সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: ‘তুঝে ক্যায়া গম তেরা রিস্তা গগনকে বাঁশুরি সে হ্যায়...’ জামা মসজিদ থানার উল্টোদিকে দরিবা কালানের রাস্তাটা দিয়ে কিছুটা এগলেই বাঁ হাতে কিনারি বাজার। পিনকোড-দিল্লি সিক্স। পুরানি দিল্লি। সরু গলিটার দু’ ধারে নানান দোকান। বিয়ের পোশাক, পাগড়ি থেকে পুঁথি। জপের মালা থেকে জরি, জুয়েলারি। হরেক রকম সামগ্রীর পাইকারি লেনদেন। পাপড়ি চাট, গোল গাপ্পে, ছোলে কুলচে, ঠাণ্ডি লস্যির মতো চটপটা খাবারের জোগানও রয়েছে সমানে। সেই সব দেখতে দেখতেই বাঁ হাতে কালো বোর্ডের ওপর হলুদ রঙের সাইনবোর্ড। লেখা হেরিটেজ বিল্ডিং। জৈন শ্বেতাম্বর মন্দির, নউ ঘরা। মানে একটি গেটের ভিতরে ন’টি ঘর। তাই এই নাম। 
এই নউ ঘরার অন্যতম ঠিকানা, মকান নাম্বার ১৯৯৮। যে বাড়িতে এসেছেন জওহরলাল নেহরু, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধী, অরুণা আসিফ আলির মতো রাজনৈতিক মহীরুহরা। ছোটবেলায় ঠাকুরমার সঙ্গে রাহুল-প্রিয়াঙ্কাও। রয়েছে সেইসব ছবি। ২৪ ঘরের ১০০ টি দরজার এই বাড়িটিই চাদঁনি চক কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী জয়প্রকাশ আগরওয়ালের ঠিকানা। যিনি জেপি নামেই পরিচিত। 
যদিও কংগ্রেসের পাঁচবারের (তিনবার জিতেছেন চাঁদনি চক থেকেই) এই প্রাক্তন এমপি’র সঙ্গে এবার রয়েছে আম আদমি পার্টির সমর্থন। তাই দুই দলের মিলিত শক্তিতে নউ ঘরার বাড়িটার জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন জয়প্রকাশ। এলাকায় মুসলিম ভোটাররা তাঁর বাড়তি ভরসা।  বলছেন, ‘আমাকে তো নতুন করে এলাকায় পরিচয় করানোর কিছু নেই। মানুষের ভালোবাসাই আমার সম্পদ।’ বাবা রামচরণ আগরওয়াল ১৯৪৫ সালে পুরভোট জিতেছিলেন এখান থেকেই। সেই হিসেবে এই নিয়ে ২০ টি নির্বাচন দেখছে নউ ঘরার পেল্লাই বাড়িটা। যার বৈঠকখানায় জেপির ছোট ভাই আত্মপ্রকাশের সংগ্রহ করা হেরিটেজ সামগ্রীতে সাজানো। 
বিজেপির প্রার্থী প্রবীণ খাণ্ডেলওয়ালের বাড়ির পিন কোডও দিল্লি সিক্স। সীতারাম বাজারের ৮৯৬ কুচা পতি রাম। ঠিকানায় রাম আছে। তাই প্রচারেও তা উল্লেখ করে টেনে আনছেন মোদির রাম মন্দির তৈরির কৃতিত্ব। বলছেন, ‘মেরা জিত কা বাত নেহি, মোদিজি কো ফির প্রধানমন্ত্রী বানানা হ্যায়।’ প্রথমবার লোকসভা লড়ছেন। জেতা এমপি ডাঃ হর্ষ বর্ধনকে এবার টিকিটই দেয়নি বিজেপি। তাই নাম প্রবীণ হলেও আদতে নির্বাচনী লড়াইয়ে নবীন। তাঁর লড়াই প্রবীণ জেপির সঙ্গে! 
মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সময়ে তৈরি চাঁদনি চকের এই এলাকা গোটা দেশের অন্যতম বড় ব্যবসায়িক লেনদেনের আড়ত। নগদের লেনদেনই বেশি। তাই জিএসটির জটিলতা আর নোটবন্দি এখনও ইস্যু। ভোটের সময় নির্বাচন কমিশনের নজরদারিতে ব্যবসায় ভাটা। মোট টাকার লেনদেনে সাবধানী ব্যবসায়ীরা। পরোটাওয়ালা গলি, কুচা মহাজনি, খড়ি বাউলির থিকথিকে ভিড়ের চাঁদনি চক খালি খালি। 
‘ভোট এলেই জ্বালা। বেশি টাকা নিয়ে আসতে ভয় পায় পাইকারি ক্রেতারা। আবার জিএসটি বিলে কেনাকাটা হলেও ক্রেতা-বিক্রেতার পুরো চেইন সময় মতো হিসেব না দিলেই আসে নোটিস। বেজায় ঝামেলা।’ গজগজ করতে করতে ক্ষোভ উগরালেন বেদ প্রকাশ, ঋষভ জৈনরা। যদিও কেকে জরিওয়ালা, আয়েষা ট্রেডিংয়ের মতো ব্যবসায়ীদের একাংশের সমর্থন জিএসটিকে। তাদের বক্তব্য, ‘সরকার ট্যাক্স পেলে তবেই তো সব কা বিকাশ।’ চাঁদনি চকে তাই চর্চা, কোন বাড়িতে উড়বে সাদা পায়রার জয়ের ফড়ফড়ে ডানা। বাজবে গানা, মসকলি, মসকলি.....!