কাপড়ের ব্যবসায় অগ্রগতি। পেশাদার শিল্পীদের পক্ষে দিনটি শুভ। উচ্চ/উচ্চতর শিক্ষায় উন্নতি। ... বিশদ
ষষ্ঠীর দিন সকালে তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি থেকে বর্গভীমা মায়ের মন্দিরে রাজবাড়ির তরোয়াল, অধিবাস সামগ্রী এবং তিনটি পাঁঠা নিয়ে যাওয়া হয়। আগে ঘোড়ার গাড়িতে পুজোর সামগ্রী যেত। এখন আর ঘোড়ার গাড়ি নেই। শোভাযাত্রা সহকারে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর দুর্গারূপে মায়ের আরাধনা পর্ব শুরু হয়। মা বর্গভীমা তমলুকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। বলা হয়, তাম্রলিপ্ত জনপদ প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠিত। অন্যতম জাগ্রত ও প্রধান শক্তিপীঠ। মেদিনীপুরের অনেক বিপ্লবী মাতৃভূমিকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য দেবীর সামনে শপথ নিতেন। মা বর্গভীমার প্রসাদ নিরামিষ হয় না। বছরে ৩৬৫ দিনই দেবীর প্রসাদে শোলমাছ বাধ্যতামূলক।
প্রাচীনকালে মহাষ্টমীর দিন বীরেরা অস্ত্রপুজো করতেন। তাই মহাষ্টমীর আরেক নাম বীরাষ্টমী। বর্গভীমা হল একটি শক্তিপীঠ। এখানেও মহাষ্টমীতেও অস্ত্রপুজো হয়। রাজ পরিবার থেকে অস্ত্র পাঠানো হয় পুজোর জন্য। তাছাড়া রাজবাড়ি থেকে তিনটি পাঁঠা দেওয়া হয়। সেগুলি সপ্তমী, সন্ধিপুজো ও নবমীতে বলি দেওয়া হয়। কথিত আছে, পূর্বে রূপনারায়ণ নদ থেকে পশ্চিমে আমগেছিয়া খাল, উত্তরে পায়রাটুঙ্গি খাল থেকে দক্ষিণে শঙ্করআড়া খাল পর্যন্ত ভৌগোলিক খণ্ডে বর্গভীমা ছাড়া আর কোনও শক্তিপুজো হতো না। পরবর্তীকালে শক্তিপুজো শুরু হলেও উদ্যোক্তারা সবার আগে বর্গভীমা দেবীর কাছে প্রথমে পুজো দিয়ে তবে অন্য পুজো শুরু করেন। সেই ট্রাডিশন আজও চলছে।
তমলুকবাসীর কাছে মা বর্গভীমা অভয়প্রদায়িনী। বন্যা, খরা, সাইক্লোন সহ যে কোনও বিপদে মা-ই রক্ষা করেন সন্তানদের। সারাবছর মায়ের মন্দিরে ভক্তের ভিড় লেগে থাকে। তবে, পুজোর সময়ে মায়ের মন্দিরে ভিড় কয়েকগুণ বাড়ে। ভক্তদের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত পুলিস, স্বেচ্ছাসেবক থাকেন। ৮৬৭০৩৪৫৬৮৮ নম্বরে ফোন করে ভোগের অর্ডার দেওয়া যায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মন্দিরের ভিতর অনর্গল মন্ত্রোচ্চারণ হয়। তারমধ্যে ‘চন্দনেন সমারব্ধে কুমকুমেন বিলোপিতে বিল্বপত্র-কৃতাবাসে ভীমায়ৈ শরণাম্যহম্’-এই পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রটি বার বার শোনা যায়। তমলুকবাসীর দৃঢ় বিশ্বাস, সুখে দুঃখে মা বর্গভীমা তাঁদের মাথার উপর আছেন।
বর্গভীমা মাতা মন্দির কমিটির সম্পাদক শিবাজী অধিকারী বলেন, দুর্গাপুজোর সময় দেবী বর্গভীমাকেই দুর্গারূপে পুজো করা হয়। এখানে আলাদা করে দুর্গামূর্তি গড়া হয় না। মহাস্নান থেকে পুজো, ভোগ সবই নির্ঘণ্ট মেনে করা হয়। এবার সকাল ৬টার মধ্যেই অষ্টমী পুজো শেষ। তাই ভোররাতেও মায়ের মন্দির খোলা থাকবে। তবে, অন্নভোগের পর রাতে নিয়ম করে মায়ের বিশ্রাম হবেই। নির্ঘণ্ট মেনে পুজোর জন্য তাড়াতাড়ি মাকে জাগিয়ে পুজো শুরু হবে। এখানে সারাদিন ধরে অঞ্জলি নেওয়া হয়। ভক্তরা যে কোনও সময়ে এসে অঞ্জলি দিতে পারবেন।
এই কয়েক দিনে দুর্গাপুজোর সব আচার যথাযথভাবে পালন করে পুজো হবে। পুজোর সময় ভক্তরা মায়ের মন্দিরে প্রচুর উপহারসামগ্রী দেন। প্রতিদিন মাকে নতুন শাড়িতে সাজানো হয়।