বদমেজাজ ও কঠিন ব্যবহারে ঘরে-বাইরে অশান্তি ও শত্রুতা। পেট ও বুকের সংক্রমণে দেহসুখের অভাব। কর্মে ... বিশদ
দৃশ্য-২: গিরিশ পার্ক এলাকার পেট্রোল পাম্প। দুপুরে সেখানে বাইক-স্কুটিতে তেল ভরার বেশ কয়েকজন অপেক্ষা করছেন। দেখা গিয়েছে, কেউ ৫০, কেউবা ১০০ টাকার পেট্রল ভরালেন। একজনকেই সর্বোচ্চ ২১০ টাকার পেট্রল নিতে দেখা গেল। তাঁরা জানালেন, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি তেল নিয়ে খরচ করার মত টাকা গ্যাঁটে নেই। যতটুকু দরকার ততটাই তেল নিচ্ছি।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই আশঙ্কা তৈরি হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার শহরে সেঞ্চুরি করেছে ডিজেল। এদিন ডিজেলের দাম ছিল ১০০ টাকা ১৪ পয়সা। অন্যদিকে, পেট্রল প্রায় ১০৯ টাকা ছুঁইছুঁই। জ্বালানি তেলের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির নিছকই ‘দর্শক’ ক্রেতারা। নিত্যদিনের বাজার দোকানের মতো পেট্রল-ডিজেল কিনতেও রীতিমতো বাজেট করে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন গ্রাহকরা। বাইক বা গাড়ির ‘ট্যাঙ্ক-ফুল’ করার পথে হাঁটছেন না কেউই। অর্থাৎ, লিটারের হিসেবে তেল ভরাতে সামর্থ্যে কুলোচ্ছে না ক্রেতাদের। প্রতিদিনের পথ চলাচলের হিসেব কষে জ্বালানি খরচের বাজেট করছেন ক্রেতারা।
অংশুমান দাশগুপ্ত নামে এক বাইক চালক জানিয়েছেন, আগে প্রতিদিন যাদবপুর থেকে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত বাইকে করে অফিস যেতেন তিনি। তবে মাস দুয়েক ধরে সেই অভ্যাস ছাড়তে হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, যে টাকা মাইনে পাই, তা দিয়ে সংসার চালিয়ে বাইক চড়া আর সম্ভব হচ্ছে না। অফিস যেতে খুব দেরি না হয়ে গেলে বাইক বের করা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। ঢাকুরিয়া এলাকায় একটি পাম্পে তিনি এদিন ৮৫ টাকার তেল ভরালেন। এমন অদ্ভুত টাকার পেট্রল কিনলেন কেন? প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন, বাড়িতে ক্যালকুলেটর নিয়ে বাইকের মাইলেজ আর অফিস পর্যন্ত দূরত্ব ট্যালি করে দেখেছি। প্রায় ২৪ কিলোমিটারের যাত্রাপথ। ৮৫ টাকার তেলে গাড়ি চালালে বাড়িতে ফেরত আসার পরও কিছুটা বাঁচবে।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে গ্রাহকরা যথেষ্ট হিসেবি হয়ে গিয়েছেন। চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পাম্প মালিকদের কপালেও। লাভ তো দূর অস্ত, কোম্পানি থেকে কমিশন জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। পাম্প মালিকরা জানাচ্ছেন, বিক্রি হওয়া তেলের পরিমাণের ওপর তাঁদের কমিশন ঠিক হয়। তবে টাকার মাপকাঠিতে পেট্রল-ডিজেল কিনছেন গ্রাহকরা। তাই তেল বিক্রির দৈনিক পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে ব্যবসা ধাক্কা খাচ্ছে বলেই মত পাম্প মালিকদের। মধ্য কলকাতার এক পাম্প মালিক কাঞ্চন দাঁ বলেন, আগে প্রতিদিন সকাল আটটা নাগাদ তেল নেওয়ার জন্য বাস-ট্যাক্সির লাইন লেগে যেত। এখন অনেকেই ৩-৪ দিন অন্তর তেল ভরছেন। অর্থাৎ, গাড়ি আগের তুলনায় অনেক কম চলছে। বাসের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট রুটে প্রায় অর্ধেক গাড়ি চলছে। ‘সৌজন্যে’ তেলের সেঞ্চুরি। -নিজস্ব চিত্র