প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
পুজোর কেনাকাটা শুরু হয়েছে নানা বিপণিতে। এই পুজোর বিকিকিনির উপরেই সারা বছরের পোশাকের স্টক অনেকটা নির্ভর করে। হালফ্যাশনের নানা পোশাকের চাহিদা যেমন এবার রয়েছে। তেমনই পুরনো ও সাবেক নকশার শাড়িরও স্বতন্ত্র আবেদন তৈরি হয়েছে এবছর পুজোয়। তবে পুজো এবার মাসের শুরুর দিকেই। তাই হাতে গোনা কয়েকদিনের মধ্যে কেনাকাটা সারতে বেরিয়ে অনেকেই ওয়ান স্টপ শপের খোঁজ করছেন। শারদীয়ার বাজারে রইল কলকাতা ও জেলার তেমন কিছু বিপণির খোঁজ ও দরদাম।
প্রিয়গোপাল বিষয়ী
কলকাতার বুকে কেনাকাটার অন্যতম নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান প্রিয়গোপাল বিষয়ী। প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী এই বিপণি এবছরও শাড়ির এক বিপুল সম্ভার নিয়ে প্রস্তুত হয়েছে পুজোপার্বণের জন্য। বড়বাজার, গড়িয়াহাট, কাঁচড়াপাড়া, বর্ধমান, কৃষ্ণনগর, তমলুক, বারাসত, মেদিনীপুর টাউন ও কাঁথিতে এদের শোরুম রয়েছে। সারা ভারতের সব প্রদেশের বিভিন্ন শাড়ি এখানে পাবেন। এবছর সিল্কের মধ্যে সাউথ সিল্কের চাহিদা একটু বেশি বলে জানালেন গড়িয়াহাট শাখার ম্যানেজার সৌমিত্র দাস। এখানে খাঁটি সাউথ সিল্ক পাবেন ৪৫০০-৫০০০ টাকা থেকে। মিক্সড সাউথ সিল্ক পাবেন ১৫০০-২০০০ টাকায়। পুজোয় প্রতি বছরই তসরের আলাদা ক্রেতা থাকেন। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে মুগা তসরের চাহিদা বেশি। দাম পড়বে ৪৫০০-৫০০০ টাকা। মিক্সড মুগা তসর পাবেন ১৬০০-১৭০০ টাকায়। ডোলাবেরি তসরও এই রেঞ্জে পাবেন। তসরের উপর প্রিন্ট, বিষ্ণুপুরী কাতানও এবছর ভালো চলছে। মটকা সিল্ক, খাদি হ্যান্ডলুম ও মাশরু কাতানও এবছর ভালো চলছে। খাদি হ্যান্ডলুমের দাম শুরু ৩০০০ টাকা থেকে। মাশরু কাতান পাবেন বাজেট অন্তত ৩০০০-৩৫০০ টাকা হলেই। তবে এবার এখানে সবচেয়ে চাহিদা রয়েছে বিশ্ববাংলা (কলাক্ষেত্র) নকশার। এবার এর নকশায় বদল এসেছে। দাম শুরু ৫০০০ টাকা থেকে। বালুচরীর দাম শুরু ৮০০০-৯০০০ টাকা থেকে। স্বর্ণচরী চাইলে বাজেট আর একটু বাড়িয়ে ৯ হাজার টাকা করুন। এবার পুজোয় প্লেন বডির বেনারসির চাহিদা রয়েছে। এগুলো তিনরকম পাবেন। একটি একটু ব্লেন্ডেড বা মিক্সড ফেব্রিকে। তার দাম ৩০০০ টাকা থেকে শুরু। এর পরের ভাগে পাবেন ৮০০০-১২,০০০ টাকা রেঞ্জের প্লেন বডি বেনারসি। তার পরের ভাগে খাঁটি কাতানের উপর মিলবে, যার দাম শুরু ১৬,০০০ টাকা থেকে। বিয়ের জন্য খাঁটি বেনারসি মিলবে ৮০০০ টাকা থেকেই। এবছর টিস্যু বেনারসি, টিস্যু সিল্কেরও খুব চাহিদা আছে। এগুলোর মিক্সড ফ্যাব্রিকের দাম পড়বে ৩৫০০ টাকার কাছে। খাঁটি ফ্যাব্রিক হলে দাম পড়বে ৮০০০-৯০০০ টাকা। দক্ষিণের জনপ্রিয় শাড়ি কাঞ্জিভরম মিক্সড চাইলে বাজেট রাখুন ১৮০০ টাকা অন্তত। এই শাড়িই খাঁটি ফ্যাব্রিকে পাবেন ৫০০০ টাকা রেঞ্জে। এবার পকেটসই দামে খুব ভালো শাড়ি চাইলে তাঁতও বাছতে পারেন। ৭০০ টাকা থেকে দাম শুরু। তবে সৌমিত্রবাবু জানালেন, ‘পকেটফ্রেন্ডলি দামে শাড়ি খুঁজলে এবছরের সেরা বাছাই রাজশাহী ঢাকাই। মাত্র ৯৯০ টাকায় এই শাড়ি পুজোর উপহার হিসেবে খুব জনপ্রিয় হয়েছে। শাড়ি ছাড়াও মেয়েদের রেডিমেড চুড়িদার, কুর্তি ও পুরুষদের ডিজাইনার পাঞ্জাবির চাহিদা রয়েছে এবছর।
শ্রীনিকেতন
বস্ত্রপ্রতিষ্ঠান হিসেবে শ্রীনিকতেন গোটা রাজ্য জুড়েই পরিচিত ও জনপ্রিয় নাম। সোদপুর, হাইল্যান্ড পার্ক, গড়িয়াহাট, বারাসত, কাঁচড়াপাড়া, শ্রীরামপুর, বহরমপুর, চুঁচুড়া ও আসানসোলে এদের শোরুম আছে। কর্ণধার নিত্যানন্দ আইচ ও সংস্থার ম্যানেজার রতনলাল সাহা জানালেন, হালকা ওজনের শাড়ি এই পুজোয় বেশি চলছে। সারা ভারতের নানা প্রদেশের শাড়ি এখানে পাবেন। এবার পুজোয় নতুন ক্রেজ বিষ্ণুপুরী ইক্কত, টেরাকোটা প্রিন্ট, কলাক্ষেত্র ও কাতান সিল্ক। যাদের রেঞ্জ ৪০০০-৬৫০০ টাকা। কটনের মধ্যে মধ্যপ্রদেশের ভেজিটেবিল ডাইয়ের উপর বাগ প্রিন্ট খুব চলছে। জয়পুরী ট্র্যাডিশনাল প্রিন্টের উপর ডাবু, বাগরু পাবেন। বাটিকে এসেছে রঙ্গোলি নকশা। এগুলো সবই ৮০০-২২০০ টাকা রেঞ্জে পাবেন। চান্দেরি মাহেশ্বরী পাবেন ২০০০-৬৫০০ টাকা রেঞ্জে। মাদুরাই সিল্কের কালেকশন পাবেন ৪০০০-৬৫০০ টাকার রেঞ্জে। এবছর গাদোয়াল কটন ও গাদোয়াল সিল্কের চাহিদা খুব বেশি। রেঞ্জ ৩০০০-৩০,০০০ টাকা। খাঁটি অসম ও মুগা সিল্ক পাবেন ১০,০০০-৪০,০০০০ টাকার মধ্যে নানা ভ্যারাইটিতে। ছত্তিশগড়ের অহিংসা সিল্ক এবার নতুন এসেছে। এই শাড়ির ক্ষেত্রে রেশম পোকাটিকে মারা হয় না। দাম শুরু ৭০০০ টাকা থেকে। এছাড়া ঘিচা সিল্ক ও তসরের কালেকশনও এখানে দেখার মতো। ভাগলপুর, চাপা, সোনামুখী সবজায়গার খাঁটি তসর এখানে পাবেন। রেঞ্জ ঘোরাফেরা করবে ৩০০০-১৫,০০০ টাকার মধ্যে। নানা প্রকারের রেশম ও সুতির ঢাকাই জামদানি মিলবে। খাঁটি মসলিন ও রাজশাহী সিল্কও এখানে পাবেন। রাজশাহী সিল্কের দাম শুরু ৩০০০ টাকা থেকে। খাঁটি মসলিনের দাম ঘোরাফেরা করবে ৩০০০-৬৫,০০০ টাকা পর্যন্ত নানা রেঞ্জে। এখানে সোনার জরির কাজে ধর্মাভরম শাড়িও পাবেন। শাড়ির দাম শুরু ৩০,০০০ টাকা থেকে। প্রায় ১ লক্ষ টাকা রেঞ্জ পর্যন্ত এই শাড়ি পাবেন। লিনেন ও অর্গ্যাঞ্জা সিল্ক পাবেন ১০০০-১২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০,০০০ টাকা রেঞ্জ পর্যন্ত। লেহেঙ্গা ও চুড়িদার পিসও পাবেন এখানে। ১০০০-৩৫,০০০ টাকা দামের লেহেঙ্গা পাবেন এখানে। এছাড়াও ছোট মেয়ে ও মহিলাদের সবরকমের ওয়েস্টার্ন, ইন্দো-ওয়েস্টার্ন ও ভারতীয় পোশাকের সম্ভার পাবেন। শাড়ি ছাড়াও ওয়ান স্টপ ফ্যামিলি স্টোর হিসেবে শ্রীনিকেতন-এ পাবেন নবজাতক থেকে আবালবৃদ্ধবনিতা সকলের পোশাক, কসমেটিক্স ও অ্যাক্সেসরিজ। মেন’স ওয়্যারের বিশ্বের সেরা ২২টি ব্র্যান্ডের সব ধরনের পোশাক এখানে মিলবে। জিন্সের ভ্যারাইটিও দেখার মতো। লেডিজ ওয়্যারেও পাবেন ব্র্যান্ডেড পোশাক।
মনমোহিনী
বহরমপুরের বুকে মনমোহিনী পোশাকের জগতে অন্যতম জনপ্রিয় নাম। শুধু বহরমপুরই নয়, বোলপুর, রঘুনাথগঞ্জ ও মালদহেও এর আউটলেট রয়েছে। শাড়ি থেকে শুরু করে লেডিজ, জেন্টস ও কিডস ওয়্যারের নানা ভ্যারাইটি এখানে পাবেন। মনমোহিনী টেক্সটাইলের ডিরেক্টর প্রবীণ গুলগুলিয়া জানালেন, দুর্গাপুজো পর্যন্ত এখানে অন্তত ২০০০ টাকার উপরে কেনাকাটা করলে রয়েছে লাকি ড্র-এ অংশ নেওয়ার সুযোগ। প্রতি সপ্তাহে সোমবার লাকি ড্র-র মাধ্যমে প্রতি আউটলেটে বেছে নেওয়া হবে ভাগ্যবানদের। লটারির নাম বেছে নেবেন গ্রাহকরাই। মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইতাদি জেতার সুযোগ রয়েছে এই ড্র-এ। সবশেষে এই চারটি আউটলেট মিলিয়ে একটি মেগা লাকি ড্র হবে। তার পুরস্কার একটি গাড়ি। এই লটারি হবে কালীপুজোর সময়। এখানে পুজোর কালেকশনে শাড়ির রেঞ্জ ঘোরাফেরা করবে ২৯০ টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। ১০০০-৩০০০ টাকা বাজেটে পাবেন ফ্যান্সি মাশরু কাতান, পচমপল্লি সহ অন্যান্য ফ্যান্সি কালেকশন। বেনারসিও মিলবে এখানে। ব্লেন্ডেড বেনারসি পাবেন ২০০০ টাকা থেকে। খাঁটি বেনারসি পাবেন ১০,০০০ টাকা বাজেট হলেই। মুর্শিদাবাদ সিল্ক, তসর, মাদুরাই সিল্ক, বিষ্ণুপুরী সিল্ক এগুলো পাবেন ৩-৪ হাজার টাকা বাজেট হলেই। এছাড়া বাজেট আর একটু বাড়লে ১০-১৫ হাজার টাকায় স্বর্ণচরী, বালুচরী, ইক্কত, পাট্টু, কাঞ্জিভরম ইত্যাদি পাবেন। মেন’স ওয়্যার ও কিডস ওয়্যারে সব ধরনের পোশাক পাবেন। সব ধরনের ব্র্যান্ডেড পোশাক এখানে ন্যায্য দামে পাবেন।
সুনীতা
বহরমপুর খাগড়ায় যেসব নামী বস্ত্রপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার অন্যতম ‘সুনীতা’। পুজোর মরশুমে শাড়ি ও অন্যান্য পোশাকের সম্ভারে সেজে উঠেছে এই বিপণি। এখানে পাবেন বিচিত্রা, অর্গ্যাঞ্জা, জিমিচু, মুর্শিদাবাদ সিল্ক, কাঞ্জিভরম ইত্যাদি সব ধরনের শাড়ি। মুর্শিদাবাদ সিল্কের জন্য এই প্রতিষ্ঠান খুবই জনপ্রিয়। এই ধরনের শাড়ির দাম শুরু ২২০০-২৩০০ টাকা। কাঞ্জিভরমের দাম শুরু ৫০০০ টাকা থেকে। স্বর্ণচরী ও বালুচরীর দাম শুরু ৮০০০ টাকা থেকে। খাঁটি কাতান মিলবে ৯-১০ হাজার টাকা থেকে। এছাড়া আর্নি সিল্ক, বিষ্ণুপুর সিল্ক, গরদ সবই মিলবে এখানে। বিষ্ণুপুর সিল্ক পাবেন ৩৫০০ টাকা থেকে। তাঁত ও ফ্যান্সি শাড়ি শুরু হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে। ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত রেঞ্জে নানা ধরনের শাড়ি এখানে পাবেন। ফ্যান্সি বেনারসি শুরু ২০০০ টাকা থেকে। খাঁটি বেনারসি পাবেন ১৬-১৭ হাজার টাকা থেকে। শাড়ি ছাড়াও এখানে পাবেন নানা নকশার কটন ও সিল্কের স্টোল ও ওড়না। দাম শুরু ২০০ টাকা থেকে। সিল্কের স্টোল কিনতে হলে বাজেট আর একটু বাড়াতে হবে। পুজোর মরশুমে প্রতিদিনই দোকান খোলা। নিজস্ব পার্কিংও আছে।
সুনীল ক্লথ স্টোর্স
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা রোডে অবস্থিত এই বস্ত্রবিপণি জেলার অন্যতম নামী প্রতিষ্ঠান। শাড়ি ছাড়াও নারী-পুরুষ ও শিশুদের সবরকমের পোশাক এখানে পাওয়া যায়। এবছর নানা শাড়ির মধ্যে মাশরু সিল্ক, জিমিচু সিল্ক, বালুচরী, অর্গ্যাঞ্জা, পশমিনা, মাহেশ্বরী সিল্ক, খাঁটি কাঞ্চিপুরম, ইক্কত, আরনি, মঙ্গলগিরি ইত্যাদি নানা ধরনের শাড়ি এখানে পাবেন। মাশরু সিল্ক পাবেন ৩০০০-৫০০০ টাকার মধ্যে। বালুচরী এখানে পাবেন ৮০০০ টাকা বাজেট হলেই। ইক্কত সিল্কের রেঞ্জ ঘোরাফেরা করবে ৯০০০-২০,০০০ টাকার মধ্যে। কুবেরা পাট্টু পাবেন ১৫,০০০-২৫,০০০ টাকা ধামের মধ্যে। মাঝারি বাজেটের শাড়ির মধ্যে আর্নি সিল্ক, মঙ্গলগিরি পাবেন। দাম পড়বে ৩-৫ হাজার টাকা। মাদুরাই সিল্ক মিলবে ৩৮০০-৫৫০০ টাকার মধ্যে। খাঁটি বিষ্ণুপুরী সিল্ক পাবেন ৩৫০০-৬০০০ টাকায়। খাঁটি কাতান খুঁজলেও আসতে পারেন এখানে। খাঁটি বেনারসি পাবেন ৭০০০ টাকা বাজেট হলেই। শাড়ি ছাড়াও লেহেঙ্গার এক বিপুল সম্ভার পাবেন এখানে। ২০০০-১৫,০০০ টাকা রেঞ্জে নানা ধরনের লেহেঙ্গা মিলবে। এছাড়াও বিচিত্রা, চিকনকারি ইত্যাদি নকশা ও কাজের উপর চুড়িদার ও গাউনও পাওয়া যাবে। নেট ও তসরের গাউনের চাহিদাও বেশি। পাকিস্তানি সেট, ওয়েস্টার্ন সেট, কুর্তি, মেয়েদের জিন্স, কো-অর্ড সেট সবই মিলবে এখানে। পুরুষদেরও নানারকম ব্র্যান্ডেড শার্ট, প্যান্ট, জিন্স ও ট্রাউজার পাবেন। ছোট মেয়েদের জন্য জন্য হট প্যান্ট, কেপ্রি, পালাজো, কো-অর্ড, স্কার্ট, সারারা, ওয়েস্টার্ন, পাঠানি সেট সহ নানা হালফ্যাশনের পোশাক পাবেন। ছেলেদের জন্যও নানা ধরনের জিন্স, প্যান্ট, বাবাস্যুট, জ্যাকেট, পাজামা-পাঞ্জাবি মিলবে।