শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্তশত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত সাফল্য।প্রতিকার: ... বিশদ
বহু জায়গায় রক্ত, মূত্র ও রোগ পরীক্ষার রিপোর্টে যে রেডিওলজিস্ট, প্যাথোলজিস্ট বা মাইক্রোবায়োলজিস্টের সই থাকছে না, কেউ লক্ষ করেছেন সেটা? সই-এর বদলে থাকছে রবারস্ট্যাম্প সহযোগে সইয়ের ছাপ। সইয়ের প্রতিলিপি মাত্র। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ফ্যাকসিমাইল সিগনেচার বা ড্রাই সিগনেচার! প্যাথোলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট বা মাইক্রোবায়োলজিস্টদের সই একবার রবারস্ট্যাম্পে তুলে নিয়ে শয়ে শয়ে, হাজার হাজার রিপোর্টে তার ছাপ পড়তে থাকছে। সেদিকে লক্ষ থাকছে না কারও। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সরকার নথিভুক্ত কোনও ল্যাবরেটরি, হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্টে এ ধরনের সই আর বরদাস্ত করা হবে না। যে ডাক্তার রিপোর্ট দিচ্ছেন, তাঁর পুরো সই, তারিখ এবং অফিসিয়াল সিল থাকলে মান্যতা দেওয়া হবে। ২০ সেপ্টেম্বর রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তী এই নির্দেশনামা জারি করেছেন। অজয়বাবু বলেন, ডাক্তারবাবুর সই রবারস্ট্যাম্পে নকল করে, তার ছাপ দেওয়া রিপোর্ট আমরা বরদাস্ত করব না। রিপোর্টে ডাক্তারবাবুর ‘ওয়েট সিগনেচার’ বা প্রকৃত সই থাকতে হবে। না হলে সেই রিপোর্ট জাল ও বেআইনি হওয়ার আশঙ্কাই শুধু থাকে না, এ নিয়ে অসাধু কাজকর্মও চলে।
সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য দপ্তর ডিজিটাল রিপোর্টকে এই আওতার বাইরে রেখেছে। কারণ, ডাক্তারবাবুর নামে তৈরি ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড খুলে তবেই সেই রিপোর্ট তৈরি করা সম্ভব। তাই সেই ‘ডিজিটালি সাইনড’ রিপোর্টকে ছাড় দিচ্ছে দপ্তর। কিন্তু, রবারস্ট্যাম্পের ছাপ মারা সই বরদাস্ত করা হবে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষ সচিব (গবেষণা) এবং প্যাথোলজির অধ্যাপক ডাঃ প্রদীপ মিত্র বলেন, নির্দেশনামায় ডিজিটাল সই নিয়ে স্পষ্ট কোনও বক্তব্য না থাকায় বহু প্যাথোলজিস্টের মনে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। বাদবাকি ঠিকই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সত্যিই তো, রিপোর্টে রবারস্ট্যাম্পে সই যাঁর রয়েছে, সেই ডাক্তারবাবু সত্যিই রিপোর্ট দেখেছেন কি না, তা কে বলতে পারে।
দপ্তর সূত্রের খবর, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে হাসবেন না কাঁদবেন বুঝে উঠতে পারেননি বহু স্বাস্থ্যকর্তাই। কারণ, একই ডাক্তারের রবারস্ট্যাম্পের সই বনগাঁ থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত ৩৫-৪০টি ল্যাবের রিপোর্টে থাকছে—এমন ঘটনাও ঘটছে। প্রদীপবাবু বলেন, অতিমানব ছাড়া এমন হয় নাকি! একই লোক একই সময়ে হাওড়ার একটি ল্যাবের রিপোর্ট দেখছেন, আবার উত্তর ২৪ পরগনার একটি রক্তের রিপোর্টেও তাঁর সই থাকছে! একইসঙ্গে দু’জায়গায় তিনি থাকেন কী করে? আসলে অধিকাংশ ছোট ও মাঝারি ল্যাবই যে ডাক্তারবাবুদের সঙ্গে চুক্তি করে তাঁর নাম এবং ইনিশিয়াল নকল করে তাড়া তাড়া রিপোর্ট বের করে মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে— তা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের কথা থেকেই স্পষ্ট।
বিশিষ্ট রেডিওলজিস্ট এবং মেডিক্যাল কলেজের রেডিওলজি’র প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডাঃ অশোক ভদ্র বলেন, এই সিদ্ধান্তকে সর্বান্তকরণে সমর্থন জানাই। এ ধরনের ল্যাবরেটরির রিপোর্টের নামে অসাধু চক্র চলছে বলে জানিয়ে রাজ্যের একটি বড় রক্ত ও রোগপরীক্ষা গোষ্ঠীর কর্ণধার ডাঃ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, দপ্তর সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ড্রাই সই চলতে পারে না। সোসাইটি ফর বায়োমেডিক্যাল ল্যাবরেটরির সহকারী সম্পাদক ডঃ বিকাশ মণ্ডল বলেন, সমর্থনযোগ্য পদক্ষেপ। রোগীর বাড়ির লোকজন ভুলভাল রিপোর্ট থেকে থেকে বাঁচতে পারবেন। তবে রাস্তায় নেমে নজরদারি করতে হবে। না হলে কাগুজে নির্দেশই থেকে যাবে।