কর্মপ্রার্থীদের কর্মলাভ কিছু বিলম্ব হবে। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য লাভ ঘটবে। বিবাহযোগ আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে ... বিশদ
‘আমরা যাঁকে যে রকমভাবে দেখছি, আসলে মানুষটা সেরকম নয়। প্রতিটি মানুষেরই নানারকম সমস্যা আছে। এক একজন নানাভাবে সেটা লুকানোর চেষ্টা করেন। যখনই তিনি সেটা করতে যাচ্ছেন, তখনই তাঁর প্রকৃত মুখটার উপরে একটা মুখোশের আড়াল এসে যাচ্ছে,’ বললেন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়। অর্ঘ্যদীপের ‘মুখোশ’-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। পুলিস ইনস্পেক্টর। নাম সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায়। মতের স্বপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে চরিত্রটি ব্যাখ্যা করেন শান্তিলাল। বলেন, ‘সব্যসাচী পেশায় একজন পুলিস অফিসার। তার ভেতরে একটা অন্য মানুষ বাস করে। যখন সে পুলিস অফিসার হিসেবে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে, তখন তার ওই আগের মানুষটিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এটাও তো একটা মুখোশ।’
চরিত্রের এই দ্বৈতসত্তার জন্যই পরিচালক অর্ঘ্যদীপ খোলসা করে বলতে চান না তাঁর ছবির অভিনীত চরিত্রগুলির মুখ আর মুখোশের বৃত্তান্ত। তবুও ছবির গল্পটি এইরকম। একটি মেয়ে (অন্তরা) রাতে থানায় আসে। মেয়েটির দিদি (উত্তরা) নিখোঁজ। সে এসেছে মিসিং ডায়েরি করতে। মেয়েটির সন্দেহ তার দিদিকে হয়তো মেরে ফেলা হয়েছে। না হলে কোথাও গুম করে রাখা হয়েছে এবং তার অভিযোগের তির জামাইবাবুর দিকে। পুলিস অভিযোগ নেওয়ার সময় জামাইবাবুর নাম শুনে থমকে যায়। কারণ যার সম্পর্কে অভিযোগ আনা হচ্ছে, সে শহরের অত্যন্ত প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। অধুনা রাজনীতির জগতে পা দেওয়া মানুষটি সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে অন্যতম প্রার্থীও। এমন একজন মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায় অফিসার। শেষপর্যন্ত মেয়েটির জেদ, অসহায়তা এবং সবোর্পরি ঘটনার গুরুত্ব বুঝে অভিযোগ লিপিবদ্ধ হয়। তদন্তে নামে পুলিস। এই তদন্তটাই হচ্ছে ‘মুখোশ’-এর জার্নি।
রুবি মোড় সংলগ্ন একটি বিলাসবহুল অফিসে মেকআপহীন মুখ নিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে ছিলেন রজতাভ দত্ত। তাঁর মুখোশের নাম ‘রণজয় সান্যাল’। ইনিই সেই অভিযুক্ত জামাইবাবু। দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে রজতাভ বললেন,‘মানুষটা ভালো না। এমনিতে সে একজন সফল শিল্পপতি। খুব নিচুতলা থেকে উঠে আসা মানুষ। তার এই উঠে আসার পিছনে অন্য কাহিনী আছে। এটাকেই সে ঠিক বলে মনে করে। আপাতত সে রাজনীতিতে নেমেছে। ভোটে দাঁড়িয়েছে। জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর।’ এই বাতাবরণে দাঁড়িয়ে রণজয়ের বিরুদ্ধে বধূ হত্যা বা গুম করে রাখার অভিযোগ।
নতুন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে রজতাভর উত্তর, ‘এটা একটা নতুন পরীক্ষা দেওয়ার মতো। কারণ নতুন তরুণ পরিচালকদের ভাবনার স্তরটা একটু ভিন্নরকম হয়। আমি এতদিন ধরে যা করে এসেছি হয়তো তাঁর সঙ্গে আমার ধারণা নাও মিলতে পারে। তখন আবার নতুন করে ভাবতে হয়। রণজয়ের ক্ষেত্রে যেমন হচ্ছে। রণজয়ও দুষ্টু লোক। কিন্তু তার দুষ্টুমির ধরণটা আলাদা।’ অভিনীত চরিত্রগুলিতে মুদ্রাদোষ আরোপ করায় সিদ্ধহস্ত রজতাভ। কারণ, ‘ম্যানারিজমকে চরিত্রের একটি সিগনেচার হিসেবেই দেখতে পছন্দ করেন বাংলা ছবির ডাকসাইটে ভিলেন। তাঁর মতে, ‘ম্যানারিজম একটা সূক্ষ্ম শিল্প।’ রণজয় চরিত্রেও সেই সূক্ষ্ম শিল্পের ছোঁয়া রাখবেন বলে জানালেন তিনি।
ওদিকে অফিসের নীচে তখন চলছে আউটডোর শ্যুট। অন্তরাকে বাইকে চড়িয়ে সাম্য একটি আবাসনের নীচে এসে দাঁড়ায়। এই মেয়েটি সেই অন্তরা যে থানায় দিদির নামে মিসিং ডায়েরি করতে গিয়েছিল। চরিত্রটিতে অভিনয় করছেন অমৃতা হালদার। মডেলিংয়ের জগৎ থেকে সরাসরি রুপোলি পর্দার দুনিয়ায় পা রেখেছেন। শুরুতেই শান্তিলাল, রজতাভদের মত অভিজ্ঞ অভিনেতাদের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করে কী শিখলেন অমৃতা? নবাগতা অভিনেত্রীর ছোট্ট জবাব, ‘কাজ করার খিদেটা বেড়ে গেল।’ প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় করছেন সাম্যর চরিত্র। ছোটপর্দার পরিচিত মুখ, ইদানীং বড়পর্দাতেও সাড়া ফেলেছেন তিনি। এই ছবির সবচেয়ে রহস্যজনক চরিত্র হচ্ছে পামেলা। অভিনয় করছেন পায়েল সরকার। শার্লক হোমসের ভক্ত এই অভিনেত্রীর কথায়, ‘চরিত্রটি নেগেটিভ না পজিটিভ এখন বলা যাবে না। তবে পামেলা খুবই চালাক ও বিচক্ষণ। নিজের পদক্ষেপ নিয়ে খুবই সচেতন।’ এরকম চরিত্রে আগে অভিনয় করেননি, অকপট স্বীকারোক্তি পায়েলের। মাত্র আট দিনেই ছবির শ্যুটিং পর্ব শেষ করলেন পরিচালক। ছবির ডিওপি মধুরা পালিত। এবার শুরু হবে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ। মার্টিন স্করসিসির ফ্যান অর্ঘ্যদীপ নিজেই লিখেছেন গল্প। চিত্রনাট্য নিখেছেন অভীক ও সুজয়নীল। সঙ্গীত নীলাঞ্জন ভৌমিকের। সম্ভবত চলতি বছরের শেষের দিকে মুক্তি পাবে ‘মুখোশ’।