উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় দিনটি শুভ। কর্মস্থলে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। আর্থিক দিক অপেক্ষাকৃত শুভ। ... বিশদ
স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য জিআই ট্যাগ পাওয়া তুলাইপাঞ্জির সুখ্যাতি। সাধারণ মানুষ, উচ্চপদস্থ আধিকারিক থেকে শিল্পদ্যোগী, এমনকী রাজ্যের নেতা, মন্ত্রী, আমলাদের অনেকেই এই চালের গুণমুগ্ধ। কিন্তু বর্তমানে তুলাইপাঞ্জি চাষ কার্যত কঠিন অবস্থার সম্মুখীন। এর বড় কারণ এই চাষ করে দিন দিন তলানিতে নামছে কৃষকদের আয়। তাঁদের যুক্তি, এক বিঘা জমিতে তুলাইপাঞ্জি চাষ করলে উৎপাদন হয় মেরেকেটে দুই কুইন্টাল ধান। বর্তমান বাজারে যার দাম কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা, সর্বনিম্ন ৫০ টাকা। ফলে তুলাইপাঞ্জি চাষিরা আর্থিকভাবে লাভের মুখ দেখেন না। সেই তুলনায় সাধারণ ধান চাষের ক্ষেত্রে এক বিঘা জমিতে ৮ কুইন্টাল উৎপাদন হয়। তাই এই চাষে তুলনামূলক লাভও হয় বেশি।
তুলাইপাঞ্জি চাষ থেকে সরে আসার আরও একাধিক কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন চাল ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। মোহিনীগঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চালের ব্যবসায়ী রাম বাহাদুর মাহাতোর কথায়, ৩০ বছর ধরে শুধুমাত্র তুলাইপাঞ্জি চালের ব্যবসা করে আসছি। স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য এই চালের দামও তুলনামূলক বেশি। বর্তমানে এই চালের পাইকারি দাম প্রতি কুইন্টাল ১২ হাজার টাকা। তবে, এই ধান চাষের ভবিষ্যত্ নিয়ে এখন প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে তুলাইপাঞ্জি চাষ থেকে অনেক চাষি সরে যাচ্ছেন। এর অন্যতম একটা বড় কারণ ভুট্টা চাষ। গত কয়েক বছর ধরে ভুট্টা চাষ করে চাষিরা অনেক বেশি লাভের মুখ দেখেছেন। আর এই ভুট্টা চাষের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় নভেম্বর মাস থেকেই। তুলাইপাঞ্জি চাষ করলে ডিসেম্বর মাসের আগে ধান কাটতে পারেন না চাষিরা। ফলে ভুট্টা রোপণে তাঁদের পিছিয়ে পড়তে হয় বা চাষ করতে পারেন না। তাই লাভজনক ভুট্টার জন্য তুলাইপাঞ্জি চাষ বাধ্য হয়ে বন্ধ করছেন অনেকে।
কৃষি দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী,জেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে তুলাইপাঞ্জি চাষ হয়। মোহিনীগঞ্জ, ভগিলতা, রুনিয়া, মছলন্দপুর গ্রাম সহ কালিয়াগঞ্জ, ইটাহার, রায়গঞ্জের কিছু জায়গায় তুলাইপাঞ্জি লাগানো হয়। বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জিন্নাতুন খাতুনের কথায়, আর্থিকভাবে লাভ না থাকায় চাষিরা সরে আসছেন। আমাদেরও ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়েছে। তার মধ্যে বাড়ির ব্যবহারের জন্য তুলাইপাঞ্জি চাষ করেছি মাত্র এক বিঘা জমিতে। তার কারণ বাড়ির উৎসব, পার্বণে ওই চাল লাগে। পায়েস, পোলাওয়ের জন্য এই চালের তুলনা হয় না। শুধু আমাদের নয়, গ্রামের অনেক কৃষকই এখন একই পন্থা নিচ্ছেন।
যাঁদের অনেক জমি আছে, তাঁদের কেউ কেউ এখনও তুলাইপাঞ্জি চাষে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। তবে, সেই আগ্রহ কতদিন থাকবে বলা মুশকিল। ছোট চাষিরা আর ওই ধান ব্যবসায়িকভাবে ফলান না। এর একটা বড় কারণ, এই চাষে খরচও অনেক বেড়েছে। তুলাইপাঞ্জি চাষের জন্য রবি চাষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তুলাইপাঞ্জি চাষে বাস্তব সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন জেলার কৃষি আধিকারিক প্রিয়নাথ দাস। তাঁর মন্তব্য, চাষি ও চাল ব্যবসায়ীদের কথা একদম ঠিক। কারণ ভুট্টা চাষের তাড়া থাকায় অনেকে আর তুলাইপাঞ্জি চাষে ঝুঁকছেন না বলে শুনেছি। অনেকসময় তুলাইপাঞ্জি ধানের দাম নেমে আসে কেজি প্রতি ৫০ টাকায়। যা যথেষ্ট উদ্বেগের।