নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুর: ‘ইস বার তো বচ গ্যায়া.....!’ প্রাণঘাতী হামলা থেকে কোনওক্রমে বেঁচে বেলঘরিয়া থানায় বসে তখন ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন আতঙ্কিত ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডল। ঘটনার পর এক ঘণ্টাও পার হয়নি। মোবাইল ফোনটা বেজেই যাচ্ছিল। প্রথমবার ধরেননি অজয়বাবু। পুলিস কর্মীদের ভরসায় দ্বিতীয়বার ফোনটা ধরা মাত্রই, অপরপ্রান্ত থেকে শান্ত গলায়....‘বেউর সে বোল রাহা হু। ইস বার তো বচ গ্যয়ে শ্লা....লেকিন আগলিবার কৌন বাঁচায়েগা!’ স্কিনে ভেসে ওঠা নম্বরটা ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (ভিওআইপি)’এর মাধ্যমে ইউক্রেনের কোনও ই-সিমের কল! ভয়ে আরও যেন গুটিয়ে গেলেন অজয়বাবু। বেউর মানে তো জেলবন্দি সুবোধ সিং! ‘ডন’, ‘গ্যাংস্টার’, ‘জুয়েল থিফ’ বিস্তর নাম এই কুখ্যাত অপরাধীর। গত ছ’বছর ধরে বেউর জেলেই বন্দি। আর সেই জেলকে ‘এপি সেন্টার’ বানিয়ে খুন, অপহরণ, তোলাবাজি, সোনার দোকানে ডাকাতি—‘অপরাধ সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছে সুবোধ সিং। নিজে ভিতরে থাকলেও, সেকেন্ড ইন কমান্ড বিকাশ সিং, দুলারা সিং, কিষন দুবের মতো শাগরেদরা বাইরে থেকে সেই সাম্রাজ্য বহাল রেখেছে। বেউর জেল থেকে কেন অন্যত্র সরানো যায় না সুবোধকে। কেনই বা বিভিন্ন রাজ্যের পুলিস বেউর জেলে গিয়ে সুবোধকে জেরা করতে চেয়েও, ফিরেছে বিফল মনোরথে, সেসবই জানা বারাকপুরের নোনা চন্দনপুকুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের। এহেন সুবোধ সিংয়ের পরিকল্পিত হামলা এবং ফের হুমকি, ভাবাচ্ছে এই ব্যবসায়ীর সঙ্গেও পুলিসকেও।
এরপর বিকেল চারটে নাগাদ ফের ভিওআইপি কল। ফের বেউর জেল থেকে সুবোধ সিং। তবে এবারের ফোনটা বারাকপুরের এক প্রোমোটার-ব্যবসায়ী তাপস ভকতের কাছে। প্রথমবার রিং হলেও, ফোন ধরেননি তাপসবাবু। ‘সিং’ নামে সেভ করা নম্বরটি দেখে বুঝতে পারেন, আবার তোলা চেয়ে হুমকি দেবে। ফোন ধরেননি। এক মিনিটের মধ্যে ফের রিং, এবার ফোনটি ধরেন তাপসবাবু নিজেই। অপরপ্রান্ত থেকে হিন্দিতে....‘তাপস বোল রাহা হ্যায়?’ জবাব হ্যাঁ বলা মাত্রই, ‘বেউড় জেল সে বোল রাহা হুঁ, অজয় মণ্ডল কে উপর গোলি চলা। ইসবার আপকি বারি! সাবধান রহেনা, রহে সাকো তো!’ আতঙ্কিত তাপসবাবু বিষয়টি বারাকপুরের পুলিস কমিশনার অলক রাজোরিয়াকে জানিয়েছেন। টিটাগড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর আগেও হিন্দিভাষী অধ্যুষিত বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবসায়ীদের ভয় দেখানো, তোলা চেয়ে হুমকি দেওয়া, খুনের চেষ্টার ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল সুবোধ সিং গ্যাংয়ের। এমনকী টিটাগড়ের বিজেপি নেতা মনীশ শুক্লা খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল সুবোধ ও তার দলবলের। কুখ্যাত এই ডন এবার বারাকপুরের ব্যবসায়ী মহলকে ‘টার্গেট’ করায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।