নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: এতদিন তার অস্তিত্ব নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন। অনেকেই বলছিলেন, বাঘ নয়, বাঘের গুজব! মঙ্গলবার জিনাতের স্টাইলেই শিকার করে নিজের অস্তিত্বের জানান দিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বনদপ্তরের কর্তাদের দাবি, সঙ্গিনীর খোঁজ পেতে সে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ঠিক যে পথ ধরে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থেকে বোরোর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করেছিল জিনাত, সেই পথ ধরেই সে এগচ্ছে।
গত ডিসেম্বরের শেষেই বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়, ভাঁড়ারিয়া পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছিল জিনাত। ভাঁড়ারিয়ার জঙ্গলেই শিকার করেছিল সে। পাহাড়ের উপর থেকে উদ্ধার হয়েছিল বহু আধ খাওয়া, মৃত ছাগল। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি! শনিবার ভাঁড়ারিয়ার অদূরে গঙ্গামান্নার কুড়িয়াপাড়ার জঙ্গল থেকেও উদ্ধার হল একের পর এক মৃত ছাগল। এই কীর্তি যে বাঘেরই, তা একপ্রকার নিশ্চিত বনদপ্তরের আধিকারিকরা। কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাত বলেন, ‘এদিন বিকেল থেকেই জঙ্গল থেকে একের পর এক মৃত ছাগল উদ্ধার হতে থাকে। প্রায় ন’-১০টা মৃত ছাগল উদ্ধার হয়েছে। বহু ছাগল নিখোঁজ হয়েছে। জঙ্গলে মৃত ছাগল রয়েছে কি না, তার খোঁজ চলছে।’ তাঁর সংযোজন, ‘ছাগলের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বাসিন্দাদের অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেব। বাঘকে বাগে আনার সবরকম চেষ্টা শুরু হয়েছে।’
বনদপ্তর সূত্রের খবর, জিনাতকে ধরে যাঁরা কিছুদিন আগেই বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন, সেই সুন্দরবনের টিমের সদস্যরা মঙ্গলবার সকালেই বান্দোয়ানে এসে হাজির হয়েছেন। বাঘকে কীভাবে বাগে আনা যায়, তার সবরকম পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। তবে, জিনাতের রেডিও কলার থাকায় তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া অনেক সহজ হয়েছিল। কিন্তু, এই বাঘের তা নেই। ফলে, এদিন বেগও পেতে হয়েছে বনদপ্তরের কর্তাদের। এদিন দুপুরে ভাঁড়ারিয়ার রাহামদার কাছে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে জাল পাতার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বনকর্মীরা। কিন্তু, পরক্ষণেই খবর আসে বাঘ গঙ্গামান্নায় শিকার করেছে। বনদপ্তরের কর্তারা জানিয়েছেন, বাঘকে ধরতে এদিন ওই এলাকার জঙ্গলে মোট তিনটি খাঁচা পাতা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে ছাগলের টোপ। জঙ্গলে লাগানো হয়েছে ট্র্যাপ ক্যামেরা। সেইসঙ্গে বাঘকে ঘুম পাড়ানি গুলিতে কাবু করতে থাকছে সুন্দরবনের শার্প শ্যুটার। জাল সঙ্গে নিয়েই ঘুরছেন বনকর্মীরা। প্রয়োজন মতো পাতা হবে। এর আগেও জিনাতকে ধরতে এই সমস্ত চেষ্টাই করেছিলেন বনদপ্তরের কর্তারা। কিন্তু, বনদপ্তরের পাতা ফাঁদে পা দেয়নি জিনাত। সেক্ষেত্রে এই বাঘ আদৌ টোপ গিলবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এক বনকর্তা বলেন, রেডিও কলার থাকা সত্ত্বেও জিনাত কার্যত নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছিল, এই বাঘের তো তা নেই। তাই কতদিন যে ভোগাবে তাই ভাবছি।
প্রসঙ্গত, রবিবার ভাঁড়ারিয়া পাহাড়ের কাছে যমুনাগোড়া এলাকায় নরম মাটিতে পায়ের ছাপ মিলেছিল। সোমবার একই ধরনের ছাপ মেলে লাউপাল, উদলবনী গ্রাম সংলগ্ন ধান জমির আলে। মঙ্গলবার সকালে বোরোরনেকড়া, বেলডুংড়ির একাধিক এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়। তারপর ফের এদিন দুপুরে বাঘের শিকারের খবরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। বাসিন্দাদের কৌতুহল, কেন জিনাতের পথই ব্যবহার করছে এই বাঘ? এক বনকর্তা বলেন, বাঘের প্রজননের সময় সাধারণত শীতকালই! ১০০ কিলোমিটার দূর থেকেও বাঘিনীদের শরীর থেকে নির্গত রাসায়নিকের গন্ধ পায় পুরুষ বাঘ! সম্ভাব্য সঙ্গিনীর সন্ধানে এরপর শুরু হয় তার কামোন্মত্ত অভিসার। সঙ্গমের তীব্র বাসনার কারণেই সঙ্গিনীর খোঁজ পেতেই জিনাত ‘গড়ে’ হাজির এই পুরুষ বাঘ। বাঘ ধরতে খাঁচা বসানো হচ্ছে। -নিজস্ব চিত্র