শেয়ার প্রভৃতি ক্ষেত্র থেকে অর্থাগমের সম্ভাবনা। সন্তানের কর্ম প্রাপ্তির সুখবর পেতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে জটিলতা কিছুটা ... বিশদ
গোরুমারা অভয়ারণ্যের একটি অন্যতম সাফারি হল মেদলা ওয়াচ টাওয়ার সাফারি। তবে এই সাফারির বৈশিষ্ট্য মোষের গাড়িতে চড়ে বেড়ানো। গ্রামবাংলার জনপ্রিয় মোষের গাড়ি কালের নিয়মে এখন লুপ্তপ্রায়। এখানে গেলে দেখবেন সেই স্মৃতির ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য টিকে রয়েছে রামসাইতে। গোরুমারা জাতীয় উদ্যানের পূর্ব দিকে রামসাই বন এবং গ্রাম। এখান থেকে গোরুমারা অরণ্যের অতুলনীয় বৈচিত্র্য চোখে পড়ে। বন্যপ্রাণীদের আনাগোনা বেশি থাকায় তাদের চাক্ষুষ করার সম্ভাবনাও এখানে বেশি। রামসাই বনের অন্যতম আকর্ষণ ভিউ স্পট মেদলা ওয়াচ টাওয়ার। এটি সারাবছরই খোলা। রামসাই টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে প্রায় ৫০০ মিটার মোষের গাড়িতে করে একটা জায়গায় নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আরও প্রায় ৫০০ মিটার হেঁটে পৌঁছতে হয় মেদলা ওয়াচ টাওয়ারে। সাফারি হয় চারটে শিফটে সকাল ৬:৩০, ৯:০০, আবার দুপুর ১:০০ আর বিকেল ৩:৩০। তবে ৩:৩০-র সময় যে সাফারি হয় শুধুমাত্র তখনই আদিবাসী নৃত্য দেখা যায়। সেক্ষেত্রে টিকিটের সঙ্গে ৬০ টাকা করে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে। একজন গাইড দিয়ে দেওয়া হয় তার চার্জও ধরা থাকে টিকিটের সঙ্গেই। সাফারি শুরু হবে সাড়ে তিনটে। হাতে অনেকটা সময় থাকায় ঘুরে দেখে নিলাম সুদৃশ্য রামসাই রাইনো কটেজ। টিকিট কাউন্টারের ঠিক পিছনেই আকর্ষণীয় রামসাইয়ের জনপ্রিয় প্রজাপতি পার্ক এবং প্রজনন কেন্দ্র। রামসাই রাইনোর চারটি সুদৃশ্য কটেজ অভয়ারণ্যর নামেই—গোরুমারা, জলদাপাড়া, মানস আর কাজিরাঙা। ঘড়িতে ৩:২০ বাজে দেখে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে গেলাম কালিপুর ইকো ভিলেজের সামনে। ওখান থেকেই মোষের গাড়ি চড়তে হবে। এখানে ৮টি মোষের গাড়ি। প্রতি গাড়িতে ১০ জন। চিরহরিৎ বৃক্ষের ছায়াঘেরা পথের দু’পাশে নানা দৃশ্য দেখতে দেখতে মোষের গাড়িতে রওনা দিলাম। ডানদিকে মোহময়ী চা-বাগানের পাশে দেখা যায় ড্রেনের মতো কিছু জায়গা। গাইড জানালেন এখানেই স্ত্রী লেপার্ড বাচ্চা দেওয়ার সময় আশ্রয় নেয়। কারণ তাদের জগতে পুরুষ চিতাবাঘ সদ্যোজাতদের খেয়ে নেয়। অনেক সময় গ্রাম থেকে ছাগল, বাছুরও চলে আসে দলচ্যুত হয়ে। লেপার্ডরা তাদের খুব সহজেই ধরে খেতে পারে। বাঁ-দিকে বনবিভাগের রিজার্ভ ফরেস্ট। এখানে বাকি চারটি ওয়াচ টাওয়ার চাপরামারি, চন্দ্রচূড়, যাত্রাপ্রসাদ আর চুকচুকি। পথে দেখতে পাই ইলেকট্রিক তারের ফেন্সিং। গাইড বললেন, ওগুলো হাতির পাল আটকানোর জন্য। সন্ধ্যা ৬টার পর বিদ্যুৎ দেওয়া হয় যাতে তারা জঙ্গল থেকে আসতে না পারে। কারেন্ট শুধু ঝটকা দেয়, মেরে ফেলার জন্য নয়। তবে দাঁতালরা অনেক সময় বড় বড় গাছ তারের ওপর ফেলে তার ছিঁড়ে গ্রামে প্রবেশ করে। ভাবলাম সত্যিই তো এ যে তাদেরই এলাকা। গাইড ভাই মাঝে মাঝে ফাঁকা জায়গা দেখিয়ে বলছিলেন এখানে আগে ধান চাষ হতো। হাতিদের উৎপাতে বন্ধ। তাই এখন মূর্তি নদী আর জলঢাকার মাঝখানে কৃত্রিমভাবে গ্রাসল্যান্ড তৈরি করা হয়েছে যাতে শীতকালে জঙ্গলে খাওয়ার অভাব দেখা দিলে তারা সেখানে গিয়ে খেতে পারে। মেদলা ক্যাম্পে গিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে কিছুটা হেঁটে মেদলা ওয়াচ টাওয়ারে উঠে দেখতে পাই মূর্তি নদীর তীরে হাতি বাইসনের জল খাওয়া। নানা পাখির উড়ে বেড়ানোও নজর কাড়ে। জানতে পারি এখানে ২৬৬ প্রজাতির পাখি আর ৪৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে ময়ূর, বন্য শুয়োর। প্রচুর মাটি তুলে এক জায়গায় জড়ো করে বলে স্থানীয়রা বন্য শুয়োরদের নাম দিয়েছেন ‘ট্রাক্টর’। এখানে তিন নদীর সহাবস্থান— মূর্তি, জলঢাকা ও ডায়না। গোধূলি রঙের অলসবেলায় রবি অস্তাচলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতেই ফেরার পথ ধরি। দিনান্তের নিভে আসা আলোর শেষ রোশনাই দেখা যায় উন্মুক্ত সবুজ প্রান্তরে।
কীভাবে যাবেন: শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে এনজেপি বা আলিপুরদুয়ারগামী অনেক ট্রেন আছে।
কোথায় থাকবেন: থাকার জায়গা বনদপ্তরের রামসাই রাইনো কটেজ আর কালিপুর ইকো ভিলেজ। এখানে থাকলে হাতি সাফারির অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।