নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কড়া বার্তার পরেই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন মালদহের তৃণমূল নেতানেত্রীরা। ‘ঘুমিয়ে থাকা’ নেতারা কার্যত জেগে উঠে নানা কর্মসূচি নিতে শুরু করেছেন। বিধানসভা নির্বাচনে যাতে বিরোধীপক্ষ কোনওভাবেই এগিয়ে যেতে না পারে, তারজন্য নেতারা গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন বলেই তৃণমূল জেলা নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছে।
মালদহ জেলা তৃণমূল সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, ফিরহাদ হাকিম আমাদের দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা। দলনেত্রীর বার্তা তিনি আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। মালদহের বিপদে-আপদে তিনি ছুটে আসেন। অভিভাবক হিসেবে তিনি আমাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেইমতো দলের নেতারা সোমবার থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জেলার ১২টি আসন আমরা দলনেত্রীর হাতে তুলে দেওয়ার শপথ নিয়েছি। তারজন্য যা করার করব। 
২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতিতে রবিবার মালদহের গাজোল ও ইংলিশবাজারে পুরমন্ত্রী কর্মিসভা করেন। সভামঞ্চ থেকে তিনি বিরোধীপক্ষকে আক্রমণের পাশাপাশি জেলার তৃণমূল নেতানেত্রীদেরও এক হাত নেন। বুথে জিততে না পারা তৃণমূলের শীর্ষ নেতানেত্রীদের নাম না করে সমালোচনা করেন। নেতানেত্রী ও জনপ্রতিনিধিদের একাংশ ঘুমিয়ে থাকার কারণে সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল জেলায় ভালো ফল করতে পারেনি বলে তিনি আক্ষেপ করেছিলেন। রাজ্য সরকারের জনকল্যাণমুখী প্রকল্প সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও দলের নেতানেত্রীদের চরম অনীহা দেখা গিয়েছিল বলে ফিরহাদ মন্তব্য করেন। অবিলম্বে ঘুম থেকে ‘জেগে ওঠার’ জন্য তিনি নেতাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এদিকে, কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, মালদহের তৃণমূল নেতানেত্রীদের একাংশ গত কয়েকমাস ধরে দলের থেকে নিজেদের চিন্তা বেশি করছেন। শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্র নেতারা আখের গোছাতে ব্যস্ত। পুরসভা ও পঞ্চায়েতের প্রশাসনিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা ফায়দা লুটলেও দলের কোনও কাজ সেভাবে করছেন না বলেও চর্চা শুরু হয়েছে। সেই কারণে তৃণমূলকে লোকসভা ভোটে এই জেলায় ব্যাকফুটে চলে যেতে হয়েছে। 
এদিকে, ফিরহাদ কড়া বার্তা দেওয়ার পর সোমবার থেকেই নেতানেত্রীরা নানা কর্মসূচি নিয়েছেন। কীভাবে দলের সংগঠনকে মজবুত করা যাবে, তা নিয়ে সভা, বৈঠক করছেন। ইংলিশবাজার শহরের এক কাউন্সিলার বলেন, পুরসভা ভোটে আমরা যেভাবে খেটেছিলাম, লোকসভায় সেই তুলনায় অনেক কম কাজ করেছি। আসলে পুরসভায় না জিততে পারলে প্রত্যক্ষভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। কিন্তু বিধানসভা বা লোকসভায় সরাসরি পরাজয়ের কোনও প্রভাব আমাদের উপর পড়ে না। সেই কারণে বড় ভোটে প্রচার সহ অন্যান্য কাজে ততটা পরিশ্রম করার তাগিদ থাকে না। পুরমন্ত্রী কড়া বার্তা দেওয়ার পর আর বাড়িতে বসে থাকতে সাহস পাচ্ছি না। যে কোনও সময় শাস্তির খাঁড়া নেমে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে পরের পুর নির্বাচনে টিকিট হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এখন থেকেই নিজের ওয়ার্ডে কাজ শুরু করে দিচ্ছি। গত বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে আমাদের এলাকায় বিজেপি লিড পেয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দলকে লিড দেওয়ার জন্য চেষ্টার কসুর করব না। ভোটাররা কী চান, জনসংযোগ বাড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছি। সেইমতোই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।