কর্ম, বিদ্যা ক্ষেত্রে উন্নতির যোগ। আয় ব্যয় ক্ষেত্রে সমতার অভাব। স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও আঘাতযোগ থাকায় ... বিশদ
দূর্বা রায়, স্নাতকোত্তর ছাত্রী
শুভ অনুষ্ঠানে মিষ্টিমুখের প্রচলন আজ থেকে নয়, বরং সেই আদিকাল থেকেই আমরা দেখে আসছি। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা ঐতিহ্যের অন্ধবাহক হওয়ার বদলে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে শিখছি। আজকাল দেখা যায় প্রায় প্রতিটি মানুষের পছন্দের খাদ্যতালিকায় মুখরোচক নোনতা খাবার থাকে সবচেয়ে উপরে। রকমারি নোনতা খাবারের ধরনও আগের তুলনায় বাড়ছে। ফলে যে দাদা বা ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় এই অনুষ্ঠান, সে যদি পান্তুয়ার বদলে পিৎজা কিংবা প্যানফ্রায়েড মোমো খেতে বেশি ভালোবাসে, তাহলে দিদি বা বোনেদের কাছে স্বাভাবিকভাবেই মিষ্টির চেয়ে সেগুলোই হয়ে উঠছে অগ্রগণ্য ও জনপ্রিয়।
সুপ্রিয়া সেন, শিক্ষিকা
আগে ভাইফোঁটায় মিষ্টির দোকানে লম্বা লাইন পড়ত। প্লেটে রকমারি মিষ্টি সাজিয়ে ফোঁটা দিত বোনেরা। এখন সময় পাল্টেছে, ভাইরা মিষ্টির স্বাদ ভুলে নোনতা খাবারই পছন্দ করে বেশি। মাটন বিরিয়ানি, রেজালা, চিংড়ি, এমন সব খাবারের আবদার করে বোন বা দিদির কাছে। তাই বোনেরা নিয়ম রক্ষার্থে প্লেটে দুটো মিষ্টি সাজিয়ে ফোঁটা দেয়। আর সযত্নে স্বহস্তে নানা রকমের সুস্বাদু নোনতার আয়োজন করে। তাই মিষ্টি ছেড়ে নোনতার কদর এত বেশি।
অনুশ্রী কুণ্ডু, শিক্ষিকা
এখন ঘরে ঘরে ডায়াবেটিক পেশেন্ট। তাই সকলের কাছে মিষ্টির চেয়ে নোনতাই বেশি উপাদেয়। শুধু উৎসবের সময় নয়। বছরের যে কোনও সময় টুকটাক নোনতা খাবার চলতেই থাকে। সত্যি কথা বলতে কি এখন মিষ্টিকে তিন গোল দিয়ে নোনতাই জয়ী। এছাড়া বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষ্যে হঠাৎ হঠাৎ মিষ্টির
দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। সেখানে নোনতা জাতীয় খাবারের দামের সেভাবে হেরফের হয় না। বাড়িতে মিষ্টি বানানোর হ্যাপাও অনেক। কিন্তু হঠাৎ করে বাড়িতে অতিথি চলে এলে খুব সহজেই বাড়িতে থাকা সামান্য উপকরণ দিয়ে নোনতা নানা ধরনের খাবার তৈরি করে অতিথিকে পরিবেশন করা সম্ভব। তাই এখন মিষ্টি নয় নোনতারই জয়জয়কার।
পল্লবী ঘোষ, ছাত্রী
বাঙালির উৎসব মানেই মিষ্টি! তাই ভাইফোঁটার ক্ষেত্রে মিষ্টির প্রচলনের কথা আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। তবে সময় পাল্টেছে, ধরন বদলেছে। এখন ভার্চুয়াল ভাইফোঁটার বেশ কদর! ভাইফোঁটা ভাই ও বোনের হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে আসা এক আবেগ। সেটা কি নোনতা-মিষ্টির স্বাদ দিয়ে বিচার করা যায়? রুচি অনুযায়ী খাওয়াটা ব্যক্তিস্বাধীনতা, আর মনের মিষ্টতাটাই আসল। আমার ক্ষেত্রে ভাইফোঁটায় নোনতা খাবারই গুরুত্বপূর্ণ বেশি। তাই আমি এই বক্তব্যের পক্ষে কলম ধরেছি। বাস্তবে আমার ভাই বোনদের সম্পর্ক খুবই মিষ্টি।
বিপক্ষে
কোয়েল সরকার, ছাত্রী
ভাইফোঁটা শব্দটা বললেই চোখের সামনে থালাভর্তি নানারকম মিষ্টির ছবি ভেসে ওঠে। দুপুরের পাত পেড়ে খাবারের শেষে একবাটি মিষ্টি দই বা লুচির পাশে উঁকি দেওয়া নরম পান্তুয়া। এখনকার প্রজন্মের মধ্যে নোনতা-নোনতা একটা হিড়িক উঠেছে বেশ কয়েক বছর। মিষ্টির অতিরিক্ত ক্যালোরি বাদ দিতে গিয়ে স্বাস্থ্য সচেতন নবতরুণের দল নোনতায় মন দিয়েছে। নোনতা আর মিষ্টির যুগলবন্দিও চলছে। ট্রেন্ড যাই হোক না কেন বাঙালির পুজোপার্বণ, উৎসব সবকিছুতেই মিষ্টি জড়িয়ে আছে। মিষ্টি ছাড়া ভাইফোঁটায় যমের দুয়ারে কাঁটা দেওয়া যে বিফল!
প্রেরণা হাটুয়া, ছাত্রী
মিষ্টি ছাড়া বাঙালির কোনও অনুষ্ঠানই ঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। আর ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার মতো ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক অনুষ্ঠান মানেই মিষ্টিমুখ আবশ্যক। ভাই-দাদাদের ফোঁটা দেওয়ার পাশাপাশি থালায় নানারকমের মিষ্টি ও সঙ্গে মা-ঠাকুরমার হাতের তৈরি সিমাই বা পায়েসের বাটি সাজিয়ে দেওয়ার রীতি তো বহুকালের। এছাড়া ভাইফোঁটা উপলক্ষ্যে মিষ্টির দোকানে ক্রেতাদের লম্বা লাইন, বছরের পর বছর স্পেশাল ট্র্যাডিশনাল মিষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা বাজারে সুগার-ফ্রি মিষ্টির চাহিদা, এসব কিছু থেকেই অনুমান করা যায় যে, নোনতার চাহিদা মানুষের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেড়ে থাকলেও ভাইফোঁটায় মিষ্টির জনপ্রিয়তাকে তা কখনওই টেক্কা দিতে পারবে না।
চিরঞ্জিত প্রামাণিক, সরকারি চাকরিজীবী
ভ্রাতৃদ্বিতীয়া একটা মিষ্টিমধুর উৎসব। বোনেরা ভাইফোঁটার দিনে কিছু সামাজিক রীতিনীতির মাধ্যমে শুদ্ধাচারে সর্বাধিক প্রচলিত পঙক্তির মাধ্যমে চন্দনের ফোঁটা তিনবার দেয় এবং প্রাণভরে মঙ্গলকামনা করে। এই শুভ দিনটিতে মিষ্টিমুখ করানোর জন্য একটা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে তারা, তাতে অনেকের নোনতা খাবার প্রিয় হলেও একটা দিনের জন্য মিষ্টি গ্ৰহণ করা উচিত। নোনতা খাবার তো রইলই; একটা দিনের জন্য যৎসামান্য মিষ্টান্নভোজন করে উৎসবকে আনন্দদায়ক করে তুললে এমন কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। এতে ভাই-বোনের অকৃত্রিম ভালোবাসার বন্ধন অনন্তকাল অটুট থাকবে।
অয়ন সান্যাল, ছাত্র (স্নাতকোত্তর)
চারপাশে মধুমেহর বিপুল জনপ্রিয়তায় মিষ্টি খানিক ফিকে হয়ে এলেও ভাইফোঁটায় প্লেট ভর্তি এই সনাতনী স্বাদ না থাকলে উৎসবের তৃপ্তি কিঞ্চিৎ অধরাই থেকে যায়। এছাড়াও মিষ্টি সকলের মননে চিরমঙ্গলময় প্রতীক হিসেবে যে স্থান দখল করে আছে, সেখান থেকে তাকে স্থানচ্যুত করা রীতিমতো দণ্ডনীয় অপরাধ! নিমকি বা ভুজিয়া এই স্বস্তির প্রতিনিধিত্ব করতে অক্ষম। তাই তো ভাইফোঁটা কিংবা যে কোনও অনুষ্ঠানে মিষ্টির দোকানে ভিড় দেখার মতো। আপ্যায়নে জল-মিষ্টি হোক বা শেষপাতের মিষ্টিমুখ, পরিতৃপ্তিতে তার জুড়ি মেলা ভার। সেখানে নোনতার জায়গা কোথায়? প্রিয় সেটাই, যা না থাকলে কোনও কিছুই ঠিক সম্পূর্ণ হয় না। তাই পাতে যতই নোনতা থাক, মিষ্টি না থাকলে তার স্বাদও ফিকে হয়ে যায়।