনার সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে বহন করে বাংলায় আজও দেবী কালীর আরাধনা করা হয়।  প্রতি পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে আছে অসংখ্য কালী মন্দির। বাংলার নানান জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সেই কালী মূর্তিগুলির কিছু অদ্ভুত নাম লক্ষ করা যায়।  
শিকলে কালী, লালগোলা, মুর্শিদাবাদ 
প্রায় আড়াইশো বছর আগে, মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ লালবাগ মহকুমার লালগোলায় তাঁর প্রাসাদের অল্প দূরেই নির্মাণ করেন এই কালী মন্দির। মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণের এই কালীপ্রাপ্তির ব্যাপারে দু’টি মত শোনা যায়। প্রথম ঘটনা অনুযায়ী, অবিভক্ত বাংলাদেশের কোনও এক জমিদারবাড়িতে দেবীর নিত্যপুজো হতো। আর্থিক বা অন্য কোনও কারণে অপুত্রক জমিদার মনস্থির করলেন তীর্থাবাস করবেন। তাই যাওয়ার আগে সেই দারুবিগ্রহ দান করে গেলেন যোগীন্দ্রনারায়ণকে। সেই মূর্তি নৌকাযোগে এনে মন্দির নির্মাণ ও বিগ্রহ স্থাপন করে নিত্যপুজোর স্থায়ী ব্যবস্থা করলেন যোগীন্দ্রনারায়ণ, যা চলছে আজও। অন্যমতে, বর্তমান কালীমন্দির সংলগ্ন কলকলি দিঘি একসময় যুক্ত ছিল পদ্মার সঙ্গে। স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে যোগীন্দ্রনারায়ণ জানতে পারেন ওই দিঘিতে জলমগ্ন দেবীর অবস্থিতি। পরে তিনি বিগ্রহ উদ্ধার করে স্থাপন করেন মন্দিরে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, বিগ্রহ প্রথম প্রতিষ্ঠার সময় ছাগবলি হয় ১০৮টি। সেই রক্তভেজা আঙিনার দিকে দেবী এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুরোহিত নাকি শিকল বেঁধে দেন দু’হাতে। সেইজন্যই দেবীর হাতদু’টি জোড়বদ্ধ। এই কালীই ‘শিকলে কালী’ নামে জনপ্রিয়।
বর্গভীমা, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর 
৫১পীঠের অন্যতম তমলুকের দেবী বর্গভীমাকে নিয়ে লোকশ্রুতি বা গবেষণার শেষ নেই। মঙ্গলকাব্য অনুসারে, এক সওদাগর সিংহল যাওয়ার পথে তমলুক বন্দরে নোঙর করেন। সেই সময় এক ব্যক্তিকে স্বর্ণকলস নিয়ে যেতে দেখেন তিনি। সওদাগর ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করতে তিনি জানান, এখানেই জঙ্গলের ভেতর একটি কুয়ো রয়েছে, যার জলে পিতলের কলস ডোবালেই তা সোনার হয়ে যায়। এই কথা শুনে অনেক পিতলের কলসি কিনে তা ওই জলে ডুবিয়ে সোনা বানিয়ে তা বিক্রি করে বিপুল লাভবান হয়েছিলেন সওদাগর। তাই ফেরার পথে তিনি কুয়োর পাশেই বর্গভীমা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
আবার অন্য এক কাহিনিতে রয়েছে, তাম্রলিপ্তে ময়ূরবংশের দ্বিতীয় রাজা তাম্রধ্বজকে এক মেছুনি জঙ্গল পেরিয়ে মাছ দিতে আসত। সেই সময় মাছগুলোকে সতেজ রাখতে একটি গর্ত থেকে জল নিয়ে ছিটিয়েছিল সে। এর পরেই মাছগুলি আবার জীবন্ত হয়ে যায়। খবর পেয়ে রাজা এসে ওই জায়গায় একটি দেবীমূর্তি দেখতে পান এবং তিনি মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। অনেকে বলেন, ধীবর সম্প্রদায়ের আরাধ্যা ‘ভীমা’ দেবীই ‘বর্গভীমা’।
কেউ কেউ আবার বলেন, তাম্রলিপ্তের ময়ূরবংশের রাজা চতুর্থ গরুড়ধ্বজ প্রতিদিন তাজা শোলমাছ খেতেন। কিন্তু ধীবর প্রতিদিন তাজা মাছ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে তাকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পর ধীবর স্বপ্নাদেশ পান যে, অনেক শোল ধরে সেগুলিকে শুকনো করে রাখতে হবে। পরে জঙ্গলের একটি কুয়োর জল ছিটিয়ে দিলেই সেগুলি আবার জীবন্ত হয়ে উঠবে। এভাবে রাজাকে মাছ সরবরাহ করতে থাকলে রাজার সন্দেহ হয় এবং তিনি ধীবরকে তাজা মাছের রহস্য জানতে চাইলে সেই কুয়োর কথা সবাই জেনে যায়। রাজা এসে দেখেন, ওই কুয়োর উপর ভেসে রয়েছে এক দেবীমূর্তি। তখনই তিনি দেবী বর্গভীমার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানা যায়।
দেবী বর্গভীমা চতুর্ভুজা। নীচে রয়েছে শায়িত শিবের মূর্তি। মায়ের ডানহাতের উপরটিতে রয়েছে খড়্গ আর নীচেরটিতে ত্রিশূল। উপরের বাম হাতে খর্পর আর নীচের হাতে মুণ্ড। বর্গভীমার দু’পাশে শোভা পাচ্ছে দশভুজা মহিষমর্দিনী ও দ্বিভুজা মহিষমর্দিনী মূর্তি।
ধন্বন্তরী কালী, জয়নগর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জয়নগর মজিলপুর এলাকার প্রাচীন কালী ধন্বন্তরী। কথিত আছে, ৪০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরে দেবীর স্বপ্নাদেশ থেকে পাওয়া ওষুধ দেওয়া হয়। যা খেয়ে অসুস্থ, রোগে কাতর ভক্তরা সুস্থ হয়ে যান। ভক্তদের বিশ্বাস, গ্যাস, অম্বল থেকে শুরু করে বহু ভয়ানক রোগ দেবীর কৃপায় সেরে যায়। সেই কারণেই দেবীর নাম ধন্বন্তরী। ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে আদিগঙ্গার তীরবর্তী অঞ্চলগুলো ছিল গভীর জঙ্গলাকীর্ণ ও নিরিবিলি। ফলে লোকালয় থেকে দূরে সেই সব স্থানেই তন্ত্রসাধকরা গড়ে তুলেছিল শক্তিসাধনার ক্ষেত্র। তেমনই এক সাধনক্ষেত্র আজকের ধন্বন্তরী কালী বাড়ি।
আজকে যেখানে ধন্বন্তরি কালী মন্দিরটি, আগে সেখানে শ্মশান ছিল। সে সময় জনৈক ভৈরবানন্দ নামে এক তান্ত্রিক গঙ্গার মাঝে তৈরি হওয়া চড়ার উপর বসে সাধনা করতেন। বর্তমানে যেখানে মজিলপুরের ধন্বন্তরী কালী মন্দির অবস্থিত, সেখানেই ছিল তান্ত্রিক ভৈরবানন্দের সাধনক্ষেত্র। পরবর্তীকালে তিনি ডায়মন্ডহারবারের নেতরা গ্রামের জনৈক রাজেন্দ্র চক্রবর্তীকে মজিলপুরে নিয়ে এসে, তাঁকে নিজের আরাধ্য কালীমূর্তি পুজোর দায়িত্ব দেন। সেই সময়েই একদিন রাজেন্দ্রলালকে স্বপ্নে দেখা দেন দেবী ধন্বন্তরী। পুকুরের কাছে পড়ে থাকা একটি নিমকাঠ থেকে দেবী বিগ্রহ তৈরির আদেশ দেন। নির্মিত হয় নিমকাঠের বিগ্রহ। আজও নিমকাঠের বিগ্রহ পূজিত হচ্ছে মন্দিরে। রাজেন্দ্র চক্রবর্তীর সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে মা কালী তাঁকে একটি বাতের ওষুধ দেন, যা পানের মধ্যে দিয়ে খেলে বাত সেরে যায়। ধন্বন্তরীর মতো ওই ওষুধ কাজ করত বলে কালী বিগ্রহটি ধন্বন্তরী নামে পরিচিত হয় আর মন্দিরের নাম হয় ধন্বন্তরী কালী বাড়ি।
নাককাটা কালী, পাঁড়ে গলি, পুরুলিয়া 
পুরুলিয়া শহরের সাত নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য-পল্লির পাঁড়ে গলির একেবারে শেষ প্রান্তে নাককাটা কালী মন্দির। কথিত আছে, আজ থেকে প্রায় দু’শো বছর আগে এই এলাকা ছিল জনমানবহীন। এলাকা জুড়ে ছিল বিঘের পর বিঘে ধান জমি। কালীপুজোর আগে এক রাতে ডাকাত দল এই এলাকায় হামলা চালাতে জড়ো হয়। আমন ধান কেটে লুঠ করার ছক কষে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ান মা শ্যামা। ডাকাত দল তখন ক্ষুব্ধ হয়ে তলোয়ার দিয়ে মায়ের নাক কেটে দেয়। তারপর থেকেই টিলার ওপরে পাথরের মূর্তিকে পুজো করা হয়। পাথরের গায়ে মায়ের যে অবয়ব ফুটে উঠেছে সেখানে শ্যামার নাক কাটা। আজও অতীতের রেওয়াজ মেনে মা এখানে পুজো পান। তবে কার্তিকের অমাবস্যায় শুধু নয়, ফি-সপ্তাহের মঙ্গল ও শনিবার এই পাথরের মূর্তিতে পুজো হয়। হয় বলিও।
শকুন্তলা কালী, কোন্নগর, হুগলি 
শতাব্দীপ্রাচীন এই শকুন্তলা মায়ের পুজো শুরু করে একদল ডাকাত। ঠগি ও ডাকাতে ভরপুর ছিল গঙ্গা তীরবর্তী এই অঞ্চল। আজকের কোন্নগর ছিল ঘন বনজঙ্গলে ঢাকা এলাকা। জঙ্গলের মধ্যে এলাকা ভাগ-ভাগ করে ছিল বিভিন্ন ডাকাত আর ঠগিদের ডেরা। বৈশাখ মাসের কৃষ্ণা তৃতীয়া বা তার ঠিক পরের শনিবার রাতে এই কালীকে পুজো দিয়ে সারা বছরের মতো ডাকাতির ব্যবসা শুরু করত ডাকাত ও ঠগির দল। মস্ত অশ্বত্থ গাছের নীচেই ছিল মায়ের থান। সেই সময় এই থানেই পড়ে থাকত রক্তমাখা হাড়িকাট। গাছের ওপরে বাস করত দলে দলে শকুন, তাই এই থানের আরেক নাম শকুন্তলা মায়ের থান। সেই থেকে মায়ের নামও শকুন্তলা রক্ষাকালী মাতা। কালীপুজোর রীতি ও নিয়ম বেশ প্রাচীন। কথিত আছে, দেবী সূর্যের মুখ দেখেন না। তাই নিয়ম মতো মূর্তি বানানো হয় সূর্যাস্তের পর। দ্বিতীয় প্রহর শেষ হলে পুজো শুরু আর সূর্যোদয়ের আগেই দেবীর বিসর্জন হয়। পশুবলির রীতিও রয়েছে প্রথম থেকেই। এক সময়ে হাজার হাজার ছাগ বলি হতো এক রাতে। আজ সে সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়।   
মহিষখাগী কালী, শান্তিপুর, নদীয়া 
শান্তিপুরের বিখ্যাত কালী হল মাতা মহিষখাগী। আনুমানিক ৫৫০ বছর পূর্বে কোনও এক তান্ত্রিক পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে সাধনা করতে করতে মায়ের রূপ দেখতে পান, সেই থেকেই এই পুজোর সূচনা। কিন্তু সেই তান্ত্রিকের নাম আজও জানা যায়নি। বহুপূর্বে এখানে মহিষ বলি হতো। সেই থেকেই এই মায়ের নাম মহিষখাগী। একবার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র আটটি মহিষ বলি দিতে এসেছিলেন এই মায়ের কাছে এবং তা সম্পন্ন করতে পরের দিন ভোর হয়ে যায়। সেই থেকেই এই পুজো দুই পর্যায়ে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। পুজো বলির আগে পর্যন্ত প্রথম অংশ এবং দ্বিতীয় ভাগ বলিদান পরবর্তী সময়ে হতো। কিন্তু এখন বলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক আসনে পুজো সম্পন্ন হয়। মাকে প্রথম পাটে ওঠানোর দিনে থাকে বিভিন্ন নিয়মরীতি। তার পরে মন্দির প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে সেদিন ভোররাতে হয় দধিমঙ্গল। তারপরে অমাবস্যা শুরু হলে বিবাহ রীতি মেনেই পুজো করা হয় মাকে। পরের দিন পালন করা হয় বাসি বিয়ের রীতি। পুজো সম্পন্ন হওয়ার পর কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হয় মাকে বিসর্জনের জন্য।
সাতভাই কালী, বনগাঁ, উত্তর চব্বিশ পরগণা 
আজ থেকে প্রায় ১৬০ বছর আগে বনগাঁয় ইছামতী নদীর তীরে গভীর জঙ্গলে সাত ডাকাত ভাই একটি বটগাছের নীচে কালীমূর্তি পুজো করত। তারপর তারা ডাকাতি করতে যেত। সাতভাইয়ের প্রতিষ্ঠিত কালীবিগ্রহ বলেই সম্ভবত সাতভাইয়ের কালী থেকে বর্তমানে নাম দাঁড়িয়েছে ‘সাতভিয়া কালী’। সপ্তদস্যু ও তাদের এক ভগিনীর একনিষ্ঠ পূজার্চনায় দেবী এখানে জাগ্রত হয়েছিলেন। তাই আজও এই দেবীস্থান পবিত্র বলে বিবেচিত হয়।
বর্তমানে সেই বটগাছের নীচে সুন্দর মন্দির নির্মাণ করে দেবীরনিত্য আরাধনা করা হয়। কিন্তু ডাকাতদের দ্বারা পূজিতা দেবী কালিকার বিগ্রহটি এখন আর নেই। সেটি নাকি গাছের ভিতর বিলীন হয়ে গিয়েছে কিংবা রুদ্ধ হয়ে আছে। বর্তমানে সেই জায়গায় বটগাছের গুঁড়িতে মায়ের মুখের আদলে এক অপরূপা মূর্তি করা হয়েছে। চার হাত বানানো হয়েছে গাছের চারটি ডাল দিয়ে। হাতে পরানো হয়েছে শাঁখা, পলা ও সোনার চুড়ি। কালো মুখে রুপোর ত্রিনয়ন বসিয়ে ত্রিনয়নী রূপ দেওয়া হয়েছে। মাথায় মুকুট, নাকে সোনার নথ, টায়রা।
ভুসো কালী, খরমপুর, পূর্ব বর্ধমান 
পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর ব্লকের খরমপুর গ্রামে লক্ষ্মীপুজোর পরেই নির্মাণ শুরু হয় প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার এক প্রতিমার। অল্প দিনে বিশালাকার প্রতিমা শুকোতে হয় বলে ব্যবহার করা হয় হ্যালোজেনের আলো। তাতেও পুজোর দিন গভীর রাতে শেষ হয় মূর্তি তৈরি। রাতেই মাটির পাত্রে প্রদীপ শিখা থেকে জমা কালি নিয়ে রাঙানো হয় প্রতিমার শরীর। তারপর গয়না পরিয়ে চক্ষুদান করেন শিল্পী। এই কালীর রং প্রদীপের ভুসোর মতো বলে নাম হয়েছে ‘ভুসো কালী’। কয়েকশো ছাগ বলি হয় কালীপুজোর রাতে। 
কালীপুজোর সঙ্গে এ গ্রামে জড়িয়ে রয়েছে আরও একটি রেওয়াজও। গ্রামের সব বাড়িই একতলা। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, দেবী যেহেতু একতলায় থাকেন, তাই সিঁড়ি বেয়ে কেউ উপরে উঠলে দেবী রুষ্ট হন। কিছু বাড়িতে চিলেকোঠা অবশ্য আছে। তবে সেখানেও মই বা অন্য কোনও ভাবে ওঠা হয়। বছর কুড়ি আগে এক বাসিন্দা নিজের বাড়িতে সিঁড়ি করে উপরে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু যে দিন সিঁড়ি ঢালাই হয় সেদিনই বাড়িতে আচমকা বাজ পড়ে দেওয়াল ফেটে যায়। এরপর থেকে আর কেউ সিঁড়ি তৈরি করার কথা ভাবেননি।
মণ্ডলা কালী, পাঁতিহাল, হাওড়া
আনুমানিক সাড়ে তিনশো বছর আগে হাওড়া জেলার পাঁতিহাল গ্রামের বর্ধিষ্ণু ঘোষাল পরিবারে মা পূজিতা হতেন। ওই পরিবারের এক পূর্বপুরুষ তন্ত্র সাধনা করতেন। সেই নিয়ে পরিবারে মধ্যে মত বিরোধ হওয়ায় গৃহে কালীপুজো বন্ধ হয়। অন্যদিকে পাঁতিহাল গ্রামের রায় পরিবারের ধর্মপ্রাণ জমিদার স্বর্গত কালাচাঁদ রায়কে দেবী স্বপ্নে আদেশ দেন মণ্ডলা নামক স্থানে দিঘির পাশে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করতে। সেই মতো কালাচাঁদ রায় ঘোষাল পরিবারের দ্বিতীয় পুরুষ গৃহীসাধক রামশরণ ঘোষালের সহযোগিতায় পঞ্চমুণ্ডির বেদিতে জ্যৈষ্ঠ মাসের ফলহারিণী অমাবস্যায় কালীপুজো শুরু করলেন কালাচাঁদ রায়। দেবী এখানে দ্বিভুজা, সমুদ্রের জলের মতো উজ্জ্বল গাত্রবর্ণ। একহাতে ছিন্নমুণ্ড এবং অন্য হাতে রুধির পাত্র। জিহ্বা অপ্রকাশমান, দাঁতগুলো সামনের দিকে প্রকাশিত। তিনি সদাহাস্যময়ী। গলায় মুণ্ডমালা এবং কোমরে ছিন্ন নরহস্ত অনুপস্থিত। দেবীর বাঁ পা সামনে এবং ডান পা পিছনে। তিনি শবরূপী শিবের উপর দণ্ডায়মান।
খয়রা কালী, বিথারী, উত্তর চব্বিশ পরগনা
যশোররাজ প্রতাপাদিত্যের পতনের পর মোগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের কাছ থেকে ১৬১১ সালে ভবেশ্বর রায় চাঁচড়া সহ নুরনগরের কয়েকটি পরগনা উপহার পান, সঙ্গে রাজা উপাধিও। পরবর্তীকালে জমিদারি পরিদর্শনে এসে চাঁচড়ার রাজা চালাঘরের পরিবর্তে উচ্চ ভিটায় মায়ের পাকা মন্দির ও পিছন দিকে ভোগ রাঁধার ঘর নির্মাণ করে দেন। কারওকারও মতে, পরবর্তীকালে কলকাতার জানবাজারের বাবু রাজচন্দ্র দাস ১৮০৪ সালে রাসমণিকে বিবাহ করে, এই জমিদারি পরিদর্শনে এসে মায়ের মন্দিরের জীর্ণ দশা দেখে পুনর্নির্মাণকরেন। কয়েক দিন রাজচন্দ্র ও রাসমণি সোনাবেড়িয়ায় (বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত) তাঁদের কাছারি বাড়িতে বসবাসও করেন। 
আজও সেই বিথারী গ্রামে চার শতকের ঐতিহ্য মেনে রানি রাসমণির সংস্কার করা মন্দিরেই হয়ে থাকে খয়রাকালীর পুজো। উচ্চতায় দেবী সাড়ে তিন হাত। দক্ষিণাকালী তথা খয়রাকালীর আদেশে একসময় সোনাই নদীর খয়রা মাছ দিয়েই শুরু হয়েছিল দেবীপুজো। সে রীতি আজও বজায় রেখেছেন উত্তরসূরিরা। খয়রা মাছ দিয়ে পুজোর কারণে, দেবী খয়রাকালী নামে পরিচিত। সারাবছর একটাও খয়রা মাছ পাওয়া যায় না। কিন্তু কালীপুজোর দিন দেবীর কৃপায় মায়ের ঘাটে জাল ফেললে যে খয়রা মাছ ওঠে, তাতেই পুজো হয়ে থাকে খয়রাকালীর। 
29th  October, 2024
কালীপুজোয় বামদেবের প্রিয় মন্দিরগুলিতে কীভাবে পুজো হয়?

তারামায়ের কাছে সারাবছরই ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। তবুও কালীপুজোয় ভিড় যেন জোয়ারের মতো রামপুরহাট থেকে তারাপীঠমুখী হয়ে ওঠে। সর্বত্রই তারাধ্বনিতে মুখরিত হয়ে গোটা তারাপীঠ ও সন্নিহিত অঞ্চল। বিশদ

29th  October, 2024
কালীপুজোর রাতে দক্ষিণেশ্বর ও তারাপীঠ মন্দির
সুমন গুপ্ত

দীপান্বিতা কালীপুজোর মহানিশা। উত্তরবাহিনী গঙ্গার একটানা কুলুকুলু ধ্বনিতে যেন মাতৃবন্দনা! দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে মা ভবতারিণীর সামনে পূজারির আসনে উপবিষ্ট ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। ধূপ-ধুনোর গন্ধ। বিশাল প্রাঙ্গণ জুড়ে প্রদীপের আলোর আলপনা। বিশদ

29th  October, 2024
গুসকরার রটন্তী কালী
শংকরলাল সরকার

একদিকে দামোদর অন্যদিকে অজয়। গুসকরাকে বলা যায় নদের শহর। এই শহরকে বুকে ধরে রেখেছে অজয়ের শাখানদী কুনুর। বর্ধমান জেলার ঐতিহাসিক শহর গুসকরা। সমস্ত মঙ্গলকাব্য জুড়ে শহরের আনাগোনা। বিশু ডাকাতের কর্মস্থল ছিল গুসকরা। বিশদ

29th  October, 2024
তারকাদের ধনতেরস

প্রতিবছর সময় ধরে, রীতি মেনে ধনতেরসে যেকোনও একটা ধাতু কিনতেই হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা আমার নেই। কখনও কখনও সময়, ইচ্ছে, সুযোগ ম্যাচ করে গেলে কেনা হয়ে যায়, এই আর কী। যদি কিনি তাহলে হয় সোনা কিংবা রুপোর গয়নাই আমার প্রথম পছন্দের। বিশদ

29th  October, 2024
আদিরূপা কালী 
সোমব্রত সরকার

ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্যে দিয়েই মানুষ চলেছে বলেই কালীমূর্তি ভয়ঙ্করা। সাধক বলেন, মায়ের পেছনের পা হল মানুষের অতীত আর সামনের পা ভবিষ্যৎ। দুটো পায়ের মাঝখানে নানা সমস্যাসঙ্কুল-উৎকণ্ঠা-ভয়ই প্রকাশিত হচ্ছে। বিশদ

29th  October, 2024
আকাশ প্রদীপ বাংলা লোকসংস্কৃতির এক লুপ্ত অধ্যায়
দেবেশ মজুমদার

মফস্‌সলের শেষ প্রান্তে তখন অধিকাংশ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। দিনের শেষে হ্যারিকেনের আলোই ছিল ভরসা। দুর্গোৎসবের সময় ঝলমলে রংবেরঙের লাইটগুলো দেখে চেনা জায়গাটা অচেনা হয়ে যেত। উৎসবের সেই দিনগুলো নিমেষে পেরিয়ে যেতেই একরাশ মনখারাপ জড়িয়ে ধরত। বিশদ

29th  October, 2024
কেনাকাটার শুভক্ষণ
সুনীতি বন্দ্যোপাধ্যায়

ধনতেরস বা ধন ত্রয়োদশী হল ভারতের অধিকাংশ স্থানে উদ্‌যাপিত দীপাবলি উৎসবের প্রথম দিন। এই দিনটি হিন্দু পঞ্জিকা মতে আশ্বিন বা কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে পালিত হয়।  বিশদ

29th  October, 2024
একনজরে
চমকে ভরা আইপিএলের রিটেনশন তালিকা। গত মরশুমের অধিনায়ক ঋষভ পন্থকে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সও ছেড়ে দিল অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ারকে। আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, নিলামেই ভাগ্য ঠিক হবে লোকেশ রাহুলের। ...

ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে কোচিং সেন্টারের অঙ্কের শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে বর্ধমান মহিলা থানার পুলিস। ধৃতের নাম শুভব্রত দত্ত। বীরভূমের সাঁইথিয়া থানা এলাকায় তার আদি বাড়ি। বর্তমানে সে বর্ধমান শহরের শাঁখারিপুকুর এলাকায় বরফকলের কাছে থাকে। ...

সংবিধানের ৭৫ বছর উদযাপনে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে আওয়াজ জোরালো করবে তৃণমূল। বিজেপির শাসনকালে সংবিধানের উপর বারবার আঘাত আসছে, এই অভিযোগ তুলে বিজেপিকে নিশানা করবেন তৃণমূলের নেতারা। এমনই খবর মিলেছে জোড়াফুল শিবির থেকে। ...

মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে তদারকি সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বেড়েছে বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় আক্রান্তরাও একত্রিত হতে শুরু করেছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ইসকনের অন্যতম সংগঠক চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি ঘিরে। ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

বিশ্ব ভেগান দিবস
১৫১২: সিস্টিন চ্যাপেল এর ছাদের চিত্রাঙ্কন যা মাইকেলেঞ্জেলো এঁকেছেন, জনগনের জন্য প্রথমবারের মত উম্মুক্ত করে দেয়া হয়
১৬০৪: উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এর ট্রাজেডী ওথেলো প্রথমবার মঞ্চস্থ হয় লন্ডনের হোয়াইটহল প্যালেসে
১৬১১: উইলিয়াম শেক্সপিয়ার রোম্যান্টিক কমেডি টেমপেস্ট প্রথমবার মঞ্চস্থ হয় লন্ডনের হোয়াইটহল প্যালেসে
১৮০০: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস হলেন দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি দি এক্সিকিউটিভ ম্যানসন এ থাকা শুরু করেন (পরবর্তীকালে যার নাম হয় হোয়াইট হাউস)
১৮৫৮: ব্রিটিশ রাজতন্ত্র ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে ভারতের শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করে
১৮৬৪: পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রথম মানি অর্ডার পদ্ধতি চালু
১৮৭৩: নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের মৃত্যু
১৮৮০: কলকাতায় প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলাচল শুরু
১৯১৫: বাংলা ক্রিকেটের জনক সারদারঞ্জন রায়ের জন্ম
১৯৫০: সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু
১৯৫০: নোবেল জয়ী পদার্থবিদ রবার্ট লাফলিনের জন্ম
১৯৫৬: বাংলা ভাষা আন্দোলন (মানভূম) এর ফলস্বরূপ মানভূমের একটা অংশ পশ্চিমবঙ্গের সাথে যুক্ত হয় পুরুলিয়া জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে
১৯৫৬: ভারতে রাজ্য পুনর্গঠন আইন, ১৯৫৬ মোতাবেক মহীশূর রাজ্য বর্তমানে কর্নাটক, কেরালা ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের আত্মপ্রকাশ ও পুনর্গঠন হয়
১৯৭৩: মহীশূর রা্জ্যের নাম বদলে কর্ণাটক হয়
১৯৭৩: অভিনেত্রী ঐশ্বর্য রাইয়ের জন্ম
১৯৭৪: ক্রিকেটার ভি ভি এস লক্ষ্মণের জন্ম



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার ৮৩.৬১ টাকা ৮৪.৭০ টাকা
পাউন্ড ১০৭.৫২ টাকা ১১০.৪৫ টাকা
ইউরো ৮৯.৯৯ টাকা ৯২.৬৯ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ৭৯,৭০০ টাকা
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম) ৮০,১০০ টাকা
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম) ৭৬,১৫০ টাকা
রূপার বাট (প্রতি কেজি) ৯৭,২০০ টাকা
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি) ৯৭,৩০০ টাকা
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]

দিন পঞ্জিকা

১৫ কার্তিক, ১৪৩১, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪। অমাবস্যা ৩১/২০ রাত্রি ৬/১৭। স্বাতী নক্ষত্র ৫৪/২৫ রাত্রি ৩/৩১। সূর্যোদয় ৫/৪৪/৫০, সূর্যাস্ত ৪/৫৫/৪০। অমৃতযোগ প্রাতঃ ৬/২৯ মধ্যে পুনঃ ৭/১৪ গতে ৯/২৮ মধ্যে পুনঃ ১১/৪২ গতে ২/৪১ মধ্যে পুনঃ ৩/২৬ গতে অস্তাবধি। রাত্রি ৫/৪৭ গতে ৯/১২ মধ্যে পুনঃ ১১/৪৬ গতে ৩/১১ মধ্যে পুনঃ ৪/৩ গতে উদয়াবধি। বারবেলা ৮/৩৩ গতে ১১/২০ মধ্যে। কালরাত্রি ৮/৮ গতে ৯/৪৪ মধ্যে। 
১৫ কার্তিক, ১৪৩১, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪। অমাবস্যা সন্ধ্যা ৫/৯। স্বাতী নক্ষত্র রাত্রি ৩/২৬। সূর্যোদয় ৫/৪৬, সূর্যাস্ত ৪/৫৭। অমৃতযোগ দিবা ৬/৪৪ মধ্যে ও ৭/২৭ গতে ৯/৩৬ মধ্যে ও ১১/৪৫ গতে ২/৩৭ মধ্যে ও ৩/২০ গতে ৪/৫৭ মধ্যে এবং রাত্রি ৫/৩৯ গতে ৯/১১ মধ্যে ও ১১/৫০ গতে ৩/২২ মধ্যে ও ৪/১৫ গতে ৫/৪৬ মধ্যে। বারবেলা ৮/৩৩ গতে ১১/২১ মধ্যে। কালরাত্রি ৮/৯ গতে ৯/৪৫ মধ্যে। 
২৮ রবিয়স সানি।

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
প্রয়াত জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার রোহিত বল

11:39:32 PM

মুম্বইয়ের গোরেগাঁওতে একটি বহুতলে অগ্নিকাণ্ড, ঘটনাস্থলে দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন

10:47:00 PM

হরিয়ানার রাজ্যপাল বন্দারু দত্তাত্রেয়ার সঙ্গে দেখা করলেন মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিং সাইনি

10:25:00 PM

উত্তরপ্রদেশের সাদাতগঞ্জে একটি কারখানায় আগুন, অকুস্থলে দমকল

10:08:00 PM

জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুরের মারগানা জঙ্গলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

09:48:00 PM

দিল্লির রঘুবারপুরায় একটি আবাসনে আগুন, অকুস্থলে দমকল

09:32:00 PM