কর্মের উন্নতি হবে। হস্তশিল্পীদের পক্ষে সময়টা বিশেষ ভালো। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মের প্রসার। আর্থিক দিকটি অনুকূল। ... বিশদ
বাবা-মেয়ের স্নেহ-শাসন, উদ্বেগ-অভিমানের নানা স্তর নিয়ে অর্ণব তৈরি করছেন তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’। শট রেডি। ছবির প্রোটাগনিস্ট মধুরা ওরফে মৌ বাবার ব্যবহারে ক্ষুব্ধ। সে এবার সত্যি সত্যিই বিদেশ চলে যেতে চায়। ফোনে প্রেমিক পলাশকে বলে, ‘আই অ্যাম সিরিয়াস। আপাতত দিল্লি যাব ঠিক করেছি। সেখান হেড অফিসে সব কাজ সামলে বিদেশ চলে যাব।’ দূর থেকে মেয়ের এহেন মেজাজ দেখে মুষড়ে পড়েন। বাবা দীপক চক্রবর্তী। মাথা নিচু করে পাশের ঘরের দিকে দীপক এগোতেই ‘কাট’ বলে ওঠেন পরিচালক।
ছবিতে দীপকের ভূমিকায় চিরঞ্জিৎ চট্টোপাধ্যায়। টলিউডের পোড়খাওয়া অভিনেতার আসল নামের সঙ্গে মিল রেখেই চরিত্রের নাম। তিনি নিজেও মেয়ের বাবা। তাঁর একমাত্র কন্যা দীপাবলি এখন হিউস্টনের বাসিন্দা। এক্ষেত্রে ছবির দীপকের সঙ্গে ব্যক্তি দীপক কোথাও কি একাকার হয়ে যাচ্ছেন। ল্যান্সডাউনের যে বাড়িতে শ্যাটিং চলছে, তার দোতলার জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস চাপেন চিরঞ্জিৎ, ‘কিছুটা তো হচ্ছেই। বাবাই এখন ওদেশে সেটেলড। ওরা ওখানে যেভাবে থাকে তাতে আমাদের দু’জনের পাশে এসে থাকার কোনও কারণই নেই। আর আমি তো অবসর নেওয়া চাকরিজীবী নই যে এখানকার পাট চুকিয়ে বাকি জীবনটা মেয়ের কাছে কাটিয়ে দেব।’
পরের শটের জন্য ডাক পড়তেই মুহূর্তে চরিত্রের চৌহদ্দিতে ফিরে গেলেন চিরঞ্জিৎ। নেওয়া হবে ওঁর রিঅ্যাকশন শট। মেয়ের ভূমিকায় রুক্মিণী মৈত্র। প্রণোচ্ছল অভিনেত্রী সেদিন শোকাচ্ছন্ন। ওই দিনই সকালে প্রয়াত হয়েছেন রুক্মিণীর মাসি। ‘আমি ভীষণ পারিবারিক। ছবির মধুরাও তাই। আজ এমন একজন কাছের মানুষকে হারালাম, যাঁর শূণ্যতা কোনদিন পূর্ণ হবার নয়। ছবিতে যেমন মৌ বাবার প্রতি দায়িত্বশীল, তেমনই ব্যক্তিজীবনে বাবা চলে যাবার পর মায়ের প্রতি আমি এখন বেশি প্রোটেকটিভ হয়ে গেছি। বাবা যতদিন ছিলেন ততদিন মনে হয়নি মায়ের উপর আলাদা করে মনোযোগ দেওয়ার কথা। এখন সত্যি মায়ের জন্য সব সময় একটা দুশ্চিন্তা হয়’, বললেন তিনি।
প্রথম ছবি ‘চ্যাম্প’ মুক্তি পাওয়ার মাত্র এগারো দিন আগে বাবাকে হারান রুক্মিণী। ‘আমার এই জার্নিটা বাবা দেখে যেতে পারেনি। বাবা-মা দুজনেই আমাকে বন্ধুর মতো বড় করে তুলেছেন।’ দেটে ও শটে তাই চিরঞ্জিৎকে বাবার ভূমিকায় পেয়ে আদ্ভুত রুক্মিণীর অনুভূতি, ‘উনি আমাদের ইন্ডাস্ট্রির একজন পিতৃতুল্য মানুষ। ছবির চিত্রনাট্যটা যেন ব্যাক্তিজীবনে বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আর বিশ্বাসের সম্পর্কের সঙ্গে কোথাও মিলেমিশে গিয়েছে।’
ছবির কাহিনি ও চিত্রনাটা প্রিয়াঙ্কা পোদ্দারের। অন্যান্য ভূমিকায় আছেন তুলিকা বসু, বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্দীপ ভট্টাচার্য, সায়ন বসু প্রমুখ। মধ্যবিত্ত জীবনের দেখা ও যাপন করা সম্পর্কের রসায়নই ছবির সারকথা বলে জানালেন পরিচালক। তাঁর বিশ্লেষণ, ‘আজকের দিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সম্পর্ক। বদলে যাওয়া সময়ে সম্পর্কের স্তরগুলোকে তুলে ধরাই আমার উদ্দেশ্য।’