সায়ন্ত ভট্টাচার্য, হরিণঘাটা: কাজ চলছিল জোরকদমে। কিন্তু কোভিডের ধাক্কায় একেবারেই থমকে গিয়েছে ফ্লিপকার্টের এরাজ্যের প্রথম লজিস্টিক্স হাবের কাজ। ফের কবে কাজ শুরু হবে সেই আশায় দিন গুনছেন হরিণঘাটার বাসিন্দারা। তাঁদের আশা, যত দ্রুত এই হাবের কাজ শেষ হয়ে যাবে তত দ্রুত হবে কর্মসংস্থানও। শুধু প্রত্যক্ষভাবেই নয়, এই হাবকে কেন্দ্র করেই অনুসারী শিল্পও হবে। সেখানেও বহু মানুষ কাজ পাবেন। হরিণঘাটার বিডিও কৃষ্ণগোপাল ধাড়া বলেন, কোভিডের জন্য যদি কাজ না থমকে থাকত, তাহলে এতদিনে তা প্রায় শেষের মুখে থাকত। ইতিমধ্যেই ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। আমার সঙ্গে হাব তৈরির দায়িত্বে থাকা সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলেছে, কোভিড পরিস্থিতি একটু ঠিক হলেই বাকি কাজ শেষ করে ফেলা হবে। কারণ, ফ্লিপকার্টের কর্তারাও চাইছেন, দ্রুত এই হাব শুরু করতে। হরিণঘাটার বিধায়ক নীলিমা নাগ বললেন, মানুষ তো আশাবাদী হবেনই। কারণ, তাঁদের এলাকায় এত বড় সংস্থা নিজস্ব পণ্য পরিবহণ কেন্দ্র তৈরি করছে। আমিও চাই দ্রুত এই হাব নিজের কাজ শুরু করুক।
২০১৮ সালের শেষে রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন নিগমের বৈঠকে ফ্লিপকার্টকে হরিণঘাটায় প্রায় ১০০ একর জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একর প্রতি দাম ছিল ৬৩.৪৯ লক্ষ টাকা। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, হরিণঘাটায় কেন্দ্রটি গড়তে ফ্লিপকার্ট লগ্নি করছে প্রায় ৯৫১ কোটি টাকা। কাজ পাওয়ার কথা রয়েছে ১৮,৩১০ জনের কাছাকাছি। সেই সময় স্থির হয়েছিল, লগ্নি প্রক্রিয়া দেড় বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ২০২০ সালের শেষের দিকে পণ্য পরিবহণ কেন্দ্র নিজের কাজ শুরু করে দেবে। শিল্পোন্নয়ন নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি বাছার ক্ষেত্রে সড়ক ও রেল যোগাযোগের উপর জোর দিয়েছিল ফ্লিপকার্ট। শিল্প দপ্তর তাদের খড়্গপুর, পানাগড় ও হরিণঘাটা শিল্পতালুকে জমি দেখায়। তারা হরিণঘাটাকেই পছন্দ করে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, হাবে যন্ত্রচালিত গুদামে জিনিস বাছাই ও প্যাকেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় ফ্লিপকার্ট। সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে পূর্ব ও উত্তর পূর্বের বিভিন্ন জায়গায় তাদের পণ্য পৌঁছে যাবে। প্রাথমিকভাবে সংস্থাটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কেন্দ্রটি হবে ৪০ লক্ষ বর্গফুটের। প্রথম ধাপে হবে ১৫ লক্ষ বর্গফুট জায়গা।
বুধবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মাণকাজ হয়েছে। তবে এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা বলেন, সিঙ্গুর থেকে ন্যানো গাড়ির প্রকল্প চলে গিয়েছিল। আমাদের এখানে আবার বড় শিল্প হচ্ছে। ভয় পাই, যদি এটাও চলে যায়। এলাকার বেশ কয়েকজন যুবক বললেন, আমাদের ওই সংস্থায় কাজ হবে বলে সরকারি দপ্তরের আধিকারিক থেকে নেতারা জানিয়ে গিয়েছেন। তাই আমরা আশাবাদী। বাড়ির সামনে এত বড় সংস্থায় কাজ হলে আমরা বেঁচে যাব।কয়েক দশক আগে হরিণঘাটায় তৈরি হয়েছিল বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। পরে এই এলাকাতেই বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক স্তরের পড়াশোনার জন্য ক্যাম্পাস খোলা হয়। তৈরি হয়েছে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য আইসার, পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। হরিণঘাটা পুরসভাও তৈরি হয়েছে। সবমিলিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে এবং শিল্পগত পরিকাঠামো তৈরির অন্যতম বড় ক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও উচ্ছ্বসিত হয়ে রয়েছেন নিমতলা-কাষ্ঠডাঙার বাসিন্দারা। বিশ্বমানের হাব নিয়ে তাঁরা এখন স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছেন।  নিজস্ব চিত্র