সুকান্ত বসু, কলকাতা: বৃদ্ধ বাবাকে খেতে না দেওয়ায় ছেলেকে বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার নিদান দিলেন বিচারক। খোরপোশ সংক্রান্ত এক মামলায় এমনই ভাষাতেই ছেলেকে ভর্ৎসনা করলেন বিচারক। সম্প্রতি আলিপুরের বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ছেলেকে ভর্ৎসনার পর এক মাসের মধ্যে খোরপোশের বকেয়া টাকা মেটানোর কথা বলেছে। ছেলের উদ্দেশে বিচারকের মন্তব্য, আপনার বাবার কষ্টের টাকায় তৈরি বাড়িতে আপনি থাকছেন। অথচ বৃদ্ধ বাবাকে দু’বেলা খেতে দেন না। আপনার লজ্জা করে না! উনিই তো আপনাকে কোলে পিঠে মানুষ করেছেন, বড় করেছেন। তাঁর অবদান বেমালুম ভুলে গেলেন! আপনার সন্তান যদি ভবিষ্যতে আপনার সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করেন, তাহলে কেমন হবে?
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার কড়েয়া থানা এলাকার বাসিন্দা ৬৮ বছরের তপন পাড়ুই ২০২৩ সালে মে মাসে আলিপুর আদালতে ছেলের বিরুদ্ধে খোরপোশের মামলা দায়ের করেন। তপনবাবুর অভিযোগ, সাত বছর আগে তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে বাড়িতে ছেলের সঙ্গেই তিনি থাকতেন। তিন বছর আগে ছেলে সজল পাড়ুই বিয়ে করেন। তারপর সে ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করে। আমাকে ঠিক মতো দেখভাল করে না। প্রতিদিন খাবার না জোটায় বাইরে থেকে এনে খাই। ছেলে‑বউমা আমার খোঁজও নেয় না। আমি যেন ওদের কাছে বোঝা হয়ে গিয়েছি। আদালত সূত্রের খবর, পরিস্থিতি কঠিন আকার নিলে ছেলের বিরুদ্ধে আদালতে খোরপোশের মামলা দায়ের করেন তপনবাবু। সেই মামলার শুনানির শেষে আদালত এক অন্তর্বর্তী রায়ে প্রতি মাসে অভিযোগকারীকে পাঁচ হাজার টাকা খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তার ভিত্তিতে ওই টাকা দেওয়া শুরু করে ছেলে। কিন্তু গত চার মাস ধরে ওই টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। বৃদ্ধ ছেলের কাছে টাকা চাইতে গেলে কর্ণপাত করেনি সজল। এরপরই ফের আদালতের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধ বাবা। আদালতকে তপনবাবু বলেন, টাকা না পেলে দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়া, ওষুধ কিনবেন কী করে? এরপরই বিচারক কড়া ভর্ৎসনা করে ছেলেকে বকেয়া টাকা মেটানোর নির্দেশ দেন। বিচারকের কড়া মন্তব্য নিয়ে সজলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এই মামলার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। বিষয়টি সম্পূর্ণ পারিবারিক ব্যাপার।’