কাপড়ের ব্যবসায় অগ্রগতি। পেশাদার শিল্পীদের পক্ষে দিনটি শুভ। উচ্চ/উচ্চতর শিক্ষায় উন্নতি। ... বিশদ
ভট্টাচার্য বাড়ির প্রবীণ সদস্য দেবনারায়ণ ভট্টাচার্য শোনালেন পুজোর কাহিনি। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ছ’শো বছর আগেকার কথা। ফি বছর বন্যায় ভেসে যেত গ্রাম। গ্রামকে রক্ষা করার জন্য কেতুগ্রামের ১ ব্লকের খাটুন্দি গ্রামকে উঁচু এলাকায় নতুন করে প্রতিষ্ঠা করেন রামলাল ভট্টাচার্য। গ্রামে শুরু হয় দুর্গাপুজো। পরে পাণ্ডুগ্রামের শুদ্রদের দুর্গাপুজো করেছিলেন বলেই ব্রাহ্মণ সমাজ থেকে বহিষ্কৃত করা হয় কেশব ভারতীর বাবা মাধব ভট্টাচার্যকে। তারপর থেকেই এই পুজোর হাল ধরেছিলেন ভট্টাচার্য পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য বিপ্রদেব ভট্টাচার্য। প্রায় একশো বছর আগে শরিকি বিবাদে ওই পুজো সাত ভাগে ভাগ হয়ে এখন একই উঠানে পুজো পায়। ভট্টাচার্য বাড়ির বংশধরেরা পৃথকভাবে প্রতিমা এনে একই উঠোনে সাতটি পুজো করেন। যদিও এখন এক শরিক কাটোয়া শহরে এসে আলাদাভাবে পুজো করে।
এখনও নিয়ম মেনে কেশব ভারতীর প্রতিষ্ঠিত কৃষ্ণরায়ের পুজো করার পরেই ভট্টাচার্য বাড়ির সাত দুর্গার পুজো শুরু হয়। মহালয়ার প্রতিপদ থেকেই এই পুজো শুরু হয়েছে। পুজোর নানা রীতি আছে। অন্যতম বৈশিষ্ট্য অষ্টমী তিথিতে বলিদান হয় যা শাস্ত্রমতে বিরল। মন্দিরের প্রবেশ পথের মুখেই তোরণে কেশব ভারতীর প্রতিষ্ঠিত কৃষ্ণরায়ের কথা উল্লেখ আছে। এই পুজোকে ঘিরে পাণ্ডুগ্রাম পালিটা কান্দরা, কোমরপুর, নিরল সহ বীরভুমের বহু মানুষ আসেন। অনেকেই বলেন, কাটোয়া মহকুমা এলাকায় প্রাচীন দুর্গাপুজো এটি। খাটুন্দির রামলাল ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো খুবই ব্যতিক্রমী। শাস্ত্রীয় মতে অষ্টমী তিথিতে বলিদান হলে বংশ নাশ হয়। পণ্ডিত রামলাল ভট্টাচার্য শাস্ত্রের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করেই অষ্টমী তিথিতেই বলিদান চালু করেন। সেই পরম্পরা আজও চলে আসছে।
এই বাড়ির সদস্য দেবনারায়ণ ভট্টাচার্য বলেন, ঠাকুর দালানে প্রতিমা বসানো থেকে বিসর্জন পর্যন্ত নানা রীতি আছে। প্রাচীন পুঁথি দেখেই চতুর্থীর দিন দুপুর থেকে বড় থেকে ছোট অনুপাতে মন্দিরে প্রতিমাকে প্রবেশ করানো হয়। তারপর পুজো শুরুর সময়েও বড় থেকে ছোট অনুযায়ী হয়। আর সেটা প্রত্যেকের মতামত নিয়েই হয়। শুধু তাই নয়, প্রত্যেক প্রতিমা পিছু একটি করে সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত শাক্তমতেই ছাগ বলি দেওয়ার রেওয়াজ আছে। তারপর দেবীকে মাছ ও মাংসের ভোগ নিবেদন করা হয়। এই পুজোর ঘট আনার সময়েও বয়সে বাড়ির বড় সদস্যের প্রথমে এবং তার পিছনে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের ঘট আনার জন্য শোভাযাত্রা করে পুকুরে যাওয়া হয়। বাড়ির সদস্যদের বিশ্বাস, সেই সময় আকাশে শঙ্খচিল ওড়ে। প্রত্যেক প্রতিমাতেই পাঁচটি করে ঘট বসানোর রেওয়াজ আছে। পুজোর চারদিন ভিনরাজ্য থেকে ভট্টাচার্য বাড়ির সদস্যরা বাড়িতে একজায়গায় হন।