সংবাদদাতা, বোলপুর: বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় শিক্ষাসত্রের শতবর্ষ উৎসব উদযাপন শুরু হল রবিবার। এই উপলক্ষ্যে রবীন্দ্র ভাবনা ও ঐতিহ্যকে সামনে রেখে দু’দিন ধরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অরবিন্দ মণ্ডল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক দীক্ষিত সিনহা। এছাড়া শিক্ষাসত্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সন্তোষচন্দ্র মজুমদারের পুত্রবধূ পূর্ণিমা মজুমদারও এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। নিজেদের বিদ্যালয়ে শতবর্ষে স্বভাবতই খুশির হওয়া স্কুল প্রাঙ্গণে। স্কুলের পড়ুয়া, প্রাক্তনী ও শিক্ষকদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। শতবর্ষ উদযাপনের প্রথম দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী ও আলোচনা চক্রের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। বিশ্বভারতীর ইতিহাস থেকে জানা যায় ছাত্র-ছাত্রীদের পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি সর্বাঙ্গীণ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাই পাঠভবনের পাশাপাশি আরএকটি বিদ্যালয় চালু করার প্রয়োজন অনুভব করেন। সেই দায়িত্বভার তিনি দিয়েছিলেন সন্তোষচন্দ্র মজুমদারকে। সন্তোষচন্দ্র রবীন্দ্রনাথকে হতাশ করেননি। বর্তমানে মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালার উল্টোদিকে যে এলাকাটি রয়েছে, সেখানেই ছিল সন্তোষচন্দ্র মজুমদারের বাড়ি। সেই প্রাথমিক পর্বের শিক্ষাসত্রের সূচনা হয় তাঁর বাড়িতেই। যার আনুষ্ঠানিক পথ চলা শুরু হয়, আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে, ১৯২৪ সালের ১ জুলাই। বেণুকর ভট্টাচার্য, চিত্তরঞ্জন কর, সত্যেন্দ্রনাথ সাহা, অতুলচন্দ্র ঘোষ, কিরীটীপ্রসাদ কর ও রামেশ্বর লাল ছিলেন শিক্ষাসত্রের প্রথম ছাত্র। কিন্তু মাত্র দু’বছর চালানোর পরে ১৯২৬ সালের নভেম্বর মাসে সন্তোষচন্দ্রের অকাল মৃত্যু হয়। এরপর ১৯২৭ সালে শিক্ষাসত্রকে শান্তিনিকেতন থেকে সরিয়ে শ্রীনিকেতনে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে যে স্কুল প্রাঙ্গণটি রয়েছে, তা স্থাপিত হয় ১৯৬৪ সালে। সেই শিক্ষাসত্র এখনও রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ও আদর্শকে নিয়ে সমানভাবে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। গতবছর পয়লা জুলাই শতবর্ষ উৎসব উদযাপনের সূচনা হয়। এরপর এবছর অপেক্ষার অবসান। অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু হয় তিন মাস আগে। বিভিন্ন নাচগানের মহড়া, প্রদর্শনীর ছবি আঁকা প্রভৃতির আনন্দে বিভোর ছিলেন পড়ুয়ারা। এদিন উদ্বোধনের পর স্কুল প্রাঙ্গণে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। পরে ‘কবির স্কুল: গ্রামীণ জীবন বিকাশে একটি অগ্রণী প্রতিষ্ঠান’ শীর্ষক একটি সেমিনার আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় ছাত্রছাত্রীদের পরিচালিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তমালি মজুমদার বলেন, আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে প্রভাতফেরির মাধ্যমে। এরপর সকাল ১০টায় ‘পুরনো দিনের কথা’ শীর্ষক একটি আলাপচারিতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যা লগ্নে গোটা স্কুল প্রাঙ্গণকে আলোকসজ্জায় সাজানোর পর রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’ পরিবেশন করবে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা।