নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: নরেন্দ্র মোদিকে বন্ধু আখ্যা দিলেও ভারতের জন্য শুল্ক আরোপে কোনও আপস করলেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। হুঁশিয়ারিই বাস্তবায়িত হল। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম মার্কিন কংগ্রেস অধিবেশনের ভাষণ। আর তাতেই ভারতকে আক্রমণ করলেন ট্রাম্প—‘ভারত প্রচুর বেশি শুল্ক নিচ্ছে আমাদের পণ্যে। অত্যন্ত অনুচিত।’ বুধবারই নির্ধারিত করে দিলেন তারিখ। যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে জানালেন, ২ এপ্রিল থেকে ভারতের উপরও চাপানো হল পাল্টা আমদানি শুল্ক। অর্থাৎ, মার্কিন পণ্যের উপর ভারত যে আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে, পাল্টা ভারতীয় পণ্যের উপর ঠিক সেই শুল্কই বলবৎ করা হল। ঘটনাচক্রে ট্রাম্পের এই বাণিজ্য-যুদ্ধ ঘোষণার দিনই আমেরিকায় বসে আছেন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। বস্তুত সব কাজ ফেলে সোমবার তিনি আমেরিকায় গিয়েছিলেন মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করতে। এই বৈঠকে হওয়া সিদ্ধান্ত অথবা কোনও সম্ভাব্য সমঝোতা সূত্রের জন্য ট্রাম্প অপেক্ষাই করলেন না। একতরফা এল প্রত্যাঘাতের ঘোষণা। ট্রাম্পের টার্গেট তালিকায় চীন, ভারত, মেক্সিকো, কানাডা, ব্রাজিল, ইউরোপ। বললেন, এই দেশগুলি তো বটেই, আরও অসংখ্য রাষ্ট্র আমাদের উপর চড়া হারে শুল্ক আরোপ করে চলেছে। বিশেষত ভারতের উদ্দেশে ট্রাম্পের বক্তব্য, ‘ভারত তো অটোমোবাইলে আমাদের তুলনায় ১০০ শতাংশ বেশি শুল্ক আরোপ করেছে। এ একেবারেই অনুচিত। সুতরাং আমি চাইছিলাম ১ এপ্রিল থেকেই এই পাল্টা শুল্ক চাপাতে। কিন্তু সেটা যাতে এপ্রিল ফুল না হয়ে যায়, সেটা নিশ্চিত করতে ২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হচ্ছে।’
আর্থিক ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির হিসেব অনুযায়ী, আমেরিকার পাল্টা শুল্ক চাপানোর ফলে ৭০০ থেকে ৯০০ কোটি ডলার লোকসান হতে চলেছে ভারতীয় রপ্তানি বাণিজ্যের। ভারত থেকে আমেরিকায় সবথেকে বেশি রপ্তানি হয়, ধাতু, গয়না, রাসায়নিক, ওষুধ, গাড়ির যন্ত্রাংশ, উপকরণ, সরঞ্জাম, ইস্পাত এবং পেট্রোকেমিক্যালস। ভারত থেকে বছরে আমেরিকায় পণ্য রপ্তানির পরিমাণ গড়ে ৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। পক্ষান্তরে আমেরিকা ভারতে যে পণ্য রপ্তানি করে, তার বার্ষিক অঙ্ক ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার। আমেরিকার তুলনায় কমবেশি ভারতের আমদানি শুল্ক ৮ থেকে ১১ শতাংশ বেশি। ভারত যে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা করে একটা সমঝোতায় আসতে চাইছে, সেই আভাস ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। এমনকী বুরবঁ হুইস্কি এবং হাই প্রোফাইল মার্কিন মোটর সাইকেলের উপর আমদানি শুল্ক ইতিমধ্যে কমিয়েও দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য? বার্তা দেওয়া যে, ভারত ইতিবাচক মীমাংসায় আগ্রহী। কিন্তু টিম-ট্রাম্প স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে, তারা সম্পূর্ণ নতুন বাণিজ্য-বিশ্ব চায়। সেখানে আমেরিকা হবে নীতি নির্ধারক ও চালিকাশক্তি। তাদের নীতিরই সমর্থক হতে হবে অন্যদের। কানাডা, মেক্সিকো, চীন, ইউরোপ জানিয়েছে, তারা এই শর্তে নারাজ। পাল্টা শুল্ক চাপিয়ে প্রত্যাঘাত করেছে তারা। এখন দেখার, মোদি তাঁর অনমনীয় বন্ধু ট্রাম্পকে কী বার্তা দেন।