সৌমিত্র দাস, কাঁথি: কোথাও মণ্ডপে উঠে এসেছে ধ্যানস্থ শিব। কোথাও মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণীত ‘বর্ণপরিচয়’। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে বাঁশের অসাধারণ কারুকার্য ও আলোর মেলবন্ধন। কোথাও আবার পুজোয় মহিলারাই ‘অল ইন অল’। এগরা শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টির বেশি সর্বজনীন পুজো হয়। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্লাবের বাহারি থিম, মণ্ডপসজ্জা ও দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা দর্শনার্থীদের নজর কেড়ে নেয়। এবারও তার অন্যথা হয়নি। প্রতিটি ক্লাবই পুজো উপলক্ষ্যে একগুচ্ছ সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মসূচি ও ভিন্নস্বাদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এগরা শহরে সর্বজনীন পুজোর পাশাপাশি একাধিক বাড়ির পুজোও রয়েছে। দীঘা মোড়ে মাইতি পরিবারের শতবর্ষে পদার্পণ করা চতুর্ভুজা দুর্গা কিংবা অলুয়াঁর মহাপাত্র বাড়ির দেড় শতাধিক বছরের প্রাচীন পুজোর ঐতিহ্য অমলিন। শহরের হটনাগর মন্দির সংলগ্ন এগরা ফ্রেন্ডস ইউনাইটেড ক্লাবের দশম বর্ষের পুজোয় এবারের থিম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন হয়। ‘বর্ণপরিচয়’-এর পুস্তকের যেমন চিত্র রয়েছে, তেমনি অ, আ, ই, ঈ থেকে প্রতিটি অক্ষর মণ্ডপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিদ্যাসাগরের ২০৫তম জন্মবর্ষ উপলক্ষ্যে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। রাজবাড়ির গৃহবধূর বেশে হাজির হবেন মা দুর্গা। ক্লাবের সভাপতি জয়ন্ত সাউ ও সম্পাদক নবারুণ রায় বলেন, বর্তমান প্রজন্মকে বইমুখী করা, সমাজের অশিক্ষার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষকে সচেতন করতে এই থিম। থাকবে রংবাহারি আলোর কারিকুরি।  
দীঘা মোড় সর্বজনীনের পুজো ২০তম বর্ষে পা দিল। এবারের থিম ধ্যানস্থ শিব। আদি যোগীর মূর্তিকে মণ্ডপে তুলে ধরার প্রচেষ্টা করেছেন উদ্যোক্তারা। প্লাস্টার অব প্যারিস, রড সহ নানা সামগ্রী দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ব঩জ্যোতি মাইতি বলেন, বর্তমানে রাজ্য, দেশ তথা বিশ্বে যে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে শিব স্বয়ং এসে ধ্যানে বসেছেন। আর শিবের বুকের ভিতর থাকবে মা দুর্গার মূর্তি।   এগরা সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নবরূপ ক্লাবের পুজো ১৪তম বর্ষে পা দিল। কাল্পনিক মন্দিরের আদলে মণ্ডপে বাঁশের নানা কারুকার্য ফুটে উঠবে। তার সঙ্গে মণ্ডপজুড়ে থাকবে বাহারি আলোকসজ্জা। অজন্তা ভাস্কর্যের প্রতিমা। ক্লাবের সম্পাদক মিন্টু দাস বলেন, এবার বাজেট ২০ লক্ষ টাকা। পুজো উপলক্ষ্যে এক হাজার দুঃস্থ পরিবারকে মশারি, কম্বল, বস্ত্র প্রভৃতি বিতরণ করা হবে।   
দীঘা মোড়েই মহিলা পরিচালিত ‘স্বপ্ননীড়’ ক্লাবের পুজোর এবার ২০ তম বর্ষ। ক্লাবের সদস্যা সংখ্যা ২৫ জন। কর্মকর্তা কবিতা প্রধান বলেন, ১০­-১২ জন সদস্যাকে নিয়েই পুজো শুরু হয়েছিল। পুজোয় চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে প্রতিমা বিসর্জন— সব কাজই আমরা করে থাকি। পুরুষরা শুধু বাইরে থেকে সহযোগিতা করেন। এছাড়াও দীঘামোড় সংলগ্ন এগরা ১নম্বর ওয়ার্ড উৎসব কমিটি, এগরা ঝাটুলাল হাইস্কুলের হস্টেল সংলগ্ন মাঠে এগরা ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন, এগরা দীঘামোড় সংলগ্ন সমন্বয় ক্লাব, এগরা ফ্রেন্ডস রিক্রিয়েশন ক্লাব, এগরা গোল্ডেন পাস্ট, এগরা মিলনী দুর্গোৎসব কমিটি,  কসবা-এগরা দাসপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি সহ আরও বেশ কয়েকটি সর্বজনীন পুজো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।