পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। ... বিশদ
আটত্রিশ বছর পরও যেন ‘আতঙ্ক’র আশঙ্কা একদা বাংলা ছবির শীর্ষ নায়িকার চোখে। ব্যস্ততার ব্যারিকেড ডিঙিয়ে সদ্য ৩০তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে হাজির হয়েছিলেন শতাব্দী রায়। তাঁর অভিনেত্রী জীবনের জন্মদাতা শতায়ু তপন সিংহর প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে। সেদিন শতাব্দী স্মৃতিমেদুর। বললেন, ‘কত পুরনো কথা মনে পড়ছে। এতটাই বাচ্চা দেখতে ছিলাম যে অন্য অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গে বয়সের সামঞ্জস্য রাখা যাচ্ছিল না। অথচ চরিত্রটির ততদিনে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হয়ে গেছে। বাবা, ভাইকে নিয়ে সংসারের নিয়ন্ত্রণ তারই হাতে। ফলে আমাকে আর একটু বয়স বাড়াতে হবে।’ কীভাবে সম্ভব? শতাব্দীর কথায়, ‘তখন অরুন্ধতীদেবী বলেছিলেন, ‘সে দায়িত্ব আমার।’ উনি আমার চুল খোঁপা করে, শাড়ি পরিয়ে, মেকআপ করিয়ে লুক টেস্ট নিয়ে ফাইনালি সিলেক্ট করেছিলেন আমায়।’
‘আতঙ্ক’র সেই ‘সুব্রতা মুখার্জি’ আজ বীরভূমের সাংসদ। স্মৃতির সরণি ধরে হাঁটতে হাঁটতে শতাব্দী ততক্ষণে যেন ফিরে গিয়েছেন ‘আতঙ্ক’র ফ্লোরে। ‘তপনদা এত আস্তে, নিচু স্বরে কথা বলতেন যে কিছু বলার বা জিজ্ঞাসার থাকলে বুক ঢিপঢিপ করত। রীতিমতো ভয় পেতাম ওঁকে’, হেসে ফেলেন অভিনেত্রী-সাংসদ। আবেগাপ্লুত শতাব্দীর উচ্চারণে তাঁর প্রথম অভিনয় মাস্টারমশায়ের মান ও প্রতিভার নিরিখে সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ার আক্ষেপ। বলেন, ‘তপনদার আরও বেশি সম্মান পাওয়া উচিত ছিল। ‘আতঙ্ক’ আমার ডেবিউ ফিল্ম। মনে পড়ছে তপনদার সেই ভবিষ্যৎবাণী। বলেছিলেন, ছবিটা রিলিজ হলে তুমি রেকর্ড হয়ে থাকবে। আমার মনে হচ্ছে, এই তো আজকের কথা। ওঁর নিউ আলিপুরের বাড়িতে বসে গল্প করছি।’
সত্যিই তো! তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি অভিনেত্রী শতাব্দী রায়কে। দীর্ঘ অভিনয় কেরিয়ারে বহু পরিচালকের ছবিতে কাজ করার পরও শতাব্দীর মূল্যায়নে তপন সিংহ সকলের থেকে আলাদা। কেন? শতাব্দীর ব্যাখ্যা, ‘ওঁর ছবির বিষয়গুলোই ছিল অন্য রকম। এক এক জন পরিচালকের এক এক রকম ঘরানা থাকে। তপনদা ওই রকম কোনও ঘরানায় বিশ্বাস করতেন না। ওঁর প্রতিটি ছবির বিষয় ছিল আলাদা। আগেরটার সঙ্গে পরেরটার কোনও মিল থাকত না। আমার মনে হয় তপন সিংহকে আরও সম্মান জানানোর এখনই সঠিক সময়। সিনেমাকে জানতে গেলে, ভালোবাসতে গেলে, শিখতে গেলে তপন সিংহকে জানা প্রয়োজন।’
‘আতঙ্ক’র বেশ কয়েকবছর পর তপনবাবুর ‘অন্তর্ধান’-এও অভিনয় করেছিলেন শতাব্দী। কী শিখেছিলেন শিক্ষক তপন সিংহর ক্লাসে? ‘ক্যামেরার সামনে অভিনয়ের খুঁটিনাটি শিখেছি। শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা শিখেছি। আর মানুষকে সম্মান করতে শিখিয়েছেন’, স্পষ্ট বললেন শতাব্দী।