প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
প্রতিবছর সময় ধরে, রীতি মেনে ধনতেরসে যেকোনও একটা ধাতু কিনতেই হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা আমার নেই। কখনও কখনও সময়, ইচ্ছে, সুযোগ ম্যাচ করে গেলে কেনা হয়ে যায়, এই আর কী। যদি কিনি তাহলে হয় সোনা কিংবা রুপোর গয়নাই আমার প্রথম পছন্দের। যে বছর শ্যুটিং থাকে, সে বছর স্বাভাবিকভাবেই বাদ পড়ে যায়। আমি যেহেতু ওয়েস্টার্ন জুয়েলারি পছন্দ করি তাই হালকা ধরনের গয়নাই পরতে ভালোবাসি। শাড়ির সঙ্গে অবশ্য ভারী গয়নাই পরি। সেটা অবশ্যই অনুষ্ঠান বিশেষে নির্ভর করে। এখন মিশ্র সংস্কৃতির যুগ। বাঙালিদের অনেক রীতি রেওয়াজ যেমন অবাঙালিদের মধ্যে মিশে গিয়েছে, তেমনই ধনতেরসটাও বাঙালিরা আপন করে নিয়েছে বেশ কয়েক বছর হল। আমি মনে করি, সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানটা সুস্থ সামাজিকতারই লক্ষণ। ধনতেরসটাও এখন সবার উৎসব হয়ে উঠেছে। এবছর ধনতেরসের দিনটা ফাঁকা থাকলে, মন চাইলে অবশ্যই সোনা বা রুপোর কিছু একটা কিনব।
আর একটি উৎসবের সংযোজন: ইন্দ্রাণী দত্ত
ছোটবেলা থেকে বেশ বড় বয়স পর্যন্ত ধনতেরস ব্যাপারটা তেমন জানতামও না, পালনও করতাম না। যখন থেকে উৎসব সম্পর্কে জানলাম, বুঝলাম, প্রথম দিকে না হলেও পরের দিকে কেনাকাটা শুরু করি। মনে হয়েছে, এই ধনতেরস উপলক্ষ্যে কোনও গয়না বা সোনার কিংবা রুপোর কয়েন কিনলাম, যখন যেরকম সুবিধা হয়, এটা তো এক ধরনের ইনভেস্টমেন্টই। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে সেটা মনে করে একটা দিনকে উপলক্ষ করে কিছু কেনা হল আর কী। এটার একধরনের আনন্দ আছে। বাঙালির জীবনে আর একটি উৎসবের সংযোজন। দুর্গা পুজোর পরে কালী পুজোর আগে আবার আর একটা দিন সবাই উৎসবে মেতে উঠছি এখন। আর আমি যেহেতু সাজগোজ করতে ভালোবাসি, শুধু নিজেই না, অন্যদেরকেও সাজাতে ভালোবাসি, তাই ধনতেরসটা একটা উৎসাহ তৈরি করে। আমি ঘরদোর সাজাতে ভালোবাসি। সাজিয়ে রাখি প্রত্যেকটা দিনই। এই বিশেষ দিনগুলোতে ঘর-বাড়িকে স্পেশালভাবে সাজাই। ধনতেরসেও ছাদের সব গাছে আলো লাগাই। গোটা বাড়িটা নানা রকম এলইডি দিয়ে সাজাই। প্রদীপ জ্বালাই। ঘরের বিভিন্ন ভাসে আসল ফুল রাখি। এবার যদি কোনও অতিথি এল খাওয়া দাওয়া তো হয়ই। এখন অবশ্য অনেকেই মিষ্টি এড়িয়ে চলেন। তবুও মিষ্টির আয়োজন ছাড়া উৎসব হয় নাকি? সব মিলিয়ে দিনটা আনন্দেই কাটে। কাটাচ্ছিও। গত দশ-পনেরো বছর তো অবশ্যই। আমি হালকা, ভারী দুই ধরনের অলঙ্কার পরতেই ভালোবাসি। সেটা কী ধরনের পোশাক বা কোন ধরনের অনুষ্ঠানে যাচ্ছি তার উপর নির্ভর করে। কানে ভারী গয়না পরলে গলায় হালকা কিছু পরলাম বা পরলামই না। একটা হাতে হেভি অর্নামেন্ট পরে অন্য হাতে জাস্ট একটা ঘড়ি পরলাম। ধনতেরসে এখনও পর্যন্ত সোনাই কিনেছি। এবছরও সেরকমই ইচ্ছে আছে। আসল কথা যা কিনি আমি আমার মেয়ে রাজনন্দিনীর মাথায় রেখেই কিনি। মেয়ে যদিও এখনও আলাদা করে কিছু কেনে না। ধনতেরস নিয়ে ওর অত ভাবনা চিন্তা নেই। সে তার জগৎ নিয়েই আছে। চেষ্টা করি পাঁজি নির্ধারিত শুভ সময়েই সোনা কেনার। যে বছর আমার শ্যুটিং থাকল, সেই বছরে হয়তো বর যায় কিনতে। গতবছর যেমন আমার শ্যুটিং ছিল। আমার হাজব্যান্ডের সঙ্গে রাজনন্দিনীকে পাঠিয়েছিলাম, মেয়ে যাতে ওর পছন্দসই গয়না কিনতে পারে। আমার যা কিছু সব তো মেয়েরই।
সঞ্চয়ের সুযোগ: কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
আসলে আমার স্বামীর রুপোর পাইকারি ব্যবসা। তাই ধনতেরসে আলাদা করে দোকানে গিয়ে সোনা, রুপো কিনতে যাওয়ার দরকার পড়ে না। স্বামীকে বলে দিলে কখনও রুপোর কয়েন বা ছোটখাট কিছু ধাতব জিনিস এনে দেয়। প্রতি বছরই কিনি। গতবার যেমন লোহার বাসন কিনেছিলাম। আর দেখনদারি ব্যাপারটা আমার মধ্যে কোনও দিনই ছিল না। আজও নেই। আমার সামর্থ্য হিসেবে আমি জিনিস কিনি। তবে আমি বিশ্বাস করি, ইটস অল অ্যাবাউট সেভিংস। ধাতু সঞ্চয় করলে গৃহের লাভ হয়। এখন মূলত মেয়ের জন্য জমাচ্ছি। এইবার কী কিনব এখনও পর্যন্ত জানি না। ওই স্বামীকেই বলে দেব রুপোর কিছু একটা আনতে। ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে গয়না কেনা আমার পক্ষে কোনও দিনই সম্ভব নয়। জীবনে একবারই মাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন আমি খুবই ছোট ছিলাম। মা তখন বলেছিল, নিজের জন্য কিছু কেন। আমার খুব একটা গয়নার শখ এখনও পর্যন্ত নেই। তবে অন্যেরা পরলে অ্যাপ্রিশিয়েট করতে ভালো লাগে। এমনিতে আমি খুব একটা গয়না পরি না। পরলে ভারী গয়নাই পরতে ভালোবাসি। তবে, আমার স্বামী চায়, স্ত্রী একটু সাজুক। কিন্তু বউ খুব একটা সাজুনে নয়। যেটুকু আছে তাতে আমার চলে যায়। আমি খুব সামান্য জিনিসেই খুশি। হয়তো একটু আংটি পরতে ইচ্ছে হল, পরলাম। আমার ও রকম কোনও ফ্যাসিনেশন নেই যে, অমুক হারটা আমাকে পরতেই হবে। তাছাড়া গয়না পরে ঘুরতে আমার ভয়ও লাগে।
মনের আনন্দ হলে মন্দ কী: বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়
ছোটবেলা থেকে ধনতেরস বলে আলাদা করে তো কিছু জানতাম না। আমাদের কাছে কালী পুজো। আর কালী পুজো মানে বাজি, রংমশাল কেনা, ফুলঝুরি কেনা এইগুলোই। আগের দিন চোদ্দো প্রদীপ সাজানো, এই নিয়েই ছিল আমাদের ছোটবেলাটা। কয়েকজন মাড়োয়ারি বন্ধু ছিল। তাদের বাড়িতে বেশ ঘটা করে পুজো টুজো হতো। দেখতে যেতাম। এই হয়তো গত দু-তিন বছর, পালন করব বলে হয়তো নয়, ইচ্ছে হল ধনতেরসের দিন ঠাকুরের কোনও একটা বাসন কিনলাম। আগে থেকে তিথি, নক্ষত্র মেনে, পরিকল্পনা করে কিছু রাখা হয় না। তাই ভেবেচিন্তে কিছু করি না। সোনাদানাও কিনি না। ওই যে বললাম, বাড়ির ব্যবহারের জন্য এমন কোনও জিনিস কেনা হল, যেটা পরে কাজে লাগবে। তাই কিনবই এমন কোনও ব্যাপার নেই। সময় পেলাম, ইচ্ছে হল তখন হয়তো দোকানে গেলাম। পছন্দ না হলে নিলামই না হয়তো। তবে এই উৎসবটা ভালো লাগে। আসলে বাঙালিরা সবকিছুর মধ্যে থাকতেই বেশি ভালোবাসে। ঈদ, বড়দিন তো সেলিব্রেট করেই। কেউ কেউ এখন শুনতে পাই করওয়া চৌথও পালন করছেন। সবার উৎসব নিজের মতো করে উদ্যাপন করাটা বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্যও। প্রত্যেকের জীবনই ভালো খারাপ মিলিয়ে মিশিয়ে। সেক্ষেত্রে ভালো ছোট্ট কিছু সেলিব্রেট করে যদি মনটা ভালো থাকে, নিজে যদি একটু আনন্দ খুশিতে থাকা যায়, মন্দ কী। সব সময় যে সব হুজুগেই মন ভাসাতে হবে এমনটা হয়তো নয়, ছোট ছোট জিনিস, যাতে কারও কোনও ক্ষতি হল না, দোকান থেকে কিনে যদি আমার বাড়ির লোকের ভালো হয় বা যদি আমার নিজের মনটা যদি খুশি থাকে, তাহলে সেটা স্বাগত। আমার অবশ্য এই বছরে এখনও পর্যন্ত আপাতত ধনতেরসে কিছু কেনার পরিকল্পনা নেই। এমনিতে আমি সাবেকি গয়নাই পরতে ভালোবাসি। সাবেকি মানে মা, ঠাকুমার সময়কার পুরনো দিনের ডিজাইনের গয়না। এমনকী আমার বিয়ের জন্যও কোনও নতুন সোনার গয়না গড়াইনি। বিয়ের সময় মা, ঠাকুমা, দিদার গয়নাই পরেছিলাম। আর ভালোলাগে রুপোর গয়না।
বয়সের সঙ্গে বেড়েছে কয়েনের ওজন: অরুণিমা ঘোষ
ধনতেরসে আমি সারা জীবন একটা করে রুপোর কয়েন কিনি। অভিনয় জরতে পা দেওয়ার পর থেকে সেটা শুরু হয়েছে। আশ্চর্য এটাই, এত বছর ধরে অভিনয় করছি, ধনতেরসে আমার আর সোনাদানা কেনা হয়ে উঠল না। আমি ওই রুপোর কয়েনেই আটকে রইলাম। আগে একদম ছোট্ট একটা কয়েন কিনে দিত মা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য কয়েনের ওজন বেড়েছে। এখন নিজে একটা বড় কয়েন কিনি। তবে আমি সোনা না কিনলেও বাড়ির লোকেরা কেনে। গয়নাগাটির ব্যাপারে আমি আবার একটু সেকেলে। পুরনো দিনের মানে ট্র্যাডিশনাল গয়না পরতে ভালোবাসি। নেকলেস পরতে তো খুব ভালো লাগে। তাছাড়া গলাটা ভরাট দেখায়, ওই রকম গয়নাই পরতে খুব পছন্দ করি। এরসঙ্গে বালা পরতেও। গোলাপবালা, জুঁইবালা আমার ভীষণ ভালো লাগে। ভালো লাগলে কী হবে, পরিই তো না। এই নিয়ে বাড়ির লোকেরা খুব বকাবকি করে। আর ভালো লাগে হীরের আংটি। ধনতেরস নিয়ে ইদানীং বাঙালিদের মধ্যে যে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে, তা একদিক দিয়ে ভালো। আবার যদি নিজের মনকেই জিজ্ঞাসা করি করওয়া চৌথ না শিব পুজো? আমি পরম্পরা গত ভাবে শিব পুজোরই পক্ষে। যদি বিবাহিত হতাম, তাহলে আমি হৃদয় থেকে শিব পুজোটাই করতাম। তবে ধনতেরস উপলক্ষে বাঙালি জনমানসে এই আগ্রহ আমি উপভোগ করি। যতই ধনতেরসে রুপোর কয়েন কিনি না কেন, আমি তো আদতে উত্তর কলকাতার মেয়ে। মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে আমাকে যা শেখানো হয়েছে আমি আন্তরিকভাবে সেটাই মেনে চলি। তবে শ্যুটিং পড়ে গেলে ঘর সাজানো, চোদ্দো প্রদীপ দেওয়া থেকে শুরু করে লক্ষ্মী পুজো, তখন মা-ই করে।
আমার মা গয়নাগাটি খুব পছন্দ করেন। ধনতেরস উপলক্ষ্যে মাকে প্রতি বছরই কিছু না কিছু কিনে দিই। মাও খুশি হয়, আবার ইনভেস্টমেন্টও হয়। গত বছর মাকে একটা সরু সোনার চেন কিনে দিয়েছিলাম। তবে ধনতেরসে যে সোনাই কিনতে হবে সেটার কিন্তু লিখিত পড়িত বাঁধাধরা কোনও বিধান নেই। কড়াই, হাঁড়ি... মোটকথা কিছু একটা ধাতব জিনিস কিনলেও নাকি সেটা শুভ। দেখি, এবছর কী কিনি। তেমন ভাবিনি কিছু। আমি আংটি পরতে ভালোবাসি। সেইসঙ্গে ওয়েস্টার্ন প্যাটার্নের সরু চেন পরতে ভালো লাগে। ভারী সাবেকি গয়নার প্রতি আমার কোনও প্রেম নেই। আমি শুধু ঘুরে বেড়িয়ে সব পয়সা খরচা করে ফেলি। যাইহোক, ধনতেরসে ফিরে আসি। এই উৎসবটা এখন বাঙালি সংস্কৃতিতে মিশে গিয়েছে। ভালোই তো। যদি মানুষ কষ্ট করেও কিছু কেনে, রুপো কিনুক, সোনা কিনুক বা কিছু একটা কিনুক, সেটা আনন্দ উৎসবের অঙ্গ হিসেবেই থাক। এত টানাটানির বাজারে যদি কেউ সোনা বা পেপার গোল্ড সার্টিফিকেট কিনতে পারেন তাঁর ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এটাকে বিনিয়োগ হিসেবেই দেখা হোক। নিজের জন্য হয়তো এবারও কিছু কেনা হয়ে উঠবে না। ওই যে বললাম, মায়ের যা, সবই তো আমার।
দিওয়ালি আমার কাছে আলোর উৎসব : আশনুর কৌর (অভিনেত্রী)
দিওয়ালি মানে আমার কাছে আলোর উৎসব। আমি এখানে আক্ষরিক অর্থে আলোর কথা বলছি না। দিওয়ালি মানে আশার আলো। এই সময় সকলের মন রঙিন থাকে। চারদিক সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হয়। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সকলের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়।
আমার বয়স তখন ১০। আমি তখনই আতসবাজি ফাটানো বন্ধ করে দিয়েছি। আমার মনে হয়েছিল, পরিবেশ দূষণের বিষয়ে আমার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আর পশুপ্রেমী হিসেবে একথা আরও মনে হয়েছিল আমার। আমি জানতে পেরেছিলাম যে, বাজি তৈরির কাজে অনেক শিশুশ্রমিক নিযুক্ত থাকে। তাই বাজি আমাদের শুধু পরিবেশকেই দূষিত করে না, আরও অনেক ক্ষতি করে। আমার মনে হয়েছিল দিওয়ালি মানে শুধু আতসবাজি নয়। এর বাইরে আরও অনেক কিছু আছে। দিওয়ালিকে ঘিরে এটাই আমার সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি। সেই থেকে আমি আজও পটকা ফাটাই না। আমাকে দেখে আমার মা-বাবাও বাজি ফাটানো বন্ধ করে দিয়েছেন। আমার এই ছোট এক পদক্ষেপ আমার মনে হয় পরিবেশের উপর অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পেরেছিল। আর একটা সুন্দর স্মৃতি হল নন্দেদের হজুর সাহেব গুরদ্বারে আমি একবার দিওয়ালি উদযাপন করতে গিয়েছিলাম। এখানকার অনুভূতি অনন্য এবং সুন্দর, যা অন্য কোথাও কখনও হয়নি। আর আমি অন্তর থেকে তখন অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করছিলাম। ছোটবেলায় দিওয়ালি দু-তিন দিন আগে শুরু হয়ে যেত। এই সময়ে অবশ্যই আমি সাবেকি পোশাক পরতাম। এই দিনে আমি ট্রাডিশনাল রঙিন পোশাক পরি। এই সময়ে নিজেকে পুরোপুরি ভারতীয় সাজে সাজিয়ে তুলতে ভালোবাসি। তাই উজ্জ্বল রঙের পোশাকের সঙ্গে থাকে কপালে টিপ আর কানে ঝুমকো। এ বছরও নিজেকে এভাবে সাজিয়ে তুলব ভেবেছি।
এখন প্রদীপ দিয়ে সারা বাড়ি সাজিয়ে তুলি। রঙ্গোলি দিই। ব্যস্ততার দরুণ বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে এখন দেখা করা হয় না। কিন্তু দিওয়ালিকে উপলক্ষ করে বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করি। দিওয়ালি মানে আমার কাছে অন্য রকম আনন্দ।
আমার বিশেষ পছন্দ সাবেকি পোশাক: প্রিয়া ঠাকুর (অভিনেত্রী)
দিওয়ালির প্রসঙ্গ উঠলে আমি যেন ছেলেবেলার দিনগুলোতে হারিয়ে যাই। দিওয়ালির সময় আমি আমার নানির বাড়িতে যেতাম। সেখানে তুতো ভাইবোন এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠতাম। আমরা সকলে মিলে খুব মজা করতাম। দিওয়ালিতে আমার সবচেয়ে প্রিয় প্রথা হল নিজেকে সাবেকি সাজে সাজিয়ে তোলা। এখনও আমি এই উৎসবের সময় ট্রাডিশনাল পোশাক পরতে ভালোবাসি। লম্বা কুর্তি আর আনারকলি আমার বিশেষ পছন্দের সাবেকি পোশাক। এ বছর দিওয়ালিতেও আমাকে একই সাজে দেখতে পাবেন। আমি আমাদের সংস্কৃতিকে পোশাকের মাধ্যমে তুলে ধরব। উৎসবের দিনের জন্য বেছে নেব সুন্দর কোনও ভারতীয় পোশাক। এ বছর দিওয়ালি পরিবারের সঙ্গে কাটানোর পরিকল্পনা আছে। প্রতি বছর আমার প্রিয়জনদের সঙ্গে উৎসবের জোয়ারে ভাসার চেষ্টা করি। কারণ দিওয়ালি মানে নিখাদ আনন্দ। আর এদিনটি পরিবারের সবাইকে এক করে।
আমি মনে করি রসনার মাধ্যমে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়া যায়। বিশেষ করে উৎসব মানেই খাওয়াদাওয়া। তাই দিওয়ালি মানে আমার কাছে পুরোপুরি চিট-পিরিয়ড। আমি এই সময় মন ভরে মিষ্টি আর লোভনীয় সব খাবার খাই। যা আমার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সকলে ভালোবাসা দিয়ে বানান। আমি হিমাচলপ্রদেশের মেয়ে। দিওয়ালিতে মা চালের আটা দিয়ে রুটি বানান। আমরা তা দুধে ডুবিয়ে পরম তৃপ্তিতে খাই। সত্যি বলতে এর স্বাদ অতুলনীয়। এই স্বাদ উৎসবকে আরও যেন উষ্ণ করে তোলে। তবে দিওয়ালি মানে আমার মাথায় সবার আগে আসে মিষ্টি। আর বছরে এই একটি মাত্র দিন আমি ক্যালরির কথা বেমালুম ভুলে প্রাণভরে মিষ্টি খাই। তবে দিওয়ালি মানে আবার প্রিয়জনদের সঙ্গে দিনটি উদযাপন করা। দিওয়ালির দিন লক্ষ্মীপুজো আমি কখনও-ই মিস করি না। আমার কাছে এটাই এই উৎসবের প্রাণ। আসলে আমি খুবই আধ্যাত্মিক। আর এর মাহাত্ম্য আমি উপলব্ধি করতে পারি। দিওয়ালিতে অনেকেই আতসবাজি ফাটাতে ভালোবাসেন। আমার মতে, পরিবেশের কথা ভেবে দিনটি উদযাপন করা উচিত। আমার মনে হয় আতসবাজি ফাটানো মানে অর্থের অপচয় করা। আমরা যখন আলো ও ভালোবাসা দিয়ে এই উৎসবকে উদযাপন করতে পারি, তখন আতসবাজির প্রয়োজন কী? তাই আমি সবাইকে আবেদন জানাতে চাই যে পরিবেশের কথা মাথায় রেখে দিওয়ালি উদযাপন করুন। পটকা ফাটানো থেকে বিরত থাকুন। আমাদের আশপাশের জীবজন্তুদের প্রতি দয়ালু হন। এই দিওয়ালি সকলের জীবনে নিয়ে আসুক ভালোবাসা, শান্তি আর আলো।
অন্বেষা হাজরা
আমি বর্ধমানের বনেদি বাড়ির মেয়ে। বাড়িতে দুর্গা পুজো হয়। লক্ষ্মী পুজোও হয়। তাই ছোটবেলা থেকেই আমি অলঙ্কারের আভিজাত্যের সঙ্গে পরিচিত। প্রতি পুজোতেই আমাদের বাড়িতে গয়নাগাটি কেনাকাটা হয়। তাই আমি বিশ্বাসই করি না ধনতেরস উপলক্ষ্যে আলাদা করে সোনার বা রুপোর গয়না কিনতে হবে। আমি বাড়িতেও কাউকে কোনও দিন কিনতে দেখিনি। অনেকের ধারণা বিনোদনের দুনিয়ার, বিশেষ করে অভিনয় জগতের গ্ল্যামার অনেকটাই গয়না নির্ভর। শরীর ঢেকে গয়না পরে ঝকমকিয়ে না উঠলে নাকি ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটবে না। আমার প্রশ্ন কে এমন মাইন্ড সেট করল? বাড়িতে ছোটবেলা থেকে অনেক কিছুই দেখে বড় হয়েছি। অভিনয় পেশায় এসেছি সাত বছর হয়ে গেল। আমার কখনওই মনে হয়নি কী পারিবারিক অনুষ্ঠানে, কী বিনোদন দুনিয়ার কোনও ইভেন্টে গয়না পরে গটগটিয়ে হাঁটাচলা করে নিজেকে আলাদা করে জাহির করতে হবে। আমি মনে করি, গয়না গায়ে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার চেষ্টাটা সেই মানুষটির বা যাঁরা মনে করেন এমনভাবে ঝলমলিয়ে থাকা উচিত, তাঁদের মস্তিষ্কের নিজস্ব ট্যাবু। আমাকে লোক দেখিয়ে বিশেষ একটি দিনে গয়না কিনতেই হবে। বা, ব্র্যান্ডেড পোশাক-আশাক না পরলে মান থাকবে না, এগুলো সম্পূর্ণ যাঁর যাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আবার, আমার কাছে ব্র্যান্ডেড জিনিস নেই, তার মানে এটা নয় যে, কাউকে দেখানোর বা বোঝানোর জন্য যে আমি ব্র্যান্ড বৈরাগী হয়েছি। তাই ধনতেরস উপলক্ষ্যে আমাকে কিছু একটা কিনতেই হবে এমন কোনও ইচ্ছে বা শখ আমার নেই।
হ্যাঁ, গয়না অবশ্যই পরতে ভালোবাসি। প্রয়োজন অনুযায়ী ভারী, হালকা দুই ধরনের গয়না পরি। কেনাকাটাও করি। ধনতেরস আমার কাছে আর পাঁচটা দিনের মতোই সমান। শ্যুটিং থাকলে শ্যুটিং করব। না থাকলে বাড়িতে পরিবারের পাঁচজনের সঙ্গে হইহই করে আনন্দ, মজা করব।