জীবানন্দ বসু, কলকাতা: গত এক বছরে দেশের কম আয়ের শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ইএসআই কর্পোরেশন। এর আয় ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি কমেছে। মালিক ও কর্মচারী উভয়েই বাধ্যতামূলকভাবে যে টাকা জমা দেন, তার পরিমাণ কমে যাওয়াকেই এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কর্তৃপক্ষ। গত বছর জুলাই মাস থেকে উভয়পক্ষের টাকা জমা দেওয়ার হার বা রেট কর্মীদের আয়ের ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তাই এই বিষয়ে মোদি সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তের দিকেই আঙুল উঠেছে। আয়-ব্যয়ের এই ছবি সামনে আসতেই দেখা গিয়েছে, এক ধাপে সংস্থার বাৎসরিক উদ্বৃত্ত অন্তত ৭ হাজার কোটি টাকা কমেছে। বিগত আর্থিক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসেবে সিলমোহর দেওয়ার জন্য গত ৬ তারিখ নিগমের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকেই কর্তৃপক্ষের তরফে পেশ করা হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গত আর্থিক বছরে সংস্থার মোট রাজস্ব আদায় বা আয় হয়েছে ২২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। এই বছরে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। তার আগের বছর (২০১৮-’১৯) সংস্থার কোষাগারে মোট আয় হিসেবে জমা পড়েছিল ২৭ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। এমনকী, ২০১৭-’১৮ সালে আয় হয়েছিল ২৩ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। কিন্তু গতবারের নিরিখে আয়ের রেখচিত্র নেমেছে ৫ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। ইএসআই সূত্র জানাচ্ছে, কোষাগারে জমা পড়া টাকার পরিমাণ কমলেও এই এক বছরে কিন্তু সংস্থার খরচ প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। বিমাকৃত কর্মী-সংখ্যার পাশাপাশি চিকিৎসা এবং অন্যান্য খাতে খরচ বৃদ্ধিই এর কারণ।
সংস্থা সূত্রের খবর, বর্তমানে বিমাকৃত কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। আর তাঁদের পরিবারের সদস্যদের যোগ করলে সংখ্যাটি দাঁড়াবে ১৩ কোটিরও বেশি। কর্মী ও মালিকদের তরফে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি মাসে জমা দেওয়া অর্থই সংস্থার অন্যতম আয়ের উৎস। এছাড়া আয়-ব্যয়ের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি বন্ডসহ বিভিন্ন খাতে খাটিয়ে সুদ ও ডিভিডেন্ড বাবদ রোজগারের রাস্তাও রয়েছে সংস্থার। হিসেব বলছে, এই খাতে কিন্তু গত আর্থিক বছরে সংস্থার আয় মোটেও কমেনি। এই বছরে সুদ, ডিভিডেন্ড ও বিবিধ খাতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা আয় বেশি হয়েছে। কিন্তু সেই বৃদ্ধি কর্তৃপক্ষের চিন্তা কমাতে পারেনি। কারণ, মূল উৎস তথা কর্মী-মালিকদের তরফে জমা পড়া অঙ্ক কমেছে তার তুলনায় ঢের বেশি। এজন্য এই খাতে সরকারের তরফে মোট হার কমিয়ে দেওয়াই প্রধান কারণ। গত বছর জুন মাস পর্যন্ত এই খাতে মোট হার ছিল কর্মীদের আয়ের ৬.৫ শতাংশ। কিন্তু জুলাই থেকে তা কমিয়ে করা হয় ৪ শতাংশ। তার মধ্যে কর্মীদের দেয় হচ্ছে মাত্র ০.৭৫ শতাংশ। বাকি ৩.২৫ শতাংশ জমা করে মালিকপক্ষ।