প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
দু’ধরনের মূর্তিতে মায়ের প্রকাশ। কোনও মূর্তিতে মা কালী বাঁ পা আগে বের করে দাঁড়িয়ে আছেন — মায়ের এ প্রকাশকে তান্ত্রিকেরা বলেন, আলীঢ়পাদা। আর ডান পা আগে বের করে মা দাঁড়ালে তিনি হলেন প্রত্যালীঢ়পাদা। সাধকেরা বলেন, মা কালী কালের দেবতা। কালের মধ্যে থাকে কী? যুদ্ধবিগ্রহ, দুর্ভিক্ষ, খরা, বন্যা, মহামারী, ঝড়ঝঞ্ঝা, ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত—এসব কালের মধ্যেই ভরা রয়েছে। কালের মূর্তি বিক্ষুব্ধ। মানুষের লোভ, হিংসা, ঈর্ষা, কামনা সবই কালের প্রকাশ। মানুষ যখন ধ্যানে থাকেন, তখন তাঁদের মধ্যে দয়া-মায়া-স্নেহ- মমতা প্রকাশ পায়। মানুষের ভেতরকার জাগ্রত সত্তাটি তাই মহাকালের প্রতীক। মহাকালের ওপর দিয়ে কালের পদচারণা চলছে। এ কারণেই শিবের বুকের ওপর মা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মানুষের জীবনের বেশিরভাগ মুহূর্তগুলোই তো অস্থির, অশান্ত দশার। কালের প্রকাশ এরকমই। মানুষের লোভ-লালসার দোদুল্যমান দশার প্রতি, সময়ের মধ্যে ছুটে চলা প্রতিটি নিরর্থক পদক্ষেপের প্রতি নজর রেখেই মা কালী লজ্জায় জিভ কেটেছেন।
শবশিবা:
মায়ের আদিরূপ শবশিবার। এই মূর্তির দু’টি শিব। নীচের শ্বেতবর্ণ — সাদা রঙের শিবটি শবরূপী — মড়ার মতোই পড়ে রয়েছেন। তিনি হলেন জড়-জগতের প্রতীক। তাঁর ওপর আধাশোয়া ভঙ্গিমার যে নীলবর্ণের শিবটি রয়েছেন তিনি হলেন মনুষ্যসত্তার চৈতন্যময় অংশ — যা সবলে উঠতে চাইলে কালরূপী মা একেই সজোরে দাপিয়ে রাখছেন। কালীর আদিরূপের মূর্তি এটিই। কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে কষ্টিপাথরের একটি শবশিবার মূর্তি রয়েছে।
নবদ্বীপের পণ্ডিত মহামহোপাধ্যায় শিতিকণ্ঠ বাচস্পতির গৃহদেবী শবশিবা। আগে ঘটে ও যন্ত্রম-এ পুজো হতো কার্তিকী পূর্ণিমাতে। পরে মূর্তি গড়ে পুজো শুরু হয় আঠারো শতকের মধ্যভাগ থেকে। বাচস্পতি মশাই নিজেই পুজো করতেন। একবার পুজো করতে করতে হঠাৎ দেখেন কোষার মধ্যে একটি চিংড়ি মাছ। বুঝলেন মায়ের ভোগে মাছের ব্যবস্থা হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে শিতিকণ্ঠ মশাই চিংড়ি মাছ অন্যান্য মাছ আনিয়ে শবশিবার ভোগের ব্যবস্থা করলেন।
প্রসিদ্ধ সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ মায়ের শবশিবা রূপেরই সরলীকরণ করে দক্ষিণাকালী মূর্তি গড়ে পুজো পদ্ধতিকে আরও সহজসাধ্য করেন। এ সতেরো শতকের প্রথম দিককারই ঘটনা। দক্ষিণাকালীর মূর্তিকে অনেক সাধক বলে থাকেন রণকালী। যদিও মায়ের এ কোনও শাস্ত্রীয় নাম নয়। দক্ষিণাকালীর ধ্যানেই রণকালী তান্ত্রিক বিধিতে পুজো হয় এখনও নবদ্বীপে। মায়ের রূপটি ভয়াল।
কৃষ্ণকালী:
শ্রীকৃষ্ণ কালী হয়েছেন। শ্যামবর্ণা চতুর্ভুজা শ্যামাকে জবাফুল হাতে নিয়ে অঞ্জলি দিচ্ছেন রাধারানি। তাঁর গায়ের রং অতসী ফুলের মতো। একদিন যমুনার চিরঘাটে রাধারানির শাশুড়ি জটিলা এবং ননদ কুটিলা কলসি কাঁখে জল আনতে গিয়ে দেখে তাদের ঘরের বউ সখীদের সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণের সঙ্গে নৃত্যগীত করে চলেছে। এই দৃশ্য দেখে মা ও মেয়ে রাগে গজ গজ করতে করতে বাড়ি ফেরে। ফিরেই কুটিলা দাদার কানে মন্ত্র দেন, ‘তোমার স্ত্রী চিরঘাটে কৃষ্ণের সঙ্গে রঙ্গরসে মেতে আছে।’
কালীর উপাসক আয়ান ঘোষ এই অনাচারের কথা শুনে ক্রোধে মত্ত হয়ে মায়ের হাত থেকে খড়্গ নিয়ে দৌড়লেন রাধা ও কৃষ্ণকে কেটেই ফেলবেন বলে।
শ্রীকৃষ্ণ জানতেন যে আয়ান ঘোষ মা কালীর ভক্ত। তিনি আয়ানকে ছুটে আসতে দেখেই কালীরূপ ধারণ করলেন।
আয়ান এসে দেখলেন যে চতুর্ভুজা কালী। রাধারানি ভক্তিভরে মায়ের পুজো করছেন। এই দৃশ্য দেখে আয়ান ঘোষ শ্রীরাধার প্রতি সন্তুষ্ট হলেন। বাড়ি ফিরে আয়ান মা ও বোনকে তিরস্কার করতে লাগলেন।
মা কালীর কৃষ্ণকালী মূর্তির মধ্যে পুরাণের এই ঘটনাটিই মূর্ত হয়ে উঠেছে। ধ্যানমন্ত্রে বলাও হয় — শ্রীরাধা মান রক্ষার্থং কৃষ্ণকালীং নমাম্যহম্।
দক্ষিণা ও বামা কালীর আবির্ভাব:
দেবীপুরাণে মাকে ‘কালী’ বলা হচ্ছে এই যুক্তিতেই যে, কালকে নিয়ন্ত্রণ করছেন বলেই তিনি কালী। ভোগ ও মোক্ষ দুই কামনা নিয়েই মায়ের সাধনা করা যায়। তিনি ভক্তদের জ্ঞানতত্ত্ব প্রদান করে থাকেন।
মহানির্বাণতন্ত্রে রয়েছে অষ্টবিধা — মায়ের আট ধরনের মূর্তির কথা। চামুণ্ডাকালী আর দক্ষিণাকালী অষ্টবিধা মাতৃকারই দুটো রূপ। দক্ষিণ দিকটা রবিসূত — সূর্যের পুত্র যমের স্থান। কালী নামে ভীত হয়ে সে ইতস্তত ছুটে পালায়। এই জন্যই ত্রিজগতে কালিকা দেবীকে দক্ষিণাকালী বলা হয়। কোমলস্বভাবা বরাভয়করা শ্যামা মা-ই হলেন দক্ষিণাকালী। গৃহস্থেরা শ্যামাকালী পুজো করেন। অনুকূলা ও কল্যাণী দক্ষিণাকালী মা-ই গৃহবাসীদের আদরের শ্যামা। দক্ষিণার বিপরীত বামা। সিদ্ধকালী দক্ষিণার ভিন্নরূপ। দক্ষিণার দক্ষিণপদ— ডান পা সম্মুখে প্রসারিত আর বামাকালী মায়ের বাঁ পা সামনে এগনো। দক্ষিণার পুজো করেন গৃহস্থ এবং বামাকালী একমাত্র সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীদের পূজ্য।
গুহ্যকালী:
দ্বিভুজা গুহ্যকালী কৃষ্ণবস্ত্র পরে আছেন। নাগশয্যাতে তিনি শুয়ে রয়েছেন। তাঁর মাথার ওপর সহস্রনাগ ফণা উঁচিয়ে আছে। গুহ্যকালীর বাঁ হাতে সর্পরাজ তক্ষকের কঙ্কণ। ডান হাতে নাগরাজ অনন্ত বালার মতো জড়িয়ে — পায়ে ও কোমরে যথাক্রমে সাপের কাঞ্চী ও নূপুর। মায়ের বাঁ দিকে রয়েছে বালকরূপী শিব। সমস্ত তন্ত্রশাস্ত্রেই একযোগে বলা হয়েছে, কালী স্বরূপত এক। সাধকের সাধন অধিকার ও অভীষ্ট অনুসারে তিনি বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছেন। মহাপ্রভাময়ী মা কালী আসলে অরূপা — মায়ের কোনও রূপ নেই। গুণক্রিয়া অনুসারে মা বিরাজ করছেন অষ্টবিধা, নববিধা হয়ে।
ভদ্রকালী:
ভদ্রকালী ভগবতী দুর্গার নামান্তর। তিনিই মহিষমর্দিনী। আছে, মহিষীর গর্ভে শিবই জন্ম নেবেন অসুরভাবে। তারপর ভদ্রকালী রূপে মা তাঁকেই বিনাশ করে শিবের বুকের ওপর বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলের চাপ দিয়ে দাঁড়াবেন।
কালিকাপুরাণে ভদ্রকালী মাকে ষোড়শভুজা বলা হয়েছে। মায়ের গায়ের রং অতসী ফুলের মতো। মাথায় জটা। ষোলো হাতে ভদ্রকালী মা শূল, খড়্গ, শঙ্খ, চক্র, বাণ, শক্তি, বজ্র, দণ্ড, খেটক, চর্ম, চাপ, পাশ, অঙ্কুশ, ঘণ্টা, পরশু ও মুষল ধারণ করে সিংহের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন।
কালিকাপুরাণে কালীর এক চারুরূপের বর্ণনা দিতে গিয়ে পুরাণকার বলেছেন, মুক্তকেশী দেবী বসে আছেন সিংহের ওপরে। তাঁর চার হাতের মধ্যে দুই হাতে রয়েছে খড়্গ ও নীলপদ্ম।
এগারো শতকে প্রাপ্ত মায়ের সিংহবাহিনী চার হাতের হাসি মুখের একখানি মূর্তি রয়েছে কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে। মায়ের তিন হাতে কপালপাত্র আর এক হাতে রয়েছে শিশুর দেহ। দুর্গা ও কালীর বা চামুণ্ডার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই মূর্তিটি ভদ্র অর্থাৎ মঙ্গল বিধান করে থাকেন বলেই মা কালীকে সাধকেরা ভদ্রকালী নামে অভিহিতা করেন। দক্ষযজ্ঞ বিনাশের জন্য মহেশ্বর বীরভদ্রকে সৃষ্টি করেন। ওই সময় দেবী ভগবতীর ক্রোধ থেকে ভদ্রকালী উৎপন্না হন। তিনি কোটি যোগিনী পরিবৃতা হয়ে বীরভদ্রসহ দক্ষযজ্ঞ বিশান করেন। দুর্গাপুজোর সময় ভগবতী দুর্গার সঙ্গে অভিন্ন রূপে ভদ্রকালীও পূজিতা হয়ে থাকেন।
মহাকালী:
মহাকালী দশটি মাথার, তাঁর প্রত্যেক মুখে ত্রিনয়ন। দশটি হাতে অস্ত্র ধরা। বিষ্ণু যখন যোগনিদ্রাতে, তখন ব্রহ্মা মধুকৈটভের বিনাশের জন্য মহাকালীর স্তব করেছিলেন। সাধকেরা মহামায়ার তামসিক রূপটিকেই মহাকালী বলেন। তমোগুণ প্রধানা মহাকালী।
চণ্ডীতে মায়ের রূপের বর্ণনাদি রয়েছে। যখন সৃষ্টি হয়নি, চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-পৃথিবীর কোনও অস্তিত্ব ছিল না, সেই নিবিড় আঁধারে আবৃত না থাকা জগতের মধ্যে আকারবিহীনা নিরাকারা মহাকালী ছিলেন মহাকালের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে। মহাকালীর সাধনা অতীব প্রাচীন একটি সাধনক্রম।
শৈবাগম তন্ত্রে সিদ্ধবিদ্যা ষোড়শীর ষোলোটি রূপের অষ্টমটি হলেন মহাকালী। মা বসে থাকেন ললিতা আসনে। এক পা গুটিয়ে আরেক পা আসনের ওপরই ছড়িয়ে। এটি একটি সাধন সংকেত
সিদ্ধ উগ্র রক্ষাকালী:
সিদ্ধকালীকে সাধকেরা দক্ষিণাকালীরই রূপভেদ মানেন। তিনি ত্রিনয়না, মুক্তকেশী। বাঁ-হাতে ধরা কপালপাত্র থেকে তিনি অমৃত পান করছেন। বাঁ পা এগিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তিনি রাজ্ঞী, রাজমহিষী, রানি হয়ে আকাশে নিয়ন্ত্রীধারায় গতিশীলা। এর গুহ্য মানে আছে। আকাশে বিস্তারিতা অর্থাৎ দেহে ব্যাপ্ত কামনাকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন। ছাগ ও ভেড়ার মাংস শ্মশানকালী, বামাকালী, দক্ষিণাকালীর রহস্য পুজোতে দেওয়া হয়।
রটন্তী ও শ্মশানকালী:
কালীর রূপভেদের অন্ত নেই। মহাদেবীর ষোড়শ যাত্রার অন্যতম হল রটন্তী যাত্রা। বারো মাসে তেরো কালীর পুজো করেন তান্ত্রিকেরা। বারোটা অমাবস্যার পুজোর সঙ্গে রটন্তী কৃষ্ণা চতুর্দশীর পুজো। রটন্তী হলেন মৃত্যুঞ্জয়া মহেশ্বরী মাঈ। মৃত্যুঞ্জয় রুদ্র শিব শূলের আগায় যমকে তাড়িত করে তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছেন। মহেশ্বরী মাঈ সেই রুদ্র শিবকেই গিলে খাচ্ছেন। মহাদেবীর রুদ্র ভক্ষণের আসল অর্থ হল, তিনি মহামৃত্যুকেও দেখতে দেবেন না। মার্কেণ্ডেয় পুরাণেও মহাদেবীর এই রূপটি আছে। মহাকাল শিবকেও কলন করছেন দেবী। শ্মশানকালী রণমত্তা। জন্ম, মৃত্যুর যুদ্ধ চলে সবসময় আমাদের ভেতরে। মায়ের আরতিতে যুদ্ধের ঢাক, ভেরী, কাঁসর, দুন্দুভি বাজাতে হয়। এগুলো সব রণবাদ্য। রণবাদ্য বাজিয়ে আরতির পর ভক্তের দেওয়া মূলো নিবেদন করলেন মাকে।
কালিকা হলেন জগৎ সংসারের মূল। মা স্বয়ং মূলা প্রকৃতি। মূলা নক্ষত্রের ঊর্ধ্বমুখীন দশাপ্রাপ্তি ঘটে সাধকের দেহে, যখন কুণ্ডলিনীর মূল জাগে। মূল আধার কালী। দেহচক্রে মূলাধার দিয়ে কুণ্ডলিনী কালীতত্ত্বের শুরু। ঊর্ধ্বমুখীন দশাপ্রাপ্তি হলে দেবীলোকের আধার পাওয়া যায়।
কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ মায়ের দু’পা থেকে বিছে ওঠার কল্পনা রেখে মূর্তিতত্ত্ব লিখেছিলেন। মূলা নক্ষত্র ভয়প্রদা নির্ঋতির। নৈর্ঋত কোণে প্রেত, আত্মা সব জাগ্রত থাকে। শ্মশানে চিতা আসনে বসে এই কোণে নির্ঋতি দেবীর ভোগ দেওয়া হয় সংক্রান্তির দিন। মূলোভোগ হয় মায়ের। মূলকে রক্ষা করেন মা।
শ্মশান মানে মৃত্যুর এলাকা শুধু নয়। শ্মশান হল আত্মবিলয়। সন্ধ্যায় শ্মশানের দেবীকে এই যে তান্ত্রিকেরা পুজো দেন, আরতি করেন — এর কারণ হচ্ছে, শ্মশান আসলেই আত্মগত নিজের মনের জায়গা।
শ্মশানকালীর দু’হাত। এক হাতে তিনি শরীরের স্থূলতাকে নষ্ট করছেন, আরেক হাতে সূক্ষ্ম শরীরের প্রাপ্যযোগকে সাধকের হাতে তুলে দেওয়ার ইশারা করছেন। শ্মশানকালী দুই পা জোড় করে শিবের বুকের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর কোনও জিভ নেই। এটি মহাশূন্যতার প্রতীক। সেই শূন্যতা শ্মশানসম। তাই সংসারত্যাগী মানুষই কেবল শ্মশানকালী পুজো করার অধিকারী। মোক্ষকামী না হলে, শ্মশানে বসে সাধনা না করলে, শ্মশানে আস্তানা না গাড়লে কখনওই শ্মশানকালী মায়ের পুজো করার অধিকার আসে না। এই বিধি না মেনে নবদ্বীপের এক ভক্ত নিজের বাড়িতেই শ্মশানকালী প্রতিষ্ঠা করে পুজো করেছিলেন। তিনি শেষে নির্বংশ হয়ে যান।
দীপান্বিতা ও যক্ষরাত্রি:
কার্তিকের অমাবস্যার রাত্রিতে আমরা যে কালীর পুজো করি তার জন্য কিছু আচার বিধি পালন করা হয়। দীপাবলির অমাবস্যার রাতকে বলা হয় যক্ষরাত্রি। এই রাতে যক্ষরা বিভিন্নভাবে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান।
সৃজনশীল কর্মের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত থাকেন, তাঁদের অনেক সাধক এ কারণেই যক্ষমূর্তি ঘরে রাখতে বলেন।
সৃষ্টিধর্মী কল্পনা যজ্ঞের দান। অগ্নিপুরাণে বলা হয়েছে যে, যক্ষরা মানুষের কাছাকাছি আসতে সক্ষম। এঁরা হলেন উপদেবতা। দীপান্বিতা অমাবস্যার রাত, তার আগের দিন চতুর্দশী তিথি আর অমাবস্যার পর প্রতিপদ — এই তিন তিথির রাতই যক্ষরাত্রি। তিন দিনই দীপদান করা হয়। গৃহস্থেরা ধনধান্যে অর্থ সম্পদের কামনায় ধনদেব কুবেরেরও পুজো করে থাকেন। দীপাবলির সন্ধ্যায় গৃহস্থের বাড়ির সদর দরজায় উত্তর আর দক্ষিণ দিকে মুখ করে প্রদীপ জ্বালানোর রীতি রয়েছে, যাতে যক্ষেরা দীপের রশ্মি দেখতে পান। যক্ষরাত্রিতেই সর্বকামনা সিদ্ধির দেবী মা কালীরও পুজো হয়। আর এদিনই আছে লক্ষ্মী আবাহনের প্রাচীন রীতি।