পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
হাস্যরসাত্মক লঘু ছন্দে নাটকের সূত্রপাত হয়। মধ্যবয়সি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট দীপ্তেশ সেন (দেবশঙ্কর হালদার) দার্জিলিংয়ের একটি হোম-স্টেতে কিছুদিনের জন্য ছুটি কাটাতে এসে এক সর্বভুক, মদ্যপ অথচ বৈষ্ণব ভূতের (শুভাশিস মুখোপাধ্যায়) খপ্পরে পড়ে। সুনির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অভাবের মতোই সুনির্দিষ্ট নামেরও অধিকারী নয় ভূতটি। ঠিক এখান থেকেই বৈপরীত্যের একতার তত্ত্ব অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে কাহিনি ও চরিত্রগুলির মজ্জায় মজ্জায় প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে। দীপ্তেশের যাবতীয় খাদ্য ও পানীয় গোপনে সাবাড় করে দেয় ভূত। আর দোষ চাপে কেয়ারটেকার প্রেমার (মৌমা নস্কর) উপর। তবে অচিরেই দীপ্তেশের প্রতি এক অমোঘ টানে তাকে দেখা দিয়ে ফেলে ভূত। অতীত ও বর্তমানের এই যুগলবন্দিতে জীবনের সব রূপ, রস, গন্ধ একে একে প্রকাশিত হতে থাকে। পারস্পরিক স্বীকারোক্তির মাধ্যমে উত্তরণের পথ খোঁজে এই অতিমানবিক সাক্ষাৎকার পর্বটি।
মানুষ ও না-মানুষের আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রতিটি অজুহাতের ইমারত তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে শুরু করে। সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী দীপ্তেশের পুঁজিবাদী জীবনশৈলীতে সন্তরণ হিমশৈলের চূড়া মাত্র। তার কবি-সুলভ প্রেমিক সত্তাও দিনের শেষে নারীকে এক ব্যবহার্য মানব সম্পদ হিসেবেই বিবেচনা করে। তাই পরিত্যক্ত কয়লা খনির মতোই রুগ্না স্ত্রীর হাত থেকে রেহাই পেতে চেয়েছিল সে। স্ত্রীরও আগে এক প্রেমিকাকে ত্যাগ করেছিল কর্তব্য-বিমুখতার কারণেই। অথচ সব কর্তব্যকে পাশ কাটিয়েও জীবন উপভোগ তার কাছে অধরাই থেকে গিয়েছে। প্রকাশ্য অতৃপ্তি, সুপ্ত অনুশোচনা ও ব্যর্থ মতাদর্শ অনুশীলনের ত্র্যহস্পর্শে ক্ষয়প্রাপ্ত সে নিজেও।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিজের জীবদ্দশায় ভূতটি তার এক নিকটাত্মীয়ার সম্পদ হরণ করেছিল। ভূতের কপটতায় কপর্দকশূন্য সেই নারী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আত্মহত্যা করে। একটি ঝলসানো ভ্রূণের কাল্পনিক অস্তিত্ব তার ভৌতিক জীবনকেও উপদ্রুত করে রাখে। ভূত ও দীপ্তেশ দু’জনেই নানাবিধ খুচরো পাপবোধ থেকে মুক্তির জাগতিক দিশা খুঁজে পেলেও সভ্যতার অভিশাপ থেকে মুক্তির বার্তা আসেনি।
স্ল্যাপস্টিক কমেডি থেকে বাঙ্ময় জীবন জিজ্ঞাসা, নাটকের প্রতিটি স্তরে সসম্মানে উত্তীর্ণ শুভাশিস ও দেবশঙ্কর। মৌমাও নিজের দায়িত্বের প্রতি সচেতন ছিলেন। মঞ্চসজ্জায় শান্তিনিকেতনী প্রভাব স্পষ্ট। আলোকসম্পাত ছিমছাম। নাট্যকার ও নির্দেশক ঈশিতা মুখোপাধ্যায় জীবনের খনন কার্য করেছেন পর্যাপ্ত বিনোদনময় শৈলীতেই। ফলে কোনও ক্লান্তিকর মুহূর্ত উপস্থিত হয়নি।