আর্থিক উন্নতি ও গৃহসুখ বৃদ্ধি। বস্ত্রাদি ও বিবিধ অলঙ্কারাদি ব্যবসার গতি বৃদ্ধি ও মানসিক তৃপ্তি। ... বিশদ
কী হয়েছিল সেদিন? প্রশ্ন করতেই গ্রামের ইমদাদুল (নাম পরিবর্তিত) গড়গড় করে বলে গেলেন সেদিনের ঘটনা। জানালেন, ওই দিন ভোটে মুর্শিদাবাদ লোকসভার কংগ্রেস প্রার্থী মান্নান হোসেনের (বর্তমানে মারা গিয়েছেন) জয়ের খবর আসতেই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল গ্রামের কংগ্রেস কর্মী, সমর্থকরা। জয়ের মেজাজে গ্রামের মধ্যে ছেলে ছোকরারা বাজি ফটকা ফাটানো শুরু করেছিল। দুর্ঘটনাবশত সেই বাজি উড়ে গিয়ে পড়েছিল গ্রামের এক সিপিএম সমর্থকের বাড়ি। তাই নিয়েই সূত্রপাত হয় গন্ডগোলের। প্রথমে লাঠি, বাঁশ নিয়ে মারধর, পরে শুরু হয় তুমুল বোমাবাজি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রানিনগর থানার পুলিসকর্মীরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই সংঘর্ষে প্রাণ হারায় বছর কুড়ির আনোয়ার শেখ। এরপরই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। গ্রামজুড়ে খবর ছড়িয়ে পড়ে পুলিসের গুলিতে নাকি তার মৃত্যু হয়েছে। সেই ক্ষোভ আছড়ে পড়ে পুলিসকর্মীদের ওপরে। অন্য পুলিসকর্মীরা পালিয়ে যেতে পারলেও সংঘর্ষের মধ্যে আটকে পড়েন রানিনগর থানার তৎকালীন সাব ইন্সপেক্টর গোপাল মণ্ডল। শোনা যায়, সেদিন তড়িঘড়ি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যাওয়ার সময় সার্ভিস রিভলভার নিতে নাকি ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছিল। খুনে নাম জড়িয়েছিল আনোয়ার শেখের বাবা রাজ্জাক শেখের। পরবর্তীতে ওই সংঘর্ষ আরও ব্যাপক আকারে ধারণ করলে প্রাণ হারাতে হয় মুনতাজ শেখ নামের আরও এক ব্যক্তিকে। পরবর্তীতে দীর্ঘক্ষণ সংঘর্ষের পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে পুলিস। এরপর প্রচুর মানুষকে নাকি পুলিসের ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।
তারপরে অনেক জল গড়িয়েছে পদ্মায়। গোপালবাবুর স্মৃতি রক্ষায় আবক্ষ মূর্তি বসানো হয়েছে রানিনগর থানায়। বামেদের বদলে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেদিনের কংগ্রেস কর্মীরা আজ তৃণমূলে। বদলেছে মানুষের মেজাজ। তবে যা বদলায়নি তা হল সেদিনের স্মৃতি। তাই আজও ভোট গণনার দিনে সেই স্মৃতি ফিরে আসে মানুষের মনে। তবে সেদিনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চান না শাসক বিরোধী কেউই। সংর্ঘষে সেদিন যাঁদের নাম জড়িয়েছিল, তাঁরাও চান না গ্রামে সেদিনের পুনরাবৃত্তি ঘটুক।
রাজ্জাক বলেন, সেদিন আমার ছেলে মারা গিয়েছিল। আবার ছেলে হারা বাবাকেই পুলিস খুনে দোষী করা হয়েছিল। তবে যাই হোক, সেইসব পুরনো কথা মনে করতে চাই না। এখন আমরা সবাই তৃণমূলে আছি। দুঃস্বপ্নেও চাইব না এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক।
তাজিমুদ্দিন শেখ বলেন, সেদিন আমি এলাকাতেই ছিলাম না। অথচ শুধু কংগ্রেস করতাম বলে ওই সংঘর্ষে আমার নাম যুক্ত হয়েছিল। পাঁচ বছর জেলও খেটেছি। চাই না এইরকম দিন আর কখনও ফিরে আসুক।