আর্থিক উন্নতি ও গৃহসুখ বৃদ্ধি। বস্ত্রাদি ও বিবিধ অলঙ্কারাদি ব্যবসার গতি বৃদ্ধি ও মানসিক তৃপ্তি। ... বিশদ
প্রথমে ফেসবুক পরিচয়। তারপরে হোয়াটসঅ্যাপে ঘনিষ্ঠতা। শেষ পর্যন্ত ভালোবাসার টানে সুদূর ব্রাজিল থেকে নবদ্বীপের ফরেস্টডাঙা গ্রামে পাড়ি তরুণী মানোয়েলা আলভাস দা সিলভার। নবদ্বীপের গৌরাঙ্গ সেতু সংলগ্ন ফরেস্টডাঙা গ্রামের যুবক কার্তিক মণ্ডলের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে ৬ বছর ধরে পরিচয় মানোয়েলার। সময় গড়ালে দুই পরিবারের মধ্যেও ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। উভয় পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিয়ে বিয়েতে সম্মতি দেওয়ায় এক সপ্তাহ আগে গ্রামে এসেছেন হবু বিদেশিনী বউ। ব্রাজিলিয়ান বউ দেখতে এখন কার্তিকের বাড়িতে ভিড় গ্রামের মানুষের। ভাষা ভালোভাবে বুঝতে না পারলেও সকলকে দেখে মিষ্টি হাসছেন ২৪ বছরের ব্রাজিলিয়ান তরুণী। আগামী শুক্রবার হিন্দুমতে মতে বিয়ে হবে কার্তিক ও মানোয়েলার। বাড়ির উঠোনজুড়ে বাঁধা হয়েছে প্যান্ডেল।
এদিন দেখা গেল, বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে গল্পগুজব করছেন ওই তরুণী। চেষ্টা করছেন এভাবেই এদেশের ভাষা ও আদবকায়দা বোঝার। তবে কার্তিকের ভাগ্নে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সায়ন ঘোষ মামিকে যত্ন নিয়ে বাংলা শেখাচ্ছে।
মাজদিয়া-পানশিলা পঞ্চায়েতের ফরেস্টডাঙা মাঝের পাড়ার হাতুড়ে ডাক্তার দিলীপ মণ্ডলের একমাত্র ছেলে কার্তিক। তিনি বলেন, আমি সুরাতে দু’ বছর যাবত অ্যালোপ্যাথিক ক্লিনিক চালাচ্ছি। ৬ বছর ধরে পরিচয় মানোয়েলা অর্থাৎ মানুর সঙ্গে। ও এমবিএ করে অ্যাকাউন্টিংয়ের কাজ করত। ওর মাতৃভাষা পর্তুগিজ। আমি অ্যাপের মাধ্যমে কথা বলতাম। পরবর্তীতে ওর বাবা, মা, ভাই, বোন সবার সঙ্গে পরিচয় হয়। তারপর ওকে ভালোবাসার কথা বলি। একমাস পর ও মত দেয়। দেড় মাস আগে ও সুরাতে এসেছে। এক সপ্তাহ হল এই বাড়িতে। আসার পরে ধীরে ধীরে বাংলা বুঝতে শিখেছে। শুক্রবার ওকে সম্প্রদান করবে আমার কাকা, জ্যাঠা বা যে কেউ।
কার্তিকের বাবা দিলীপ মণ্ডল বলেন, আগামী শুক্রবার ছেলের বিয়েতে গ্রামবাসীদের নেমন্তন্ন করা হয়েছে। মাছ, মাংস, মিষ্টি বিভিন্ন খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। মানু খুবই ভালো মেয়ে। সবার সঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে চলছে। প্রথমে এখানে আসার পর ও আমাকে ‘এই বাবা’ বলে ডাকতো। এখন বলে ‘ও বাবা’। ওর মাকে বলতো ‘ওই মা’, এখন ‘ও মা’ বলে। খাওয়াদাওয়ার কোনও সমস্যা নেই। বাড়িতে যা রান্না করি সেটাই খায়। তবে রান্নায় ঝাল কম থাকা চাই। এখানকার রান্না শেখার চেষ্টাও করে। সত্যি বলতে কি এই ক’দিনে ও প্রত্যেককেই আপন করে নিয়েছে। সব সময় হাসিমুখ, গ্রামের মানুষের সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করছে।
কার্তিকের মা সুলতা মণ্ডল বলেন, এর আগেও আমার ছেলের মোবাইলে ওর সঙ্গে কথা বলেছি। তবে এখন ও ভাষা বুঝতে মোবাইলের মাধ্যমে অর্থাৎ অ্যাপের ট্রানজাকশন ব্যবহার করে। আমি খুব খুশি। ওর মা-বাবাকে ছেড়ে চলে এসেছে। আমরাই এখন ওর মা-বাবা। তাই নিজের মেয়ের মতো করে ওকে আঁকড়ে ধরেছি।
কার্তিকের ভাগ্নে সায়ন ঘোষ বলে, আমি পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাটে থাকি। মামার বিয়ের জন্য চলে এসেছি। আমার বিদেশি মামি খুব ভালো হয়েছে। আমি এখন মামিকে বাংলা শেখাই। আমি মামির শিক্ষক।