উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় দিনটি শুভ। কর্মস্থলে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। আর্থিক দিক অপেক্ষাকৃত শুভ। ... বিশদ
রবিবার দুপুর। ঘাটাল অরবিন্দ স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয়েছিল ঘাটাল উৎসব সংক্রান্ত বৈঠকের। সেখানে উৎসব-কমিটি গঠনের কথা ছিল দেবের। সেই মতো তিনি চলেও এসেছিলেন। তারপরেই গোলমালের সূত্রপাত। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রথমে বাগবিতন্ডা। পরে, রীতিমতো লাঠিসোটা নিয়ে মারামারি দু’পক্ষের। সে এক ধুন্ধুমার কাণ্ড! জখম হলেন কমপক্ষে ১০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিস। নামাতে হয় র্যাফ। দেব মিটিং শুরু হওয়ার আগেই সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে যান। ফলে, বৈঠকের পুরো প্রস্তুতি ভেস্তে যায়।
পশ্চিম মেদিনীপুরের অন্যতম বৃহত্তম মেলা ‘ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলা’। রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলই ওই মেলা পরিচালনা করে আসছে। ২০১১ সালে ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই মেলার রাস নিজের হাতে রেখেছিলেন। ২০২১ সালে তিনি হেরে যান। দলে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন। মেলার দায়িত্ব চলে আসে শঙ্কর-বিরোধী গোষ্ঠীর হাতে। ২০২৩ সালে শঙ্করবাবু জেলা পরিষদে জয়লাভ করেন। তারপর থেকে একটু একটু করে ‘মাথা তুলে দাঁড়ান’। ২০২৪ সালে মেলার পরিচালনার ক্ষমতা নিজে হাতে তুলে নেন।
জেলার রাজনৈতিক মহলের খবর, বেশ ক’বছর ধরেই দেবের সঙ্গে শঙ্করবাবুর দূরত্ব বাড়ছিল। বিধানসভা নির্বাচনের পর তা আরও প্রকট হয়। তাই এবার দেব অনুগামীরা নিজেদের হাতে মেলা পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। সেই মতো দেব ৮ নভেম্বর মেলার একটি প্রস্তাবিত কমিটি তৈরি করে প্রশাসনিক মহলে জানিয়েও দেন। ওই কমিটির তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর ২০ নভেম্বর শঙ্করবাবু ফের মেলার মিটিং ডেকে একটি কমিটি গঠন করেন। সেটি দেবের অনুগামীরা মানতে রাজি হননি। দেব প্রস্তাবিত কমিটি তৈরি করার পরও কেন শঙ্করবাবু ফের কমিটি তৈরি করলেন, সেটি দলনেত্রীর নজরেও আনা হয়।
এদিন, মেলা কমিটির গঠন সংক্রান্ত আলোচনা করতে আসার কথা ছিল দেবের। তার আগেই দলের নির্দেশে শঙ্করবাবু সহ তাঁর গোষ্ঠী এবং দেবের অনুগামীরা কোলাঘাটের একটি হোটেলে মিটিং করেন। সেখানে মোটামুটি দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছয়। কিন্তু স্টেডিয়ামে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি। মিটিং হলে কে বা কারা আরও একটি তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে উভয় পক্ষের কয়েক শো অনুগামী জমায়েত। দেব ঢুকতেই অনুগামীরা গণ্ডগোল শুরু করে দেন বলে অভিযোগ। শঙ্করবাবুও তখন উপস্থিত। দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি মুহূর্তে মারপিটের রূপ নেয়। সবার হাতে দেখা যায় লাঠিসোটা। দেব মিনিট তিনেক থাকার পরই তাঁর কার্যালয়ে ফিরে আসেন। ততক্ষণ পর্যন্ত দেবের কনভয়ের পুলিস ছাড়া অতিরিক্ত কোনও পুলিস ছিল না।
এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন দেব। এদিন গণ্ডগোল হতে পারে বলে স্থানীয় মানুষ আঁচ করেছিলেন। তা সত্ত্বেও স্টেডিয়ামে কেন পুলিস মোতায়েন করা হয়নি বলে অনুযোগ দেবের। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘মিটিংস্থলে এত লাঠি রাখা ছিল কেন, সেটাও বুঝতে পারছি না। এই ঘটনায় আমার খুব লজ্জা লাগছে।’ জেলা কমিটির এক সহকারী সভাপতি বলেন, ‘শঙ্করবাবু এদিন গণ্ডগোল করানোর জন্যই সকাল থেকে স্টেডিয়ামে মাংস ভাত রান্না এবং প্রচুর অনুগামীদের জমায়েত করে রেখেছিলেন। তাঁরা লাঠিও এনেছিলেন। উনি যা করলেন তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’ এদিকে শঙ্করবাবু বলেন, ‘দেবের সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই। আমরা মেলাটি একসঙ্গেই করতে চাই। কেন এমনটা হল তা বুঝে উঠতে পারছি না।’ তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ আশিস হুদাইত বলেন, ‘যারা এই গণ্ডগোল করেছেন, তাঁরা গুণ্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়।’