প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
হাতে গোনা পাঁচ দিন। সপ্তমীর বাদ্যি বাজতে এটুকুই সময় হাতে। বাড়িতে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবদের আনাগোনাও শুরু হল বলে। এমন সময়ে ঘর সাজানোর মতো কাজটি খানিক উদ্বেগে রাখে বইকি! অতিথির কাছে গৃহস্থের রুচির পরিচয় হয়ে ওঠে ঘরের সাজ। উৎসবের মরশুমে যার সঙ্গে যোগ হয় বাড়তি যত্ন। একটা সময় ছিল যখন বাড়ির গৃহিণীরা মহালয়ার দিন থেকেই ঘরদোর ঝাড়ামোছা শুরু করতেন। তবে এখন ব্যস্ততা বেড়েছে। অফিসকাছারি সামলে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে খানিক দেরিও হয়। তাই কম সময়ের মধ্যে ঘর সাজিয়ে ফেলার পদ্ধতি খুব কাজে লাগে। আজ রইল তেমনই কিছু টিপস।
সব ঘরের ক্ষেত্রেই মনে রাখুন কিছু বিশেষ দিক। সেগুলি মেনে ঘর সাজালে কাজ অনেক সহজ হয়ে উঠবে।
• প্রথমেই ঘরের বাতিল ও বাড়তি জিনিসকে এক জায়গায় করুন। এসব জিনিস ঘরের অনেকটা জায়গা দখল করে থাকে।
• ঘর সাজানোর একটা বড় কাজ সারা হয়ে যায় পরদা পরিবর্তন করে। ঘরের রং হালকা হলে একটু রঙিন বা গাঢ় রঙের পরদা লাগিয়ে দিন। আজকাল খেস ও পাটের পরদাও ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ঘরের রং গাঢ় হলে এই ধরনের পরদা ব্যবহার করতে পারেন। সাদা ও হাল্কা রঙের পরদাও সেক্ষেত্রে ভালো দেখাবে।
• ঘর রং করানোর মতো খরচ অনেকেই পুজোর মুখে করতে চান না। সেক্ষেত্রে ওয়ালপেপার ব্যবহার করতে পারেন। বাজারচলতি অনেক প্যাটার্নের ওয়ালপেপার পাওয়া যায়। সেগুলো কিনে দেওয়ালে রাখতে পারেন।
• দেওয়াল ভরে রেখে দিন ফোটোফ্রেম। তাতে নিসর্গ, প্রকৃতি বা বাড়ির খুদে সদস্যের নানা অভিব্যক্তির মুহূর্ত ধরে রাখতে পারেন।
• কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট রাখুন নানা ঘর জুড়ে। এতে ঘরের রূপও খোলতাই হবে। অক্সিজেনের জোগানও বাড়বে। রকমারি রঙিন টব ও স্ট্যান্ড দিয়ে ঘর সাজিয়ে ফেলুন।
• ঘরের মেঝেয় কোনও খুঁত থাকলে তা সারাইয়ের মতো সময় এখন নেই। তার চেয়ে মেঝে ঢেকে দিন সুন্দর নজররাড়া কার্পেট ও পাপোশ দিয়ে। ঘরের আকার অনেকটা বড় হলে কার্পেট পেতে তার উপর একটি ছোট ডিভান রাখতে পারেন। পুজোর সময় পারিবারিক আড্ডা জমতে পারে এখানেই।
• ডিভান না থাকলে একটা মোটা ও আরামদায়ক তোশকের উপর গাঢ় একরঙা চাদর বিছিয়ে দিন। তাতে নানা নকশা ও রঙের কুশন রাখুন। ছোট একটি পাশবালিশও রাখতে পারেন।
• ঘরের আলমারি ও ওয়ার্ডরোবের উপর যেন ধুলোর স্তর না থাকে, খেয়াল রাখুন। টেবিলে সাজিয়ে তুলুন নানা টি পট, শো পিস ও ফুলের সাজে।
বসার ঘরের ভোলবদল
পুজোর সময় যাবতীয় আড্ডার মধ্যমণি ড্রয়িং রুম। তাই তার সাজে কোনও ফাঁক চলবে না। বরং সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে এই ঘরটিতেই। বসার ঘর মানেই সেখানে বেশিরভাগ সময় থাকে একটি সোফা, একটি টি টেবিল। দেওয়ালের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সোফা কভার ও টি টেবিলের কভার নির্বাচন করুন। সুতির উপর কাঁথাকাজ বা সুতোর কাজের নকশাওয়ালা কভার পছন্দ করতে পারেন। স্যাটিনের কভারও ভালো লাগবে। তবে সহজে ধোয়া ও পরিষ্কার করা যাবে এমন কভারই কিনবেন। টি টেবিলের উপর একটা ছোট বাটিতে জল রেখে জুঁই বা গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে রাখতে পারেন।
বসার ঘরের দেওয়ালেও থাক নতুনত্বের ছোঁয়া। দেওয়ালের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ঘরে যোগ করুন বাহারি আলো। মোমবাতির শৌখিন স্ট্যান্ডও রাখতে পারেন। এমন আলো বেছে নিন যা প্রতিফলিত হয়ে সারা ঘরকে আলোকিত করবে। দেওয়ালের গায়ে ওয়ালপেপার দিলে তার নকশা যেন রুচিশীল হয়। টি টেবিলের সঙ্গে স্টুল পেলে বা মোড়া সেট দিলে জায়গাটা ভরাট লাগবে। আড্ডার সময় এই অতিরিক্ত বসার জায়গাগুলো কাজেও আসবে।
সোফা রাখার ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, ঘরের সিংহভাগ দখল করে নিচ্ছে এই আসবাব। সেক্ষেত্রে টু-সিটার সোফা কিনুন। তাতে জায়গাও বাঁচবে আবার ছিমছাম দেখাবে ঘরটি।
খুদের ঘরের রূপ
ছোট সদস্যটির জন্য যে ঘর বরাদ্দ, তাতে যেন তার শৈশব ধরা পড়ে। এই ঘরে খুব দামি রং করাবেন না। বরং অধিক স্বাস্থ্যকর রং করান। এর দেওয়াল কিন্তু এদের শিল্পমনের প্রকাশ ধরে রাখার আধার। তাই সেসবে বাধা দেবেন না। রং, পেন-পেনসিলের দাগ সহজে মুছে দেওয়া যায় এমন পেইন্ট করান এই ঘরে। এই ঘরের দেওয়াল-পরদা সবই খুব উজ্জ্বল রাখুন। দেওয়ালটি ওয়ালপেপারে মুড়ে দিতে চাইলে বেছে নিন বাড়ির ছোটটির প্রিয় কোনও কার্টুন বা নকশাকে। এই ঘরের আলোও যেন উজ্জ্বল হয়। খুব বেশি আসবাব দিয়ে এই ঘর ভরে দেবেন না। অতিথি আসার আগে সন্তানের স্টাডি টেবিলটি পরিষ্কার করা বা তার ঘরের ওয়ার্ডরোবের উপরটি একটু গুছিয়ে দিলেই এই ঘর সুন্দর হয়ে উঠবে।
বয়স্কদের ঘরের বদল
এই ঘরের রূপ বদলে ফেলার জন্য শুধুই পরদা ও বালিশ-বিছানার চাদরের দিকে খেয়াল রাখুন। এই ঘরের আসবাব খুব বেশি এদিক ওদিক না করাই ভালো। এতে বয়স্ক মানুষদের অভ্যাসগত সমস্যা হতে পারে। মেঝেও যেন পিছল না হয়। তাই মার্বেল বা পার্টেক্স না ব্যবহার করে সাধারণ লাল মেঝে বা মোজাইক মেঝে রাখুন। এই ঘরের দেওয়ালের রং হাল্কা শেডের রাখুন। দেওয়ালে বাড়ির বয়স্ক সদস্যের মনের মতো ছবি ফোটোফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখতে পারেন। এই ঘরের কোনও আসবাবের উচ্চাতাই যেন বেশি উঁচু না হয়। আসলে এঘরের বাসিন্দাদের সুখ-সুবিধার দিকে খেয়াল রেখেই এই ঘরের ভোলবদল করতে হবে। ঘরে বড় কোনও দেরাজ থাকলে, তার উপরে সুতোর কাজ করা বা হাকোবা নকশার কাপড় পাততে পারেন। তার উপর রাখুন ফুলদানি। এই ঘরে অডিও বার সেট করতে পারেন। অবসরে বয়স্ক সদস্যরা গান শুনে সময় কাটাতে পারবেন। এই ঘরে একটি ভালো টিভি সেট থাকাও বাঞ্ছনীয়। তাঁদের ইচ্ছে মতো অনুষ্ঠান তাঁরা দেখে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এই ঘরের আলো উজ্জ্বল রাখুন কিন্তু তা যেন চোখে না লাগে। এলইডি আলো ব্যবহার করলে ঘরে উজ্জ্বলতা বাড়বে।
শোওয়ার ঘরের সাজ
এই ঘর বড় নিভৃতির। নিজস্ব। তাই এই ঘরে আত্মীয়স্বজনের আনাগোনা হলেও তাকে সাজিয়ে তুলুন নিজ মনমতো। দেওয়ালের অনেকটা অংশ ফাঁকা লাগলে বা একটু রং চটে গিয়েছে মনে হলে আপাতত রং করানোর মতো বড় খরচে গিয়ে কাজ নেই। তার চেয়ে ওই অংশে বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা কোনও ছবি ওই অংশে টাঙাতে পারেন। একটু অন্যভাবে সাজাতে চাইলে দেওয়াল জুড়ে ম্যুরাল আঁকিয়ে নিতে পারেন। দারুণ একটি ম্যুরাল ঘরের ভোল বদলে দেবে। সাধারণত শোওয়ার ঘরের দেওয়ালের রং হাল্কা হয়। এঘরের পরদাও হাল্কা শেডের রাখুন। তবে ফুলকারি বা জ্যামিতিক নকশার পরদা হলে ছকভাঙা এক রূপ তৈরি করবে। এই ঘরে হ্যাঙ্গিং গাছ লাগাতে পারেন কিংবা ঘরের কোণ বরাবর লতানে কোনও গাছ রাখুন। এতে সবুজের সমাহার বাড়বে ও দেখতেও ভারি মনোরম হবে। এই ঘরের কোণ বরাবর বাহারি তাকও তৈরি করতে পারেন। বই বা ছোটখাট শো পিস বা ঘর সাজানোর নানা দ্রব্য দিয়ে সাজিয়ে তুলুন সেই তাকগুলি।
খুব কম খরচে বা নামমাত্র খরচে ঘরের রূপ বদলে ফেলার সহজ সমাধান এবার হাতের মুঠোয়। রইল বাকি আপনার রুচি ও হাতের ছোঁয়া। যা ঘরকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তুলবে।