Bartaman Patrika
গল্পের পাতা
 

ভুল ফোন
কৌশানী মিত্র

দু’জন অচেনা মানুষের গল্প
ছেলেটি নরম। মেয়েটি কঠিন। ছেলেটির চোখে সারাক্ষণ জল টলটল করছে। আসলে জন্মানোর পর শুধু লড়াই করতে করতে দু-দণ্ড বসে কাঁদতে পারেনি কোনওদিন। এখন যেটুকু যা আছে তাইই ইমনের সামনে উপুড় করে দিতে পারলে যেন বেঁচে যায়।
অন্যদিকে ইমন চায় ভালোবাসা, কারণ জীবনে তার ওই একটা জিনিসের অভাব বড়। বাকি সবই তো আছে, এই যেমন হাইটেক গ্যাজেটস, প্রপার লোকেশনে বহুতল বাড়ি, গাড়ি সব। তবে ভালোবাসা, ওটা তো আর বাজারহাটে কিনতে পাওয়া যায় না যে, আদেশ দিলেই সামনে এসে হাজির হবে। তাই ও এসব নিয়ে ভাবে না। কিন্তু হঠাৎ মিশুকের আগমন ওকে এসব ভাবতে বাধ্য করেছে। নাহহ্‌ প্রেমে পড়ার লোভ ইমনের কোনওদিনও ছিল না। কারণ নিজেকে সে সব থেকে বেশি ভালোবাসে। ইমন জানত প্রেমে পড়লে সবকিছু খোয়াবে সে। 
আসলে যার সারা পৃথিবীতে একজনই ভালোবাসার মানুষ, তার মতো অসহায় আর কে আছে? অজানা অচেনা একটা ছেলে—দুম করে ছেড়ে চলে গেলে সেই শূন্য জায়গা ভরাট করার মতো যে কেউ নেই। আর যাকে বাড়ির লোক কখনও ভালোবাসাতে পারল না সে কি না অন্য কারও আদর পাবে? তা সম্ভব!
সম্ভব। মিশুক জানে কীভাবে ভালোবাসাতে হয়। কীভাবে জানান দিতে হয় আমি আছি তোর পাশে। নানা লোকের নানা মত পেরিয়ে কীভাবে কাছের আরও কাছের হয়ে ওঠা যায়।
ফোন কল আর সুরেলা গলার গল্প
মিশুকের সঙ্গে দেখা হওয়া বড় অদ্ভুতভাবে। তবে সেই দেখা হওয়ার আগেও বলার মতো একটা গল্প উঁকি মারে, গল্পটা আর কিছুই না— একটা ফোন কল আর সুরেলা গলার গল্প। মোটেই ছেলেদের মতো কঠিন কর্কশ গলা নয়। মোলায়েম ছন্দে বয়ে যাওয়া এক কণ্ঠস্বর। মনে আছে সে দিনের কথা।
সবে দুপুরের খাওয়া সেরে ইমন তার ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় শুয়েছে। আসলে সারাদিন তার কাজের কাজ খুব একটা নেই বললেই চলে। গান গাইতে ভালোবাসে বলে সকাল বিকেল রেওয়াজ করা আর ইউটিউবে পছন্দের মানুষের গান শোনা কিংবা সিনেমা দেখা। অনেকসময় দাদা এসে জানিয়ে যায় বিদেশি কোনও ফিল্মের খবর। ডাউনলোডের নতুন ফর্মুলা আবিষ্কার করলে সেটাও এসে জানিয়ে যায় বোনকে। আসলে সারাদিন ব্যস্ততার মাঝে এটুকু টাইম বোনকে দিলে মনের দিক থেকেও একটু শান্তি পাওয়া যায় আর কী!
তাই সেইদিনও দুপুরবেলা বাবা-মা কাজে আর দাদা ইউনিভার্সিটিতে, বাড়িতে একা ইমন। টেলিফোনটা হঠাৎ বেজে উঠেছিল। ইমনের বিরক্ত লাগছিল, চার-পাঁচ বার রিং বেজে যাওয়ার পর বাধ্য হয়েই খুব কষ্ট করে বিছানা থেকে উঠেছিল ইমন। ও জানত ওর কোনও ফোন আসবে না কোনওদিন। হয়তো দাদা কিংবা মায়ের ফোন। কিংবা মামাবাড়ি থেকে ফোন করেছে। মা নিশ্চয় অপারেশন থিয়েটারে, তাই মাকে না পেয়ে বাড়ির একমাত্র প্রহরীকে জানিয়ে রাখা। আর শেষ মুহূর্তে বলা— ‘মান্তুকে একবার আসতে বলিস তো, তোর জন্য পিঠে করেছি, ওর হাত দিয়ে পাঠিয়ে দেব সোনাই।’ মান্তু ওর দাদার নাম। বাড়ির আদরের ছেলে, ইমনের খুব প্রিয় মানুষ। কাছের মানুষ যে ক’জন আছে তাদের মধ্যে একজন।
নিজের মনে এসব বুজকুড়ি কাটতে কাটতে ফোনটা কখন বেজে বেজে কেটে গিয়েছে, খেয়াল হয়নি ইমনের। ইমন হাঁফ ছেড়েছিল। যাক বাবা বাঁচা গিয়েছে। কিন্তু বিছানায় ফেরার মুহূর্তে আবার রিং। এবার সাত তাড়াতাড়ি ধরতে উঠেছিল ইমন। মাথায় এসেছিল অন্য কথা। ইমনের বাবা মস্ত ইঞ্জিনিয়ার। কাজের সূত্রে এদিক ওদিক যেতে হয়। ফিরতেও রাত হয়ে যায় কখনও। তখন বাবা বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে রাখে। হয়তো বাবারই ফোন, ভেবেছিল ইমন। ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশে ফুটে উঠেছিল মন তোলপাড় করা সেই গলার স্বর।
একটু ক্লান্ত, একটু অবিন্যস্ত— ‘উজান আছে বাড়িতে? বলবেন আমি মিশুক বলছি। ওর তো আজ আমাদের বাড়ি আসার কথা ছিল। এল না কেন? আমার তো ওকে খুব দরকার।’
এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল তারপরের কথায় ইমন হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারেনি। মিশুক বিড়বিড় করছে ‘ও ছাড়া তো আমার আর কেউ নেই। ও না এলে হবে না বিশ্বাস করুন।’
ইমন জানে আজ দাদা মিষ্টি দিদির সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছে। যেদিন দাদার ডেটিং থাকে, সেদিন সকালে বোনের ঘরে উঁকি দেয় সে। বোনকে জিজ্ঞাসা করে কোন রঙের জামা পরে গেলে মিষ্টিকে সহজে হাত করা যাবে। বোনও অমনি বাইরের রোদ-ঝড়-হাওয়া ট্যালি করে বলে দেয় কী পরে বেরনো উচিত।
মিশুকের কথার স্রোতেই এসে মিশেছিল অন্য আর এক নদী ‘আজ তো দাদা মিষ্টি দিদিকে নিয়ে বেরিয়েছে ওর সঙ্গে বেরলে সকালে আমার পছন্দ মতো জামা পরেই তো বেরয় ও...’
কথা শেষ করার সময় দেয়নি মিশুক, খুব আহত স্বরে বলেছিল—‘ও কেন এমন করল বলতে পারেন? ও তো জানত সব...।’ ইমন কী বলবে বুঝতে পারেনি, ওর খারাপ লেগেছিল খুব তাও বলেছিল—‘আচ্ছা দাদা এলে আমি জানাব আপনার কথা...।’ বিড়বিড় করেছিল ছেলেটা, পরক্ষণেই গলা নরম করে বলেছিল, ‘আচ্ছা আপনি কি উজানের সেই বোন যে, ছোটবেলায় বাবার হজমির সঙ্গে ইসবগুল মিশিয়ে দিয়েছিলেন যাতে বাবা অফিসে যেতে না পারে আর সারাদিন আপনার সঙ্গে খেলা করে?’ এবার ইমনের ধাক্কা খাওয়ার পালা। অসভ্য দাদাটা তার বন্ধুদের এসব গল্প করেছে! ছিঃ ছিঃ ইমনের আর কোনও কিছু বলার মুখ নেই। এদিকে ছেলেটি বলেই চলেছে— বড় খারাপ কাজ করেছিলেন আপনি, একজনের গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা দেওয়া কি ঠিক, বলুন তো?
খানিক স্তব্ধ থেকে ইমন যেন জ্বলে উঠেছিল, অজানা অচেনা একটা ছেলের কাছে জ্ঞান শুনতে রাজি নয় সে। ‘শুনুন, আমি যা করেছি সেটা ছোট বয়সে না বুঝে করেছি, আমি ফোন রাখছি। এরপরে ফোন করলে মনে রাখবেন দাদার একটা মোবাইল আছে, সেটা আপনাদের মতো লোকের সঙ্গে আড্ডা মারার জন্যই মূলত ব্যবহার করা হয়। আসরটা সেখানেই বসাবেন।’
আর কিছু শোনার অবস্থায় ছিল না সেদিন ইমন। প্রচণ্ড রাগে ফোন রেখে দিয়েছিল। ঘরে ফিরেই নিজের মোবাইল থেকে দাদাকে গুনে গুনে বত্রিশটা গালাগাল দিয়ে সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার অঙ্গীকার করে, রাতে খাওয়ার টেবিলে জেহাদ ঘোষণা করে, বাবাকে দিয়ে সব থেকে দামি ল্যাপটপ কিনিয়ে তবে শান্তিতে রাতে ঘুমিয়েছিল সেদিন ইমন।
তখন কী ইমন ভেবেছিল এরপর অনেক রাত কেটে যাবে— না ঘুমিয়ে শুধু মিশুকের কথা ভেবে? না, ভাবেনি। কারণ পরের ফোনটা এসেছিল বেশ কিছুদিন বাদে।
একটা মাথাচাড়া দেওয়া মনখারাপের গল্প
‘আমি ভালোবাসতে শিখিনি মিশুক, আঁকড়ে ধরতে শিখেছি।’— মিশুকের ডানহাতের আঙুলগুলো নিজের ঠোঁটে স্পর্শ করিয়ে কিছুটা ম্লান হেসে কথাগুলো বলল ইমন। আজ দুপুরেও বাড়িতে কেউ নেই। তাই মিশুক এসেছে। যদিও আজ আসার কারণ অন্য। মিশুক চলে যাচ্ছে। বেঙ্গালুরুতে এক নামী প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েছে সে। অনেকেই অবাক হয়েছে, অনেকে আবার অভিবাদন জানিয়েছে। ইমনের এত কিছু বোঝার দরকার নেই। মিশুক যে তাকে ছেড়ে তার দুপুরগুলোকে খালি করে দিয়ে চলে যাচ্ছে এটাই বড় কথা। কিন্তু মিশুক বলেছে এটা ওর স্বপ্ন। সব লড়াই এক ধাক্কায় জিতে যাওয়ার ট্রফি।
তাই আজ ইমনের মনখারাপ। খুব মনখারাপ। সেটুকু আঁচ করে নিয়ে মিশুক হালকা হাসল। ইমনকে কাছে টেনে নিয়ে বলল— ‘কষ্ট হলে কাঁদিস না কেন?’
অভিমানী গলায় ইমন উত্তর দিল— ‘আমি কাঁদতে শিখিনি, শুধু আঁকড়ে ধরতে শিখেছি।’ ওর মনে পড়ছিল শুরুর দিনগুলোর কথা—
ফোন এসেছিল প্রায় দশদিন পর, আবার ওই একি সময়। ইমন ধরেছিল ফোন। ওপাশে আবার সেই ছেলেটা, হড়বড় করে বলতে শুরু করেছিল—‘এই শুনুন আপনি আগের দিন ওইভাবে ফোন রেখে দিলেন কেন? আমি তো এমনি বলেছিলাম। আপনার দাদা কত ভালোবাসে আপনাকে, তাই তো ওরকমভাবে বোনের কথা বলে আমাদের...’ কথার মঝে থামিয়ে দিয়েছিল ইমন— ‘দেখুন, আমায় কেউ ভালোবাসে না, আর যদি বাসেও তা আপনার জেনে কী হবে, দুঃখিত আজও আমার দাদা বাড়িতে নেই। তাই ও কেন এল না— টাইপের মেয়েলি ন্যাকামো করবেন না। আমার সময় নেই।’
‘আপনি জানেন আমি ক্লাস নোটস ছাড়াই পরীক্ষা দিলাম। আসলে আপনার কথায় একটা জেদ চেপে গিয়েছিল বলতে পারেন। ভাবলাম আরে আমি তো মেয়ে নই, আমি তো পুরুষ। আমি ইচ্ছে করলে হিমালয় জয় করতে পারি। তাই না?’
ইমন বুঝল মেয়ে-সংক্রান্ত মন্তব্য করাটা ঠিক হয়নি। তার মতো শিক্ষিত মেয়ের মুখে ওটা মানায় না। গ্যাটিস দেওয়ার জন্য এপার থেকে ও বলল—‘তা করতে চাইলে করুন। আমায় কেন ফোন করছেন?’
‘না আসলে হঠাৎ ইচ্ছা করল। আচ্ছা, আপনি কী গান শুনছিলেন এখন? আমিও গান শুনি মাঝে সাঝে। গাইও।’
আর সহ্য করা যাচ্ছিল না। কথা শেষ করার জন্য ইমন বলেই দিয়েছিল ‘আমি হিন্দি গানের সঙ্গে নাচছিলাম এখন, হয়েছে?’ আর তারপরেই সংবিৎ ফিরে পেয়েছিল সে। ফোন রেখে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেছিল। বাড়িতে কেউ ছিল না, তাই কান্না যেন বাঁধ ভেঙেছিল সেদিন।
রাতের দিকে ইমন যখন শুতে যাবে তখনই ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা মেসেজ ঢুকেছিল— একা একা কাঁদবেন না, ভালো দেখায় না। আমি একটু মেয়েলি মানছি, একটুতেই কেঁদে ফেলি। কিন্তু আপনি এত দুঃখে থাকেন কেন সবসময়? সেই শুরু— তারপর বয়ে গিয়েছে অনেকগুলো দিন। নাহ, ইমন আজও মিশুকের সামনে কাঁদতে পারে না। তবে ইমনের অভিমানটুকু বুঝে নেয় মিশুক। এর মধ্যেই ইমন জেনে গিয়েছে মিশুকের জীবনের ভয়ঙ্কর কিছু সত্যি। দু’জনের অবিশ্রান্ত কথা হয়েছে ফোনে। মাঝে মাঝে মিশুক চলে এসেছে ইমনের কাছে। ইমন একের পর এক মিস হওয়া ক্লাস নোটস-এর ডিক্টেশন দিয়েছে এপার থেকে আর ওপার থেকে মিশুক শুনেছে। কিছু রেকর্ড করেছে। ইমনের আসলে জেদ চেপে গিয়েছিল, ক্লাসের সব থেকে ভালো ছেলে উজান মল্লিককে ডিঙিয়ে সারাজীবন দ্বিতীয় হওয়া মিশুককে এবার প্রথম করতেই হবে। নয়তো সেদিনের রিভেঞ্জ বাকি থেকে যাবে যে! সেদিন-যেদিন দাদা বন্ধুকে কথা দিয়েও ইচ্ছে করে কথা রাখেনি, মিশুকের বাড়ি থেকে অনেক দূরে রেস্তরাঁয় গা ঢাকা দিয়েছিল। বন্ধ রেখেছিল মোবাইল। যাতে মিশুক কোনওভাবেই যোগাযোগ করতে না পারে কিংবা কোনওভাবেই পরীক্ষায় উজানের প্রতিপক্ষ না হয়ে দাঁড়ায়।
গোল্ড মেডেল নিয়ে যেদিন মিশুক ইমনের কাছে এসেছিল, সেদিন ইমন আনন্দে কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না। তবে মিশুক তুলনায় চুপটি করে বসেছিল। বলেছিল, ‘তোর দাদাকে বড্ড ভালোবাসি, ওকে হারিয়ে জিতে যাওয়ার কোনও ইচ্ছাই নেই আমার। আমি যেটুকু চাই সেটুকু পেলেই হল। এই মেডেলটা তুই রাখ, তোর জন্যই আনা।’ ইমন বুঝেছিল মিশুক আলাদা। ইমনের মতো সবকিছু নিজের করে নেওয়া নয় বরং কিছু জায়গায় ত্যাগেই ওর আনন্দ।
অন্যমনস্ক ইমনের সামনে দিয়ে সেই মিশুক আজ চলে যাচ্ছে। মিষ্টি হেসে ইমনের গাল টিপে দিয়ে দরজার দিকে পা বাড়াল মিশুক। ইমনের মাথা নিচু, ঠোঁট কাঁপছে তিরতির করে। কিন্তু কান্না বেরচ্ছে না। কান্না বেরয় না। সেটাই সব থেকে কষ্টের।
দরজার দিকে এগতে থাকা মিশুকের বুকের মধ্যেও তোলপাড় চলছে যেন। একবার ডাকবে না ইমন? যাওয়ার আগে বিদায় জানাবে না? দরজার চৌকাঠে এসে পা আটকে গেল মিশুকের। ইমনের ভারী অথচ শান্ত গলা পেল— ‘তুমি বোধহয় জানো না মিশুক, আমি...আমি অন্য অনেক মেয়েদের থেকে বেশি সুন্দর। তুমি কখনও ভালো করে দেখেছ আমায়?’
মিশুকের মুখে হাসি ফুটল এবার। হ্যাঁ সে দেখেছে ইমনকে, সেই যেদিন প্রথম ফোন করেছিল সেদিনই দেখেছে। প্রাণ ভরে দেখেছে।
দু-মাস পরের গল্প
ইমন ল্যাপটপ চালু করল। রোজ এসময় মিশুকের সঙ্গে কথা বলে ইমন। না ফোনে কথা বললে চলবে না। মিশুক চায় ভিডিও কল।
ইমন চ্যাট অন করেই নাক সিঁটকালো। ‘ইসস আজকেও সেই এক জামা? তুমি কী স্নান খাওয়া না করে শুধু পড়াশোনা করেই বেঁচে থাকবে ভেবেছ?’ আলগা ধমক লাগালো ইমন।
মিশুক কী বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। ইমনকে শান্ত করতে বলে ফেলল— ‘তোকে কিন্তু আজ এই ড্রেসটায় বেশ লাগছে। খুব সুন্দর।’
ইমনের ঠোঁটের কোণ কেঁপে উঠল। ওপাশ থেকে কোনও উত্তর না পেয়ে মিশুক বলল— ‘তোকে নিয়ে কত দেশ ঘোরার স্বপ্ন দেখি আমি জানিস?’ আবার একটা ধাক্কা। চকিতে ইমনের চোখ চলে গেল নিজের পায়ের দিকে। অপুষ্টিতে ভোগা সরু সরু দুটো পায়ের দিকে। সেই ক্লাস ফাইভে সাইকেল করে বাড়ি ফেরার পথে অ্যাক্সিডেন্ট, তারপর পা দুটো শুকিয়ে গেল। আর ঠিক হল না। ব্যস্ত বাবা-মা-দাদা একসময় বুঝে গিয়েছিল ইমন আর কোনওদিন হাঁটতে পারবে না। শুধু ইমনের বুঝতে কিছু সময় লেগেছিল। তার চার দেওয়ালের গণ্ডিকে নিজের ভবিষ্যৎ ভেবে নিতে ঠোঁট কেঁপেছিল। কিন্তু কাঁদেনি সে। কাঁপা কাঁপা স্বরে ইমন বলল, ‘এরকম বল কেন? জানো তো আমি অকেজো। আমায় নিয়ে কোথাও যাওয়ার ক্ষমতা নেই কারও।’
মিশুকের হাসি ভেসে এল। ‘আরে তাতে কী? তোর মতো সুন্দর মেয়েদের হার হয় না কখনও বুঝলি? আমি তো পাশে আছি।’
লজ্জা পেল ইমন। সে জানে মিশুক অন্ধ। সেই প্রথম ফোনের দিনটির জন্য তাই ইমন নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনি আজও। দাদা মিশুকের না দেখতে পাওয়ার সুযোগ নিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে ক্লাস নোটস দেবে বলেও দেয়নি। তারপর মিশুকের লড়াই যে, কবে ইমনের লড়াই হয়ে গিয়েছিল বোঝেনি ওরা। ইমন বলল, ‘আচ্ছা তুমি জানো আমি সুন্দর? তুমি তো দেখতে পাও না, কীভাবে বোঝো তাহলে?’
ওপাশ থেকে উত্তর এল— ‘কেন আমি তো দেখতে পাচ্ছি তোর চোখের কোণে জল।’ হুইলচেয়ারে বসা ফর্সা, একঢাল চুলের মাঝে মায়াবী মুখ মেয়েটা এতক্ষণে খেয়াল করল, ওর চোখের কোণে জলের বিন্দু টলটল করছে। ইমন কাঁদছে। যদিও কোনও কারণ নেই তাও মন খুলে কাঁদছে আজ সে। নিস্তব্ধ ঘরে দু’পক্ষই আজ চুপ।
দু’জনের মনই যেন একসঙ্গে বলে উঠল— আমাদের গল্পটা আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের গল্পের মতো বেঁচে থাক। এর বেশি কিছু চাই না আমরা।
অঙ্কন : সুব্রত মাজী
21st  March, 2021
পিশাচ সাধু

 

হঠাৎ বর্ণিনীর সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়ে যায় সহজের। বনির গন্তব্য বিচিত্রদার বাড়ি। সহজকে সঙ্গী করে বনি। জনগণের স্বার্থে লড়াই করতে গিয়ে বহুবার পেটানি খাওয়া বিচিত্র ঘোষাল বিশ্বাস করে, এ দেশে একদিন বিপ্লব হবেই। কথায় কথায় বিচিত্রদাও সহজকে সাবধান করে দেয়, সে যেন পিশাচ সাধুর পাল্লায় না পড়ে। বিশদ

18th  April, 2021
মিষ্টু
উৎপল দাস

রিমা ভিতরে ভিতরে জ্বলে পুড়ে মরে। এ পৃথিবীতে কেউ নেই যে তার অবস্থা বোঝে। মিষ্টুকে বিদায় না করতে পারলে যেন ওর শান্তি নেই।  বিশদ

11th  April, 2021
পিশাচ সাধু
জয়ন্ত দে
ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব   ৮

সহজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় পরমেশ্বর শান্ত গলায় বলেছিল— বিচিত্রদা সেই বিরল মানুষ যারা এখনও মনে করে বিপ্লব হবে। কখন হবে, কীভাবে হবে কেউ জানে না, শুধুমাত্র একটা স্ফুলিঙ্গ। সেই স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল হয়ে যাবে। বিশদ

11th  April, 2021
বিদিশা কি ভানুমতী?
আশিস ঘোষ

বেশি কথা বা শব্দ, আলো এখন ভালো লাগছে না। বিদিশাকে বলতেই, ও টিউব লাইট নিভিয়ে জিরো পাওয়ারের নীল আলো জ্বালিয়ে দিল। জানলার পর্দা হাওয়ায় উড়ছে। বাইরের রাস্তায় গাড়ির শব্দ। বিদিশা আমার দিকে চেয়ে আছে। কিছুই বলছে না। বিশদ

04th  April, 2021
পিশাচ সাধু
ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব   ৭
জয়ন্ত দে

দারোগা বাড়ির নিমন্ত্রণে ক্যাপ্টেন হঠাৎ উদয় হল কেন? এ প্রশ্ন সহজের মনে অবিরাম ঘুরপাক খাচ্ছে। নচের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, ক্যাপ্টেনকে সেদিন দারোগা বাড়িতে পাঠিয়েছিল পরমেশ্বরের পার্টনার শঙ্কর। সহজের কাছে আস্তে আস্তে পরিষ্কার হতে থাকে পুরো স্কিমটা। এদিকে, ক্যাপ্টেনের ভবিষ্যদ্বাণীর আতঙ্ক থেকে কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারছে না নচে। তারপর... বিশদ

04th  April, 2021
দহ
হামিরউদ্দিন মিদ্যা

ঘুম-জড়ানো চোখেই ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়াল নুরু। মাটি থেকে গামছাটা তুলে, ধুলো ঝেড়ে কোমরে বাঁধল। বাঁ-হাতে নিল পাচন লাঠিটা। গোরু-মোষের দলটা সামনেই চড়ছে। মোষগুলোর দিকে চেয়ে দেখল, নিবারণ ঘোষের লেজকাটা মোষটা নেই। বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল নুরুর। পাগলের মতো ছুটতে লাগল দহের দিকে। বিশদ

28th  March, 2021
পিশাচ সাধু
ধারাবাহিক উপন্যাস  পর্ব   ৬
জয়ন্ত দে

সহজের একটিমাত্র টিউশন টিকে আছে। মনোতোষ স্যারের কোচিং ক্লাস সে ছেড়ে দিয়েছে। সৃজনীকে পড়ানোর সময় মুখ ফস্কে সহজ বলে ফেলে, তার ভাগ্য খুলতে আর ঊনত্রিশ দিন বাকি। অথচ, প্রেমিকা বর্ণিনীকেও সে ক্যাপ্টেনের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে কিছু বলেনি। এদিকে, সহজকে পরমেশ্বর সাবধান করে, ‘পিশাচের ফাঁদের পড়িসনি।’ তারপর... বিশদ

28th  March, 2021
পিশাচ সাধু
ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব   ৫
জয়ন্ত দে

নচে রেগে গিয়ে ক্যাপ্টেনকে রিকশসুদ্ধু খালে ফেলে দেওয়ার সুপারি দিল নেত্রকে। স্ত্রীকে নিয়ে নেত্রর রিকশয় উঠলেন ক্যাপ্টেন। রিকশ এগতে থাকে আর স্বামীকে একের পর এক অনুযোগ করতে থাকে বঁড়শি। তারপর... বিশদ

21st  March, 2021
পিশাচ সাধু
জয়ন্ত দে

পিশাচ সাধু ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন সহজের। নচেও তার ভবিষ্যৎ জানতে চায়। সাধু বলেন, ‘তুই অপঘাতে মরবি।’ শুনে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত নচে। তারপর... বিশদ

14th  March, 2021
তন্ত্রমন্ত্র
সৌমিত্র চৌধুরী

ঠক ঠক ঠক। অন্ধকার ঘর। মিনিট পাঁচেক হল কারেন্ট চলে গিয়েছে। নিজের বিছানায় চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছি। তবুও মশার কামড়। স্বস্তিতে বসতেও পারছি না। তার মধ্যে দরজায় টোকা।  বিশদ

14th  March, 2021
পিশাচ সাধু
জয়ন্ত দে 

দারোগাবাড়ির ঠেকে সহজকে দেখে হঠাৎই ক্যাপ্টেন বেমক্কা বলে বসলেন— ‘তুই ভুল করেছিস পরি! এ ছেলে সহজ নয়, এ ছেলে কেন তোর এখানে? বড্ড ভুল করছিস!’ পরমেশ্বর অবাক হয়ে জানতে চাইল, ‘কেন, কী ভুল করলাম ক্যাপ্টেন?’ তারপর... 
বিশদ

07th  March, 2021
পিশাচ সাধু 
জয়ন্ত দে

পরমেশ্বরের সঙ্গে দারোগা বাড়ির ভূতুড়ে ঠেকে এসেছিল সহজ। হুল্লোড়ের মাঝে সেখানে হঠাৎই হাজির হলেন ক্যাপ্টেন। যিনি নিজেকে পিশাচ সাধু বলেন। তিনি সহজকে দেখে বললেন, তুই এখানে কেন? তারপর... 
বিশদ

28th  February, 2021
দেশি ছেলেপুলে 
চন্দন চক্রবর্তী

ব্যানার্জিবাবু প্রচণ্ড উত্তেজিত! ‘তা বলে আমার ফ্ল্যাটের সামনে?’ আবাসনের পার্কে তখন প্রাতঃভ্রমণকারীরা বসে। কেউ রামদেব, কেউ বা ফড়িং-এর মতো ফড়ফড় করে হাত-পা নাড়ানাড়ি করছেন। ব্যানার্জিবাবু রীতিমতো সুদর্শন। ফর্সা রং, চোখে বিদেশি চশমার ফ্রেমে আঁটা দেশি চশমার লেন্স।  
বিশদ

28th  February, 2021
ভাষা ও ভালোবাসা 
ছন্দা বিশ্বাস

অহর্নিশকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দুপুরে খাওয়ার পর দোতলার ঘরে শুয়েছিল অহর্নিশ। শুয়ে শুয়ে একটা কমিক্সের বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছিল। অবন্তিকা দেখে এসেছে। ভেবেছে গল্প পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়বে। ছেলের মাথার হাত বুলিয়ে বলে এসেছে, ‘তাড়াতাড়ি একটু ঘুমিয়ে নাও, চারটের সময়ে কিন্তু আমাদের বেরতে হবে।  
বিশদ

21st  February, 2021
একনজরে
কাজ পাগল কাজল! শ্যামসুন্দর-নিত্যানন্দের পুণ্যভূমিতে কাজল সিনহাকে চিনতে ‘রাজনৈতিক পরিচয়’ লাগে না। কর্মেই তিনি বেশি পরিচিত। তাঁর অতিবড় নিন্দুকেরাও নাকি এমন কথা বলে থাকেন!  ...

শনিবার বিকেলে রানিগঞ্জ ব্লকের তিরাট পঞ্চায়েতে প্রচার ছিল সায়নী ঘোষের। পূর্ব কর্মসূচি মতোই তিরাট পঞ্চায়েতের সবচেয়ে বড় বাজার চেলোদে এসে তাঁর গাড়ি থামে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে ...

ষষ্ঠ দফার নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিনে আজ, সোমবার উত্তর দিনাজপুর জেলায় তিনটি সভা করছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ...

সেঞ্চুরি পাননি ঠিকই। তবে শিখর ধাওয়ানের আক্রমণাত্মক ইনিংসই পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে ৬ উইকেটে জেতাল দিল্লি  ক্যাপিটালসকে। রবিবার জয়ের লক্ষ্যে ১৯৬ রান তাড়া করতে নেমে ১০ ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

১৮৮২: বিবর্তনবাদের স্রষ্টা চার্লস ডারউইনের মৃত্যু
১৯৫৫: শিকারি ও লেখক জিম করবেটের মৃত্যু
১৯৫৭: শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির জন্ম
১৯৫৮: সাহিত্যিক অনুরূপা দেবীর মৃত্যু
১৯৮৭: রুশ টেনিস খেলোয়াড় মারিয়া শারাপোভার জন্ম  



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার ৭৩.৬৯ টাকা ৭৫.৪১ টাকা
পাউন্ড ১০১.৩৬ টাকা ১০৪.৯০ টাকা
ইউরো ৮৭.৭৬ টাকা ৯০.৯৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
18th  April, 2021
পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ৪৮,০৫০ টাকা
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম) ৪৫,৬০০ টাকা
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম) ৪৬,৩০০ টাকা
রূপার বাট (প্রতি কেজি) ৬৯,২০০ টাকা
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি) ৬৯,৩০০ টাকা
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]
18th  April, 2021

দিন পঞ্জিকা

৫ বৈশাখ ১৪২৮, সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১। সপ্তমী ৪৬/৫২ রাত্রি ১২/২। পুনর্বসু নক্ষত্র অহোরাত্র। সূর্যোদয় ৫/১৭/৭, সূর্যাস্ত ৫/৫৪/৩৫। অমৃতযোগ দিবা ৬/৫৯ মধ্যে পুনঃ ১০/২০ গতে ১২/৫২ মধ্যে। রাত্রি ৬/৪০ গতে ৮/৫৬ মধ্যে পুনঃ ১১/১২ গতে ২/১৬ মধ্যে। মাহেন্দ্রযোগ দিবা ৩/২৩ গতে ৫/৪ মধ্যে। বারবেলা ৬/৫১ গতে ৮/২৬ মধ্যে পুনঃ ২/৪৫ গতে ৪/২০ মধ্যে। কালরাত্রি ১০/১০ গতে ১১/৩৫ মধ্যে।  
৫ বৈশাখ ১৪২৮, সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১। সপ্তমী রাত্রি ৬/৫৭। পুনর্বসু নক্ষত্র রাত্রি ২/১৬। সূর্যোদয় ৫/১৭, সূর্যাস্ত ৫/৫৬। অমৃতযোগ দিবা ৬/৫৮ মধ্যে ও ১০/১৫ গতে ১২/৫১ মধ্যে এবং রাত্রি ৬/৪৬ গতে ৯/০ মধ্যে ও ১১/১১ গতে ২/৭ মধ্যে। মাহেন্দ্রযোগ দিবা ৩/২৭ গতে ৫/১০ মধ্যে। কালবেলা ৬/৫২ গতে ৮/২৭ মধ্যে ও ২/৪৬ গতে ৪/২১ মধ্যে। কালরাত্রি ১০/১২ গতে ১১/৩৭ মধ্যে।  
৬ রমজান। 

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
আইপিএল: রাজস্থান রয়্যালস-এর বিরুদ্ধে ৪৫ রানে জিতল চেন্নাই সুপার কিংস 

11:29:00 PM

আইপিএল: রাজস্থান ৯৭/৭(১৫ ওভার)

11:00:41 PM

আইপিএল: রাজস্থান ৮১/২(১০ ওভার)

10:32:46 PM

আইপিএল: রাজস্থানকে ১৮৯ রানের টার্গেট দিল চেন্নাই

09:37:20 PM

আইপিএল: চেন্নাই ১৩৩/৫ (১৬ ওভার) 

09:02:32 PM

আইপিএল: চেন্নাই ৯৮/৩ (১১ ওভার) 

08:34:07 PM