নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বিগত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে তৃণমূল ও বিজেপির মোকাবিলায় কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে জোট করার পক্ষে সিপিএম সহ বামফ্রন্টের সিংহভাগ শরিক দল রাজি ছিল। এজন্য তারা নিজেদের কোটার আসন ছাড়তেও আপত্তি তোলেনি। অন্যতম ব্যতিক্রমী হিসেবে ফরওয়ার্ড ব্লক এই ধরনের নির্বাচনী সমঝোতার পক্ষপাতী ছিল না। তা নিয়ে তারা সেই সময় জোর গলায় অনেক যুক্তিও তুলে ধরেছিল। পুরুলিয়ায় অনুষ্ঠিত দলের রাজ্য সম্মেলনে এই ধরনের জোটের বিরোধিতা করে প্রস্তাবও গ্রহণ করে দলের নেতৃত্ব। কিন্তু ভোটে মুখ থুবড়ে পড়ার পর বাস্তব অবস্থা বুঝে এখন সেই নেতৃত্ব কার্যত ঢোক গিলতে বাধ্য হচ্ছে। এখন তারা দল ও বাম শিবিরের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে দলীয় অবস্থান বদল করে এই ধরনের সার্বিক জোটের পক্ষেই সওয়াল করতে শুরু করেছে। ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির নেতৃত্ব নিজেদের সেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেওয়ার জন্য এখন দলের রাজ্য কাউন্সিলের চলতি বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে সেই কাউন্সিল সভা। চলবে বুধবার পর্যন্ত। আগের এবং বর্তমান সিদ্ধান্ত নিয়ে কাউন্সিল সদস্যদের একাংশের সমালোচনার মুখে পড়ার সম্ভাবনা থাকলেও রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত পাশ করাতে নেতৃত্বের অসুবিধা হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিন বিকেলে রাজ্য দপ্তরে দলীয় পতাকা উত্তোলন করে কাউন্সিল বৈঠকের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তাঁর পরেই কাউন্সিল বৈঠকের সাত পাতার খসড়া দলিল পেশ করেন রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়। প্রতিনিধিদের উদ্দেশে স্বীকারোক্তির সুরে তিনি বলেন, পুরুলিয়ায় অনুষ্ঠিত রাজ্য সম্মেলনে সে সময় যে সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছিলাম, তা বাস্তবোচিত ছিল না। সেটা ভোটের ফল দেখে আমাদের সকলের কাছেই স্পষ্ট হয়েছে। রাজ্যে বিজেপির আগ্রাসী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পাশাপাশি তৃণমূলের মতো অগণতান্ত্রিক শক্তির মোকাবিলায় এখন গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তির ঐক্য জরুরি। তবে এই জোট কেবলমাত্র নির্বাচন কেন্দ্রিক হলে চলবে না। বিভিন্ন বিষয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা থেকে শুরু করে ভোট পর্যন্ত এই জোট হওয়া দরকার। আমি আশা করব, বাস্তব পরিস্থিতির কথা বিচার করে অযথা বিতর্ক না বাড়িয়ে কাউন্সিল এই সিদ্ধান্তে সহমত ব্যক্ত করবে। উল্লেখ্য, আজ মঙ্গলবার থেকে প্রতিনিধিরা এ নিয়ে তাঁদের মতামত দেবেন।