বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
শান্তিপুর পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাজপুতপাড়া লেনের বারোয়ারির পাশ দিয়ে সরু পিচের রাস্তা পাড়ার ভিতর প্রবেশ করেছে। এই রাস্তার পাশেই ছোট্ট এক জরাজীর্ণ বাড়িতে এর আগে একাই থাকতেন বছর ৮৫ বয়সের সরস্বতী গুঁই। ঘরের চারদিকে চারটি পাকা দেওয়াল থাকলেও ছাদের টালিগুলির প্রায় সবই প্রায় ভেঙে গিয়েছিল। ঘরের ভিতরে আসবাবপত্র বলতে কিছুই নেই। শৌচালয়, বিদ্যুৎও ছিল না। শান্তিপুরের দুই যুবক সুব্রত মৈত্র ও বিশ্বজিৎ রায় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই বৃদ্ধার খবর জানতে পারেন। তাঁরা প্রথমে কয়েকজন এসে বাড়িটি দেখে যান। দেখার পর নতুন করে ঘর তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
বিশ্বজিৎ রায় বলেন, এই বৃদ্ধা একরকম অনাহারে, অবহেলায় দিনের পর দিন কাটাচ্ছেন। যখন বৃষ্টি হয়, ঘরের ভেতর সব জায়গায় ছাদের ভাঙা টালি দিয়ে জল পড়ে। তখন তিনি একটি ইটের ওপর বসে থাকেন। কারণ, ঘরের মেঝেতেও জল জমে যায়। এই দৃশ্য চোখে দেখা যায় না। এরপরই আমরা দুই বন্ধুতে সিদ্ধান্ত নিই, এই বৃদ্ধার জন্য কিছু একটা করা দরকার। তারপরই তাঁকে ঘর বানিয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরস্বতীদেবীর ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়। আর ২৫ বছর বয়সে তাঁর স্বামী সুধাময় গুঁই মারা যান। সেই থেকেই একমাত্র মেয়েকে নিয়ে এই বাড়িতেই থাকতেন। এরপর বাড়ির কিছুটা দূরেই মেয়ের বিয়ে দেন। সুব্রত মৈত্র বলেন, কয়েক বছর আগে সরস্বতীদেবীর মেয়েও বিধবা হয়েছেন। কিন্তু, মাকে দেখার মতো সাধ্য বা ক্ষমতা কোনটাই তাঁর নেই। সরস্বতীদেবী সরকারি সাহায্য পান না। তাঁর রেশন, ভোটার বা আধার কার্ড বলতেও কিছু নেই।
দিন ২৫ আগে ওষুধ ব্যবসায়ী সুব্রত মৈত্র ও শান্তিপুর কলেজের ক্লার্ক বিশ্বজিৎ রায় বৃদ্ধাকে ঘর তৈরি করে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। এরপর স্থানীয় কয়েকজনের সহযোগিতায় বাঁশের নতুন পাটাতন লাগিয়ে ছাদের টালি পরিবর্তন করা হয়। টিনের চাল লাগানো হয়। ঘরের পাকা দেওয়াল রং করে দেওয়া হয়। বানিয়ে দেওয়া হয় শৌচালয়। অন্যদিকে, বিদ্যুৎবিলের কথা মাথায় রেখে ওই বৃদ্ধার বাড়িতে সোলার লাইট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। রবিবার স্থানীয় কাউন্সিলার বিভাস ঘোষের উপস্থিতিতে নতুন করে তৈরি ঘর বৃদ্ধাকে উপহার দেওয়া হয়। বাড়ির সামনে দু’টি বকুল গাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতকিছু দেখে খুশি সরস্বতী গুঁই।
সুব্রত মৈত্র বলেন, আমরা সমাজের নানা স্তরের মানুষের সহযোগিতায় ওই বৃদ্ধা মহিলার বাড়িটি নতুন করে তৈরি করে দিতে পেরেছি। এই কাজটি করতে পেরে আমরা ভীষণ আনন্দিত। অন্যদিকে, সরস্বতী গুঁই নতুন ঘরের মেঝেতে পা ছড়িয়ে চিঁড়ে খেতে খেতে বলেন, ভীষণ খুশি হচ্ছে বাবা। আগের ঘরে থাকতে আমার ভীষণ সমস্যা হতো। এরা ঘরটা বানিয়ে দেওয়ায় খুব সুবিধা হল। আমার কোনও বাথরুম ছিল না, সেটাও ওরা বানিয়ে দিয়েছে। আমার ভীষণ ভালো লাগছে, ওদেরকেও অনেক ধন্যবাদ।