নয়াদিল্লি: নানা ধরনের বাহারি স্লোগানে ভবিষ্যতের স্বপ্ন ফেরিতে সিদ্ধহস্ত নরেন্দ্র মোদি। এই দিশাতেই আত্মনির্ভর ভারত গড়তে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র স্লোগান দিয়েছিলেন তিনি। আর এর মার্কেটিংয়ে চেষ্টার কোনও খামতি রাখেননি তিনি। ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকারের জিনিসপত্র কেনার ক্ষেত্রে দেশজ পণ্য ক্রয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারি তথ্যেই উঠে এসেছে উল্টো ছবি। গত তিন বছরে সরকারি টেন্ডারে ৪২ শতাংশ ক্ষেত্রেই মেক ইন ইন্ডিয়া বিধি মেনে চলা যায়নি। দেশীয় সংস্থা নয়, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বিদেশি সংস্থাই। লিফ্ট থেকে কম্পিউটার, সিটিক্যামেরা সহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় ও পরিষেবা সংক্রান্ত সরকারি টেন্ডারে এ ধরনের প্রায় সাড়ে তিন হাজার টেন্ডার চিহ্নিত করেছে নোডাল এজেন্সি। এগুলির সম্মিলিত মূল্য প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ সংক্রান্ত সরকারের এই নোডাল এজেন্সি হল ডিপার্টমেন্ট ফর প্রোমোশন অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইন্টারন্যাল ট্রেড (ডিপিআইআইটি)। মুখে বলা সহজ হলেও ২০১৭ সালের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বিধি কার্যকর যে কতটা মুশকিল, তা এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে। বিরোধী দল কংগ্রেস এই তথ্য হাতিয়ার করে মোদি সরকারকে এক হাত নিয়েছে। দলের নেতা পবন খেরা বলেছেন, প্রতিরক্ষা, টেলি যোগাযোগ, আনবিক শক্তি, ইস্পাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলিতে বিধি পালন করা হচ্ছে না। এতে ভারতীয় ব্যবসা উপেক্ষিত হচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, কিন্তু কার স্বার্থে বিধি পালনে এই অনীহা?
সরকারি জিনিসপত্র কেনার ক্ষেত্রে টেন্ডারে মেক ইন ইন্ডিয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে দেশীয় সরবরাহকারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক টেন্ডার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি রেকর্ড অন্য কথা বলছে। বিভিন্ন বিভাগই ঝুঁকেছে বিদেশি ব্র্যান্ডের দিকে। তা সে লিফ্টই হোক বা সিসি ক্যামেরা, মেডিক্যাল সরঞ্জাম, ডেস্কটপ কম্পিউটার। এক্ষেত্রে দেশি ব্র্যান্ডের তুলনায় আর্থিক সাশ্রয় ও গুণমান কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ডিপিআইআইটি ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকিউরমেন্ট সংস্থাগুলির পণ্য, পরিষেবা ও কাজের জন্য জারি উচ্চমূল্যের ১,৭৫০টি টেন্ডার খতিয়ে দেখেছে। তারমধ্যে ৯৩৬টি টেন্ডারেই ২০১৭ সালের নিয়ম মেনে চলা হয়নি। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই টেন্ডারগুলি খতিয়ে দেখা হয়। ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৩,৫৯০ টি টেন্ডারের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ ক্ষেত্রেই মেক ইন ইন্ডিয়া নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে। সবমিলিয়ে ওই এধরনের টেন্ডারগুলির মোট মূল্য ৬৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।