মেলবোর্ন: প্রায় ৮৭ হাজার দর্শক সকাল সকাল ভিড় জমিয়েছেন এমসিজ’র গ্যালারিতে। তাঁদের লক্ষ্য একটাই, চতুর্থ টেস্টে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ধন্ধুমার ক্রিকেটের উত্তেজনা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা। বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিনে দর্শকদের প্রত্যাশা অনেকটাই পূর্ণ। বড়দিনের উৎসবের রেশ বজায় রাখলেন অজি ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে ১৯ বছর বয়সি স্যাম কনস্টাসের সাহসী ব্যাটিং মুগ্ধ করল ক্রিকেট মহলকে। অভিষেকেই ৬৫ বলে তাঁর ঝোড়ো ৬০ রানের ইনিংস নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। অনেকেরই মনে হতে পারে, এ আর এমনকী! এমন উদাহরণ রয়েছে ভুরিভুরি। কিন্তু কনস্টাসের ৯৫ মিনিটের ব্যাটিংয়ের প্রথম কিছুটা অংশ বাদ দিলে বাকি সময় চোখ সরানো যায়নি। অজি ক্রিকেট ঘরানার যোগ্য উত্তরসূরি। স্বভাবে শান্ত, কিন্তু আগ্রাসী ব্যাটিংই তাঁর ইউএসপি। না হলে শুরুতে একটু সমঝে নিয়ে বিশ্বের সেরা বোলার বুমরাহকে দাপটের সঙ্গে শাসন করতে পারেন!
ম্যাচ শুরুর আগে কনস্টাসকে নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছিল। আসলে গত তিনটি টেস্টে ওপেনার হিসেবে ম্যাকসুইনি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত কনস্টাসকে বেছে নিয়েছিলেন কামিন্সরা। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল, শুরুতেই বুমরাহকে পাল্টা আক্রমণে ভোঁতা করে দেওয়া। সেই কাজটা সহজেই করলেন কনস্টাস। বলা ভালো, বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিনের অঘোষিত নায়ক তিনিই। বুমরাহর বিরুদ্ধে সফল। ঝাঁঝালো সূচনা। দলকে নির্ভরতা জোগানো। একেবারে কমপ্লিট প্যাকেজ।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে একটা সময় অস্ট্রেলিয়া বিনা উইকেটে পৌঁছে যায় ৮৯ রানে। ভারত যে চাপে পড়ছে, তা বোঝা যাচ্ছিল রোহিতদের শরীরী ভাষায়। ঠিক তখনই বিতর্কে জড়ালেন বিরাট কোহলি। পিচের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে ধাক্কা লাগে কনস্টাসের। পরিস্থিতি হয়ে ওঠে উত্তপ্ত। সামাল দিতে এগিয়ে আসেন আম্পায়ার ও উসমান খাওয়াজা। তবে এই ঘটনা আরও তাতিয়ে দেয় তরুণ তুর্কিকে। বুমরাহর বল ‘র্যাম্প শটে’ পাঠালেন বাউন্ডারির বাইরে। কখনও হাতিয়ার করলেন সুইপ ও স্কুপ শটকে। বুমরাহর বলে ‘রিভার্স স্কুপে’ হাঁকালেন ছক্কা, যা দেখে স্তম্ভিত ভারতীয় তারকাও। করতালিতে ফেটে পড়ছিল গ্যালারি। ব্যাগি গ্রিন ক্যাপে অজি শিবিরে যেন সান্তা হয়ে হাজির কনস্টাস। হাফ-সেঞ্চুরির পর তিনি গ্যালারিকে চিৎকার করার জন্য অনুরোধ জানান। তখনই বোঝা যাচ্ছিল, এ ছেলে লম্বা রেসের ঘোড়া। ব্র্যাডম্যানদের যথার্থ উত্তরসূরি।
শেষ পর্যন্ত জাদেজার বলে ৬০ রানে আউট হন কনস্টাস। তবে বড় রানের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন তিনিই। তারপর অর্ধশতরান হাঁকান উসমান খাওয়াজা (৫৭), মার্নাস লাবুশানে (৭২) এবং স্টিভ স্মিথ। দিনের শেষে অজি ব্রিগেড তুলেছে ৬ উইকেটে ৩১১। স্মিথ ৬৮ ও কামিন্স ৮ রানে ক্রিজে। উইকেটে কোনও জুজু নেই। একটু ধরে খেললে রানের পাহাড়ে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সামনে। সেক্ষেত্রে চাপ বাড়বে টিম ইন্ডিয়ার উপর।
প্রথম দু’টি সেশন যদি হয় অজিদের, তাহলে অন্তিম সেশনে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করেছে ভারত। সৌজন্যে সেই বুমরাহ। প্রথম দিকে প্রচুর রান দেন তিনি। ভুল শুধরে শেষবেলায় আঘাত হানেন বিপক্ষের ইনিংসে। পর পর ফেরান মিচেল মার্শ (৪) ও ট্রাভিস হেডকে (০)। দিনের শেষে ৭৫ রানের বিনিময়ে বুমবুম ঝুলিতে পুরেছেন ৩ উইকেট। বাকি তিনটি উইকেট পান আকাশ দীপ, রবীন্দ্র জাদেজা ও শুভমান গিলের পরিবর্তে দলে আসা ওয়াশিংটন সুন্দর।
স্কোরবোর্ড: অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস- কনস্টাস এলবিডব্লু বো জাদেজা ৬০, খাওয়াজা ক রাহুল বো বুমরাহ ৫৭, লাবুশানে ক কোহলি বো সুন্দর ৭২, স্মিথ ব্যাটিং ৬৮, হেড বো বুমরাহ ০, মার্শ ক পন্থ বো বুমরাহ ৪, কেরি ক পন্থ বো আকাশ ৩১, কামিন্স ব্যাটিং ৮, অতিরিক্ত ১১, মোট ৩১১-৬ (৮৬ ওভারে)। উইকেট পতন: ১-৮৯, ২-১৫৪, ৩-২৩৭, ৪-২৪০, ৫-২৪৬, ৬-২৯৯। বোলিং: বুমরাহ ২১-৭-৭৫-৩, সিরাজ ১৫-২-৬৯-০, আকাশ ১৯-৫-৫৯-১, জাদেজা ১৪-২-৫৪-১, নীতীশ ৫-০-১০-০, সুন্দর ১২-২-৩৭-১।