সংবাদদাতা, রামপুরহাট: শনিবার গভীর রাতে দুষ্কৃতীদের বেপরোয়া তাণ্ডবে সন্ত্রস্ত হয়ে উঠল মুরারইয়ের রাজগ্রাম। অস্ত্র নিয়ে আট দুষ্কৃতী রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াল রাজগ্রাম বাজারে। তারা একটি দোকানের শাটার কেটে চুরি করতে বাধা দেন নৈশ প্রহরীা। তখন তাঁর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মারধর করে দুষ্কৃতীরা। তাদের তাড়া খেয়ে দৌড়ে পালায় দুই সিভিক ভলান্টিয়ার। সামাজিক মাধ্যমে সিসি ক্যামেরার সেই ফুটেজ ভাইরাল হতেই এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র আতঙ্ক। দিন কয়েকের ব্যবধানে রাজগ্রাম সহ মুরারই এলাকায় বেশ কয়েকটি চুরি-ডাকাতির হয়েছে। শনিবার মুরারই লাগোয়া মুর্শিদাবাদের জরুর গ্রামে ডাকাতির ঘটনায় এক বাংলাদেশি সহ ছ’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। তাতেই এলাকাবাসীর অনুমান, এই দুষ্কৃতীদের মধ্যেও বাংলাদেশি থাকতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছেন রাজগ্রামবাসী। পুলিস জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের খোঁজ শুরু হয়েছে।
এদিন সকালে এলাকার বাসিন্দারা দেখেন, রাজগ্রাম পশ্চিম বাজারের একটি বিস্কুটের দোকানের শাটারের কিছুটা কাটা। পাশেই এলাকার সব থেকে বড় সোনার দোকান। এলাকার বাসিন্দারা জানান, সোনার দোকানে চুরির টার্গেট ছিল দুষ্কৃতীদের। ভুল করে পাশের দোকানের শাটার কেটেছে। এরপরই তাঁরা জানতে পারেন, রাতে বাজারে নিরাপত্তায় থাকা নৈশ প্রহরী কেশব ছেত্রীকেও মারধর করেছে দুষ্কৃতীরা। কেশব বলেন, রাতে বাজার টহল দিচ্ছিলাম। ওই দোকানের সামনে কয়েকজন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়। কাছে যেতেই জনা আটেক দুষ্কৃতী, যাদের দুজনের কাছে বড় বন্দুক ছিল আর বাকিদের হাতে পিস্তল ছিল। তাদের মধ্যে দুজন আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মারধর করে। বাকিরা এদিক ওদিক ঘুরছিল। এরই মধ্যে সিভিক ভলান্টিয়ার এলে তাদের তাড়া করে। এরপরই ওরা পূর্ব বাজার হয়ে স্কুল রোড ধরে চলে যাচ্ছিল। তখন হেঁটে চায়ের দোকান খুলতে আসছিলেন মুকুল রাজবংশী। তাঁকেও মারধর করে দুষ্কৃতীরা। এরপরই বাসিন্দারা বাজার এলাকার বিভিন্ন জায়গায় থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু করে। তাতেই দেখা যায় হাড়হিম করা ভিডিও। দেখা যাচ্ছে, ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত তিনটে। রাজগ্রাম বাজারে পিঠে ও হাতে অস্ত্র নিয়ে বেপরোয়াভাবে আট দুষ্কৃতী ঘুরে বেড়াচ্ছে। সকলের মাথায় হেলমেট। হাতে টর্চ, লাঠি। দেখে মনে হচ্ছে এলাকার নিরাপত্তায় টহল দিচ্ছে পুলিস। একের পর এক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে তারা। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু কুকুর তাদের দেখে চিৎকার জুড়ে দেয়। তারা ঢিল ছুঁড়ে কুকুর তাড়াচ্ছে। এরপরই দেখা যায়, দুষ্কৃতীদের তাড়া খেয়ে দুই সিভিক ভলান্টিয়ার প্রাণ বাঁচাতে দৌড়চ্ছে। সেই ভিডিও এলাকার মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে সকলকে সতর্ক থাকার বার্তা দিতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি মুরারইয়ের রাজগ্রামের একটি লটারি এজেন্সির দোকানে কর্মীদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ডাকাতি হয়। তার ঠিক ছ’ দিন আগে মুরারইয়ে গুসকিরায় অনলাইন ডেলিভারি সংস্থার অফিসে দুঃসাহসিক চুরি হয়। গত মঙ্গলবার মুরারইয়ের বাঁশলৈ বাজারে একই রাতে দু’টি সোনার দোকানের শাটার ও ভল্ট কেটে কয়েক লক্ষ টাকার সোনা ও রূপোর গয়না ও নগদ হাতিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। তারপরই এই ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দা সৌমেন ভকত বলেন, একের পর এক চুরি ও অস্ত্র নিয়ে দুষ্কৃতীদের বেপরোয়া দাপাদাপি দেখে মনে হচ্ছে তারা পুলিসকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। যাদের হাতে নিরাপত্তার দায়িত্ব, সেই সিভিক ভলান্টিয়াররা দৌড়ে পালাচ্ছে। তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়! আমরা অত্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। স্থানীয় ব্যবসায়ী অচিন্ত্য ঘোষ বলেন, পাশের রঘুনাথগঞ্জে ডাকাতির ঘটনায় এক বাংলদেশি সহ ছ’জন ধরা পড়েছে। আমাদের অনুমান, দুষ্কৃতীদের বাংলাদেশি যোগ রয়েছে। ভাইরাল সিসি ক্যামেরার ছবি। -নিজস্ব চিত্র