নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: খাঁচার চারপাশে বাঘিনীর মূত্র ছড়িয়ে বাঘকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন বনকর্তারা। তার আকর্ষণে খাঁচার পাশে এলেও টোপ গিলল না রয়্যাল বেঙ্গল। শুধু তাই নয়, জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে বাঘকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল এদিন তাও কার্যত মাঠে মারা গেল। তাড়া খেয়েও ঘুরেফিরে বাঘ এসে পৌঁছল সেই ভাঁড়ারিয়ার জঙ্গলেই। জিনাতের পুরাতন আস্তানায়। বনকর্তাদের কৌতূহল, ভাঁড়ারিয়ায় কী এমন আছে যে গত এক সপ্তাহ ধরে বাঘ এই জঙ্গল ছেড়ে যাওয়ার নামই নিচ্ছে না?
গত এক সপ্তাহ ধরে ‘বাঘবন্দি’ করতে বহু পরিকল্পনাই নিয়েছে বনদপ্তর। কিন্তু, সব কিছুকেই ব্যর্থ করে দিচ্ছে রয়্যাল বেঙ্গল। শনিবার শুরু হয়েছিল ৪৮ঘণ্টার অভিযান। স্থানীয় বাসিন্দা, বনকর্মী থেকে শুরু করে আধিকারিকরা মিলিয়ে প্রায় ৪০০জন ১৪টি দলের ভাগ হয়ে জঙ্গলে অভিযান শুরু করেন। সারাদিনের অভিযানেও মেলেনি বাঘের দেখা। শনিবার রাতে বাঘকে খাঁচাবন্দি করতে প্রায় ছ’টি খাঁচা পাতা হয়। খাঁচায় দেওয়া হয় ছাগলের টোপ। খাঁচার ধারে ছিটানো হয় চিড়িয়াখানা থেকে নিয়ে আসা বাঘিনীর মূত্র। কিন্তু, তাতেও ফাঁদে পা দেয়নি ধুরন্ধর এই বাঘ। শুধুমাত্র গন্ধ শুঁকেই খাঁচার গা ঘেঁষে বেরিয়ে যায় সে। যেন এসবে তার কোনও ভ্রূক্ষেপই নেই! ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ে বাঘের ছবি।
তবে, বাঘ ভাঁড়ারিয়াতেই রয়েছে এব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মতো রবিবার ফের অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে বনদপ্তরের কর্তারা। দুপুর প্রায় পৌনে ১২টা থেকে ১৫০জন মিলে শুরু হয় অভিযান। বাঘ তাড়াতে ফাটানো হয় পটকা। তাতে বাঘের দর্শনও মেলে কয়েকবার। কয়েক কিলোমিটার তাড়া খেয়ে পারগোড়ার কাছ পর্যন্ত পৌঁছয় বাঘটি। এত পটকা, মানুষ দেখে বাঘ রেগে গিয়ে গর্জনও করে ওঠে। তারপর সেখান থেকে হঠাৎ করেই ইউটার্ন নিয়ে ভাঁড়ারিয়ার জঙ্গলেই পালিয়ে আসে সে। রবিবারের মতো বন্ধ হয় বাঘবন্দি অভিযান। তবে বনকর্তাদের সন্দেহ, কেন বারবার ভাঁড়ারিয়াতেই ফিরে আসছে ডোরাকাটা? শুধুই কি জিনাতের গন্ধে? নাকি অন্য কিছু, যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বনদপ্তরের কর্তাদের।
কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও পূরবী মাহাত বলেন, ‘এটাকে ঠিক অভিযান বলব না, বাঘকে স্থানান্তরিত করার চেষ্টা আমরা করছি। কিন্তু ঘুরেফিরে সে ভাঁড়ারিয়া, রাইকার জঙ্গলেই ফিরে আসছে। একই জঙ্গলে একটি বাঘ এতদিন ধরে থাকছে, এটা তো অবশ্যই চিন্তার। তবে, বাঘকে ধরার সবরকম চেষ্টাই আমরা করছি।’
বনদপ্তরের একটি সূত্রের খবর, এদিন বাঘটিকে জঙ্গল পথে ঝাড়খণ্ডের দিকে পাঠানোর পরিকল্পনা নেন আধিকারিকরা। কিন্তু, তা সম্ভবপর না হওয়ায় রবিবার রাতে বাঘটিকে ট্রাঙ্কুলাইজ করার জন্য নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বনদপ্তর সূত্রের খবর, এদিন বিকেল থেকে জঙ্গলে খাঁচার অদূরে মাচা বাঁধার কাজ শুরু হয়। সেই মাচার উপরে থাকবেন শ্যুটাররা। বাঘ আশেপাশে এলেই ঘুমপাড়ানি গুলি করা হবে। তবে প্রশ্ন উঠছে, এই পরিকল্পনা সফল হবে তো? জিনাতের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল, ঘুমপাড়ানি গুলি খেয়েও তা দাঁতে করে গা থেকে উপরে ফেলেছিল সে। ঘুমপাড়ানি গুলি করার পর জিনাতকে যখন ধরতে যাবেন বনকর্তারা, তখনই সে জেগে ওঠে। তাছাড়া, ঘুমপাড়ানি গুলি ঠিকমতো বাঘের গায়ে লাগলেও জোরে দৌড়াতে শুরু করে। তখন যদি সে লুকিয়ে যায়, তাহলে মুশকিল। বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, আমরা যেভাবেই হোক বাঘকে সুস্থ উদ্ধার করার চেষ্টা করছি।
ক্যামেরায় ধরা পড়া বাঘের ছবি।